সামি আহমেদ তাঁর কাছে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী নন, বরং মোটিভেশন।
রোজ ঘুম থেকে উঠে মনে মনে ঠিক করেন, আজ আরও ভাল বোলিং করতে হবে। যাতে সামিকে ছাপিয়ে যাওয়া যায়।
রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের জন্য যে ভারতীয় দল ঘোষণা হল, তাতে সামি আহমেদ নেই, তিনি আছেন। তিনি মানে, অশোক দিন্দা।
কিন্তু বৈঠকের প্রাক্-লগ্নে দিন্দাকে কতটা চাপে রেখেছিলেন সামি? বাংলায় তাঁর দোসর? ভারতীয় ক্রিকেটমহলে তো হাওয়া ছিলদিন্দা নন, টিমে ঢুকতে পারেন সামি। ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে যাঁর আবির্ভাব ধুমকেতুসম।
মাঠে ক্লাবের ম্যাচ চলছে। কালীঘাট জার্সি পরে ভিতরে বসে তিনি। প্রশ্ন শুনে দিন্দা কিছুটা থতমত। একটু সামলে উত্তর এল, “মিডিয়ার ভাবনাচিন্তা এগুলো। আমি অন্তত এ সব নিয়ে ভাবি না।”
তা হলে বাংলার দুই পেসারের মধ্যে সে ভাবে কোনও যুদ্ধ নেই? বাংলা থেকে পেসার বলতে তো লোকে এত দিন দিন্দাকেই বুঝত। জায়গাটা নড়বড়ে লাগছে না?
“আরে না, না। আমি এত দিন ধরে খেলছি। নতুন ছেলে তো আসতেই পারে। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, সামি ভাল খেলছে। আমার জায়গায় আজ ও সুযোগ পেতেই পারত। তাতে আমার কোনও অসুবিধা হত না,” বলছিলেন দিন্দা। আলটপকা কোনও মন্তব্যে নেই, কিন্তু নিজের প্রতিজ্ঞার কথা বলতে বাধা কোথায়? “সামি আর আমি বাংলায় অনেক দিন ধরে খেলছি। ওর সঙ্গে বল করতে ভাল লাগে। আজ আমার সঙ্গে সামিও টিমে থাকলে ভাল লাগত। কিন্তু আমাকে দেখতে হবে, যাতে ওর চেয়ে ভাল করি। উঁচু পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে এসেছি যখন, আমাকে তো এই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। নইলে এই পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার কোনও মানে হয় না।” |
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে টিমে থেকেও টেস্ট অভিষেক ঘটেনি। কিন্তু এ বারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাহির খান নেই, উমেশ যাদব নেই। ইশান্ত শর্মার সঙ্গী পেসার হিসেবে দিন্দার অভিষেক ঘটেও যেতে পারে। “আমি তো বলব ভালই হল। জাহিররা না থাকায় এত বড় একটা সুযোগ পেলাম। সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। ছোট থেকে দেখছি, ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হলে কী হয়। অস্ট্রেলিয়া টাফ টিম। আমাকেও টাফ হতে হবে।”
কী রকম?
তিনটে জিনিস আপাতত ঠিক করে রেখেছেন বাংলার পেসার।
এক, জাহির-ডোনাল্ডকে ফোন করা। জাহিরের সঙ্গে রিভার্স সুইং নিয়ে কথা বলতে চান।
দুই, নিজের জেদকে কাজে লাগানো। বললেন, “উল্টো দিকে ভাল ব্যাটসম্যান দেখলে এমনিই বাড়তি একটা জেদ কাজ করে। যেটা ফাস্ট বোলারের জেদ।”
তিন, নিজের গতি-বাউন্স ঠিকঠাক রাখতে কঠিন পরিশ্রম।
“ওদের দেশে গেলে অস্ট্রেলিয়া আমাদের পেস আর বাউন্সে ঝাঁঝরা করে দেয়। এই দুটো জিনিস কিন্তু আমারও আছে। সঙ্গে আছে সুইং। অস্ট্রেলিয়া যদি গতির ফর্মুলায় আমাদের বধ করতে চায়, তা হলে আমি অন্তত ওই একই ফর্মুলায় চলব,” বলে দিলেন দিন্দা।
আর কোনও ব্যক্তিগত লক্ষ্য? এ বার ঝটিতি উত্তর আসে, “মাইকেল ক্লার্কের উইকেট। যদি টেস্টে নামি, শেষ পর্যন্ত ওকে আউট করার চেষ্টা করে যাব। আমাদের শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে দুর্দান্ত খেলেছিল ও।” একটু থেমে ফের বললেন, “দেখুন, আমাকে কেউ পরপর সুযোগ দেবে না। আমি যেমন জানতাম যে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টিমে থাকব, তেমনই এটাও জানি সুযোগ পেয়েও পারফর্ম না করলে আমাকে কেউ রাখবে না। সুযোগ এক বারই আসে। যা করার ওতেই করতে হবে।” |