ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে বাড়ি ছেড়ে চায়ের দোকান
অসম লড়ছে ভবানীর দল
হাফ প্যান্ট পরে মাঠে ফুটবল খেললে বোনের বিয়ে হবে না। ওই ভয়ে দাদা ও দিদিরা বাধা দিয়েছেন। কিন্তু এক রোখা মেয়ে থামতে চায়নি। শুধুমাত্র ফুটবলের নেশায় একদিন বাড়ি ছাড়েন কালচিনির আদিবাসী কন্যা ভবানী মুন্ডা। চা বাগান ও বনবস্তি ঘুরে কয়েক বছর আগে গড়ে তেলেন ‘ডুয়ার্স ইলেভেন’ নামে আস্ত একটি মহিলা ফুটবল দল। দাপিয়ে খেলতে শুরু করেন বিভিন্ন মাঠে। কিন্তু ভবানীর দলের বরাতে আজও জোটেনি সরকারি সাহায্য। নিরুপায় হয়ে চা দোকান খুলে পেটের ভাত জোটাতে হচ্ছে তাঁকে। শুধু কী তাই! অনুশীলনের পরে দলের মেয়েদের টিফিনের ব্যবস্থা দোকান থেকে করতে হচ্ছে।
মন্ত্রী থেকে প্রশাসনের কর্তা প্রত্যেকে অবশ্য দাবি করেছেন, ভবানী মুন্ডা অথবা ডুয়ার্সের ওই মহিলা ফুটবল দলের কথা তাঁদের কেউ জানেন না। যেমন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কেউ আমাকে ওঁদের কথা বলেনি। ফুটবল দলটি সমস্যার কথা জানালে নিশ্চই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “মহিলা ফুটবল দলের সমস্যার কথা জানি না। ওঁরা আবেদন করলে নিশ্চই সাহায্যের চেষ্টা করা হবে।” আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোহর তিরকি বলেন, “ফুটবল দলের মেয়েরা মাঝেমধ্যে চাঁদা নিতে আসে। কিন্তু ওঁদের ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় সাংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে কিছু দিতে পারছি না।” কী বলছেন ভবানী? তাঁর কথায়, “ব্লকের কর্তা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব প্রত্যেকের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছি। আর কোথায় যাব!”
এই সেই চায়ের দোকান।—নিজস্ব চিত্র।
কালচিনি গুদাম লাইনে দাদাদের সংসারে থাকতেন ভবানী। বাবা সূর্য মুন্ডা আটিয়াবাড়ি চা বাগানের মুন্সি ছিলেন। তিনি যখন মারা যান তখন ভবানীর বয়স মাত্র চার বছর। কয়েক বছর পরে মারা যান মা মণি দেবী। এর পরে চার দাদার কথা মতো চলতে হয় তাঁকে। তখন ক্লাস ফাইভে পড়তেন কালচিনি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমিতে। টিভি-র পর্দায় ফুটবল খেলা দেখে ঝোঁক চাপে। দাদা বাগানের কর্মী মধুকে ইচ্ছের কথা জানান। হাফ প্যান্ট পরে বোন মাঠে নামবে! স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি অন্য তিন দাদাও। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন ফুটবল ছেড়ে অন্য কিছু করতে। কেন! ভবানী বলেন, “দাদারা বলেন হাফ প্যান্ট পড়ে মাঠে নামলে বিয়ে হবে না। প্রতিবেশীরা কটু কথা বলবে।” এক রোখা মেয়ে মানতে চায়নি তা। ২০০৪ সালে বাড়ি ছেড়ে কালচিনির গুদাম লাইনে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। চা দোকান খুলে শুরু হয় অন্য লড়াই। একদিকে পেটের ভাত জোটানো। অন্যদিকে ফুল দল তৈরির কাজ। তিনি জানান, প্রশিক্ষণ দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। নিজেদের চেষ্টাতে দল গড়ে তোলেন। বাইরে খেলতে গিয়ে অন্য মেয়েদের উত্‌সাহ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যায়। ২০১১ সালে ওই দলের শকুন্তলা ওরাঁও উত্তর লতাবাড়ি স্কুল থেকে রাজ্যের হয়ে জাতীয় স্তরে আন্দামান নিকোবরে যায় খেলতে। পাশাপাশি প্রত্যেকে পড়াশোনাও করছে। ভবানী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ পড়ছেন।
ভবানীর চায়ের দোকান ডুয়ার্স ইলেভেনের প্যাভেলিয়ন নামে পরিচিত। দোকানে বসে পরিকল্পনা করেন পুনম নাগ, শকুন্তলা ওরাঁও, সীমা নাগ, সীমা ওরাঁও। সকালে অনুশীলন সেরে একচিলতে চালা ঘরের এক কোনে রুটি তৈরি করেন নিজেরাই। বঞ্চুকামারি গ্রামের বাসিন্দা জয়গাঁ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শকুন্তলা ওরাঁও বলেন, “প্রত্যকের টিফিনের রুটির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ভাবানীর। চায়ের দোকান থেকে যে রোজগার হয় সেটার কিছুটা দিয়ে ওই আয়োজন করা হয়।” পুনম নাগ জানান, তাঁদের দেখে মহিলা ফুটবল দল তৈরি হচ্ছে মালবাজার, গ্লাসমোড় ও রায়ডাক এলাকায়। গুদাম লাইনে পুনমের ঘর ভর্তি খেলার ট্রফি। বিভিন্ন এলাকায় খেলার ডাক পায় ওঁরা। কিন্তু টাকা মেলে না। ভবানী বলেন, “একটি বুটের দাম ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। ভাল বলের দাম ১ হাজার টাকা। এটা জোগার করতে পারি না। খেলে টাকা পেয়ে ওই সমস্যা থাকত না।” মেয়েদের উত্‌সাহ দেখে এগিয়ে এসেছেন আরএসপি-র জেলাপরিষদ সদস্য রামকুমার লামা। তিনি বলেন, “ক্লাব রেজিষ্ট্রেশনের চেষ্টা চলছে।” মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সম্পাদক শেখর ঘোষ জানান, ওরা যোগাযোগ করলে বুট ও জার্সির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.