|
|
|
|
স্কুলে সংস্কার কাজ শুরু করে সমস্যায় কর্তৃপক্ষ |
মঞ্জুর হওয়ার চার মাস পরেও মিলল না বরাদ্দ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
খাতায়-কলমে টাকা মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। তা জানানো হয়েছে স্কুলগুলিকেও। কোনও স্কুল সংস্কার কাজ শুরু করে দিয়েছে আবার কোনও স্কুল দরপত্র আহ্বান করেছে। কিন্তু টাকা চাইতে গিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত। কারণ, খাতায় কলমে অর্থ মঞ্জুর হলেও কিন্তু বাস্তবে কোনও টাকা মেলেনি! এমনই ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু স্কুলের হাল খুবই খারাপ। কোথাও ভাঙাচোরা হস্টেল। তার মধ্যেই কোনওরকমে রয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। কোনও স্কুলে আবার ক্লাসরুমের অভাব, আবার কোথাও প্রয়োজন ক্লাসরুমের সংস্কার। কোথাও নেই দেওয়াল। এর মধ্যে বেশিরভাগ স্কুলেই আবার তফসিলি উপজাতি ছাত্রের সংখ্যা বেশি। ফলে বেশিরভাগ স্কুলেই রয়েছে উপজাতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেল। স্কুল কর্তৃপক্ষ বারবার সমস্যার কথা জানিয়ে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরকে চিঠি পাঠিয়েছে। দফতরের পরামর্শ মতোই আনুমানিক ব্যয় জানিয়েছিল স্কুলগুলি। সেই মতো জেলা প্রশাসনও অ্যাক্ট ২৭৫ (১) এ রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে অর্থ দাবি করেছিল। সব মিলিয়ে ২৬ কোটি ২০ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার প্রকল্প তৈরি করেছিল জেলা। রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর চিঠি দিয়ে জানায় যে, ওই টাকার মধ্যে ৯ কোটি ৯ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়েছে। যা দিয়ে ৪১টি স্কুলের চাহিদা মতো কাজ করা যাবে। এর তালিকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। সেই নির্দেশিকা দেখার পরেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন প্রথম ধাপে ৮টি স্কুলকে জানিয়ে দেয় তাঁদের জন্য টাকা এসে গিয়েছে। তাঁরা কাজ শুরু করে দিতে পারে। দ্বিতীয় দফায় আরও দশটি স্কুলকে তা জানানো হয়। তার মধ্যে রয়েছে ডেবরার আলোককেন্দ্র হাইস্কুলও। এখানে রয়েছে আশ্রম হস্টেলও। হস্টেলের পাঁচিল সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রথম ধাপে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা মঞ্জুর করা হল বলেও জানায়। যা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে দেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল মণ্ডল বলেন, “প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। বারবার দফতরে খোঁজ নিচ্ছি। কিন্তু ওঁরা জানাচ্ছেন মঞ্জুর হলেও টাকা এখনও এসে পৌঁছয়নি।”
শালবনি ব্লকের ভীমপুর সাঁওতাল হাইস্কুলের হস্টেলের বেহাল দশা। ঘরের চারদিকে ফাটল ধরেছে। বৃষ্টিতে জল পড়ে। তারই মধ্যে কষ্টে ছাত্রছাত্রীদের থাকতে হয়। এখানেও হস্টেল সংস্কারের জন্য ২৩ লক্ষ ৮ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়। প্রথম ধাপে ১১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলেও জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর জানায়। সেই নির্দেশিকা দেখার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ দরপত্রও আহ্বান করে ফেলেছেন। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হস্টেলের অবস্থা খুবই খারাপ। টাকা মঞ্জুর হয়েছে শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। দরপত্র আহ্বানের কাজও শেষ। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারিনি।”
হঠাৎ কেন এমন হল?
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারাও হতবাক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নির্দেশে অর্থ মঞ্জুর করেই সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেটাই রীতি। এই কারণেই স্কুলগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁরা তৈরি থাকেন এবং দ্রুত কাজ শেষ করা যায়। গত বছর অক্টোবর মাসে অর্থ মঞ্জুরের চিঠিও এসেছে। কিন্তু মঞ্জুর হওয়ার চার মাস পরেও কেন টাকা এল না তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে প্রশাসন। দুশ্চিন্তায় স্কুলগুলিও। |
|
|
|
|
|