কমেছে আমনের ফলন, গড়িমসি ধান কেনাতেও
ম বৃষ্টির জেরে আমন ধানের ফলন কমল পশ্চিম মেদিনীপুরে। এ দিকে, সরকারি ধান কেনায় চলছে গড়িমসি। উৎপাদন আর চাহিদার এই সঙ্কটে দিশেহারা চাষিরা।
পরিস্থিতি দেখে সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “এমনিতেই ধান উৎপাদন কম হয়েছে। তার উপর কৃষকেরা ধানের প্রকৃত মূল্য পাচ্ছেন না। চলছে অভাবী বিক্রি। কৃষকদের জীবনে এটাই পরিবর্তনের সুফল!” জবাবে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি অবশ্য দাবি করেন, “সর্বত্র ধান কেনা চলছে। আগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। এখন সে সুযোগ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিপিএম অপপ্রচার করছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে গত বছর ২০ লক্ষ ৪ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন ধান হয়েছিল, চলতি বছর তা কমে হয়েছে ১৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন। এই পরিমাণ ধান থেকে চাল সংগ্রহ হবে ১১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। অথচ, গত বছর ১৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছিল। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কম বৃষ্টির জেরে কিছু জমিতে চাষ সম্ভব হয়নি। তার জেরে এই পরিস্থিতি। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “প্রায় ২০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই কমেছে চাষ।”
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সালে জেলায় বৃষ্টি হয়েছিল ১ হাজার ৭১৭.৯ মিলিমিটার। ২০১২ সালে তা কমে হয় ১ হাজার ২২৪.৯ মিলিমিটার। এরই প্রভাব পড়ে কৃষিকাজে। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, “যেখানে সেচের জল মিলেছে, সেখানে চাষ ভাল হয়েছে এবং হেক্টর পিছু ধানের উৎপাদন বেড়েছে।” মেদিনীপুর সদরে হেক্টর পিছু গড়ে ৪৪.৮৭, ঘাটালে ৪২.২৩, খড়্গপুরে ৩৯.৮৯ এবং ঝাড়গ্রাম মহকুমায় গড়ে ৩৮.৯২ কুইন্ট্যাল ধান হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, চাষের খরচ বাড়ছে। সার, কীটনাশক থেকে শ্রমিক মজুরিবেড়েছে সব কিছুই। এই অবস্থায় বাজারে ধানের দাম ঠিক মতো না পেলে তাঁদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
পরিস্থিতি দেখে দ্রুত ধান কেনার তোড়জোড় শুরু হয়। আসেন খাদ্যমন্ত্রী। সিদ্ধান্ত হয়, এফসিআই সব মিলিয়ে (লেভি এবং সিএমআর) ৯৬ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে। জেলায় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন চাল।
এমনিতেই জেলায় যে ধান উৎপাদন হয়, তার নামমাত্র কেনে সরকার। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় যে ধান উৎপাদন হয়েছে, তা থেকে চাল সংগ্রহ হবে ১১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। সেখানে সরকারি উদ্যোগে কেনার কথা মাত্র ২ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। তাতেও গতি না থাকায় চলছে অভাবী বিক্রি।
কাছাকাছি ধান কেনার শিবির না হওয়ায় খোলা বাজারে মোটামুটি কুইন্ট্যাল পিছু ৮৫০ থেকে ১০৫০ টাকায় ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের ক্ষোভ, “অভাবী বিক্রি রুখতে প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করে ধান কেনার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু, কিছু হয়নি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়ের অবশ্য দাবি, “জেলার প্রতিটি ব্লকেই ধান কেনার কাজ চলছে।”
তবে, ধান কেনার কাজে যে গতি নেই, তা স্পষ্ট পরিসংখ্যান থেকে।
এ বার জেলায় সব মিলিয়ে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কথা রয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
জেলা পরিষদের এক আধিকারিকের কথায়, “সরকারি উদ্যোগে সমস্ত ধান কেনা সম্ভব নয়, এটা সকলের জানা। তবে, সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় গতি থাকলে খোলাবাজারে ধানের দাম নির্দিষ্ট থাকে। দ্রুত তা পড়ে যায় না। ফলে কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন। আর গতি না থাকলে বাজারে ধানের দাম দ্রুত পড়ে। এ বার তাই-ই হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন অবশ্য ‘দ্রুত দাম পড়া’র দাবি মানতে নারাজ।

আমন চাষের ইতিবৃত্ত
পরিস্থিতি ২০১২-১৩ ২০১১-১২
চাষ হয়েছে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে ৫ লক্ষ ৫২৫ হেক্টর জমিতে
গড় ফলন ৪১.১৭ কুইন্ট্যাল প্রতি হেক্টর ৪০.০৪ কুইন্ট্যাল প্রতি হেক্টর
উৎপাদন ১৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন ২০ লক্ষ ৪ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন
চাল সংগ্রহ হবে ১১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন ১৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন

চাল কেনার কথা
এফসিআই— ৯৬ হাজার মেট্রিক টন
রাজ্য সরকার— ৪০ হাজার মেট্রিক টন
ইসিএসসি— ৭৫ হাজার মেট্রিক টন
বেনফেড— ২৫ হাজার মেট্রিক টন
কনফেড— ৫ হাজার মেট্রিক টন
এনসিসিএফ— ১২ হাজার মেট্রিক টন
মোট— ২ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন
এখনও সংগ্রহ— ৫৪ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.