সন্ধ্যা নামতে দোকানের ঝাপ বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে হাট বাজার। পরপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পরে কুমারগ্রামের পাগলহাট, ঘোড়ামারা, চ্যাংমারি, বারবিসা এলাকার ছবি এ ভাবে পাল্টে গিয়েছে। রাতে বিশেষ প্রয়োজনেও কেউ বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়ামারা বাজার এলাকায় অসমের জঙ্গিরা অপহরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে জখম করার ঘটনার পরে ভয় আরও জাঁকিয়ে বসেছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলেছেন স্থানীয় আরএসপি বিধায়ক দশরথ তিরকি। তিনি বলেন, “গত ছয় মাসে চারটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবার জঙ্গিরা সহজে অসমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ওই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কুমারগ্রামের অসম সংলগ্ন এলাকায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।” একই দাবি তুলেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। দলের কুমারগ্রাম জোনাল কমিটির সদস্য পিন্টু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “দলের তরফে অসম সংলগ্ন চ্যাংমারি, বিত্তিবাড়ি, বালাপাড়া এলাকায় আধা সামারিক বাহিনীর ক্যাম্প বসাবার দাবি জানানো হয়েছে।” তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার সাংগাঠনিক জেলা কমিটির সদস্য প্রেমানন্দ দাস বলেন, “আমরা আতঙ্কিত। কুমারগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আটোসাটো করা একান্ত জরুরি। ওই বিষয়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অসমের জঙ্গিরা বারবার একই কায়দায় বালাপাড়া হয়ে ঘোলানি ও সংকোশ নদী পার হয়ে এলাকায় ঢুকে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। অথচ জঙ্গি তত্পরতা বন্ধের জন্য কয়েকবার বালাপাড়া এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প তৈরির দাবি জানানো হলেও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পরে শুধু রাজনৈতিক মহল নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলেও ফের ওই দাবি উঠেছে। কুমারগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বালাপাড়ায় পুলিশ ক্যাম্প বসানোর পাশাপাশি বারবিশায় পৃথক থানা গড়ে তোলা না হলে জঙ্গি তত্পরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। অসম সংলগ্ন এলাকার হাট বাজার সবই বন্ধ হয়ে যাবে। বারবিশা ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক সাহা বলেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পরপর জঙ্গি হামলার পরে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। দ্রুত অসম সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি জানানো হবে।” বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পরে ঘোড়ামারা বাসিন্দারা ভয়ে কথা বলতেও অস্বীকার করছেন। অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এলাকার ব্যবসা বন্ধ হওয়ার মুখে। বিকেলের পরে কেউ বাইরে থাকতে সাহস পাচ্ছে না। আতঙ্কে দিন কাটছে। পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে কেমন করে রেজগার করবেন সেটাই এখন কেউ বুঝতে পারছেন না। আলিপুরদুয়ারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া অবশ্য বলেন,“জঙ্গি তত্পরতা বন্ধের জন্য অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অসম ও ভুটান সীমান্ত এলাকার তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। অসমে যাতায়াতের প্রতিটি রাস্তায় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।” |