অফিসে ঢোকার মুখে বসে রয়েছেন দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। কোনওভাবেই যাতে দালাল’রা অফিসের ভিতরে ঢুকতে না পারেন সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে তাঁদের। সন্দেহ হলেই কাগজপত্র পরীক্ষা করে তবেই দিতে হবে অফিসে যাওয়ার অনুমতি। এত সবের পরেও হাল ফেরেনি পরিবহণ দফতরের শিলিগুড়ি মহকুমা অফিসের। অভিযোগ, গোটা অফিসেই চলছে দালালদের দৌরাত্ম্য। নতুন লাইন্সেস করানো থেকে নবিকরণ করানো সবেতেই ধরতে হবে অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দালালকে। লাইন্সেসের জন্য ফি দিতে হয় ৫০০ টাকা। নবিকরণের জন্য দিতে হয় ২০০ টাকা।
সম্প্রতি শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক রচনা ভগত পরিবহণ দফতরের অফিস পরিদর্শনে যান। সে সময় তিনি সেখানে ৫ জনকে একাধিক ব্যক্তির লাইন্সেস করানো সহ একাধিক কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনও সদুত্তর পাননি মহকুমাশাসক। এক মহিলা ল’ক্লার্কও সেখানে ছিল। তাঁকেও সতর্ক করে দেন মহকুমাশাসক। পরে বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান শিলিগুড়ি মহকুমা ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন। দীর্ঘদিন ধরে ল’ক্লাক:রা ওই কাজ করলেও আগে কেন সতর্ক করা হয়নি সে প্রশ্ন তোলা হয়। মহকুমাশাসক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যা হওয়ার হয়েছে। এখন থেকে কোনও বেআইনি কাজ বরদাস্ত করবেন না তিনি।
বুধবার মহকুমাশাসক বলেন, “বেআইনি কাজ করার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারতাম। প্রথমদিন বলে তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এটা যাতে ফের না হয় সে ব্যপারে বলেছি। আমরা চাইছি সাধারণ মানুষ পরিবহণ দফতরে নিজেদের কাজ নিজেরাই করুক। কোথাও যাতে অসুবিধে না হয় সেদিকে নজরদারি রাখা হয়েছে।” তিনি জানান, শুধু দালালদের সতর্ক করে দিয়েই প্রশাসন কাজ শেষ করবে না। নতুন লাইন্সেস করানো বা নবিকরণ করানোর কাজের কি পদ্ধতি রয়েছে তা সবাইকে জানানোর জন্য অফিসের সামনে বোর্ড টাঙানো হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অফিসের সামনে ওই বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “অনেকেই কি পদ্ধতিতে লাইন্সেস করাতে হয় সেটা জানানে না। তাঁরা অন্যের দ্বারস্থ হন। আমরা ওই নিয়ম জানানোর জন্য বার্ড টাঙিয়ে দেব। অফিসের কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাজে জন্য রয়েছেন তাহলে সেখানে বাইরের লোক থাকবে কেন?”
শুধু, পরিবহণ দফতরের অফিসেই নয়, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের অফিসের সামনেও একাধিক ভাবে জমি মিউটেশন করানোর পদ্ধতি জানানো হবে। অভিযোগ, সেখানেও দালালদের দৌরাত্ম রয়েছে। জমি মিউটেশন করানোর নামে তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে টাকা তুলছে। অভিযোগ উঠেছে, পরিবহণ দফতরে ও ভূমি রাজস্ব দফতরের একশ্রেণির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে দালালদের। তাঁদের মদতেই দালালরা দুটি অফিসেই সক্রিয় রয়েছে। কেউ দালালদের সাহায্য না নিয়ে অফিসে কাজের জন্য ঢুকলে তাঁকে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ। মহকুমাশাসক বলেন, “কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে কেউ আমাকে অভিযোগ জানাননি। তা দেখা হবে।”
পরিবহণ দফতরের শিলিগুড়ি মহকুমা আধিকারিক রাজেন সুনদাস অবশ্য দাবি করেছেন, অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বহুদিন ধরেই নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে। কিন্তু তার পরেও দালাল’রা কিভাবে অফিসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তা নিয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, “সবাই যাতে সঠিক পরিষেবা পায় সেটা দেখা হচ্ছে।” |