গৌতম গম্ভীর টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ল বলে যাঁরা হাহাকার শুরু করেছেন বা মাথা চাপড়াচ্ছেন, তাঁদের আশ্বাস দিতে পারি, চিন্তা করবেন না, গোতি আবার দলে ফিরবে। এই ঝাঁকুনিটা ওর এখন দরকার ছিল।
তথ্য বলছে, দিল্লির এই ওপেনার শেষ টেস্ট সেঞ্চুরিটা করেছে ২০১০-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তার ঠিক আগেই ওর পরপর কয়েকটা সেঞ্চুরি ছিল। মনে পড়ছে, কানপুরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৬৭ (নভেম্বর, ২০০৯), ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও একই রানের ইনিংস (এপ্রিল, ২০০৯), ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোহালিতে ১৭৯-এর (ডিসেম্বর, ২০০৮) ইনিংসগুলো। এর মধ্যে আরও কতগুলো সেঞ্চুরি ছিল গোতির। তখন গৌতম গম্ভীরের মাঠে নামা মানেই একটা বড় রান প্রায় নিশ্চিত। যেটা গত কয়েক মাসে ওর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ইদানীং ফোকাসটাও হারিয়ে ফেলছিল। এই অবস্থায় ওকে দলে রাখা মানে গৌতম আর দল, দু’পক্ষেরই ক্ষতি। তাই আপাতত ওকে দলের বাইরে রাখাই ভাল।
এই সিদ্ধান্তটা মনে হয়, আগেই নিয়ে ফেলেছিল নির্বাচকরা। সে জন্যই ওকে প্রস্তুতি ম্যাচের দলগুলোতেও রাখা হয়নি। এ বার বরং ওকে ভারত ‘এ’ দলের ক্যাপ্টেন করে দিয়ে ভালই করেছে সন্দীপ পাটিলরা। চাপমুক্ত পরিবেশে স্বাভাবিক পারফরম্যান্স করে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে ও। গৌতমের মতো একজন ক্রিকেটার এই ফিরে আসার লড়াইয়ে জিতবেই জিতবে। আমার মনে হয়, এই ব্রেকটাই ওকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
শিখর ধওয়ান এই মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫৫-র গড়ে ৮৩৩ রান করেছে। দলীপ ট্রফির কোর্য়াটার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে পরপর সেঞ্চুরি। বয়স মাত্র ২৭। |
এই সময়ে এ রকম একটা ছেলেকে বসিয়ে রাখার কোনও মানে আছে? তার ওপর সহবাগের সঙ্গে শিখরের জুটি মানে লেফট-রাইট কম্বিনেশন, যার ফলে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়া যাবে। ওপেনাররাই ড্রেসিংরুমকে উইকেট সম্পর্কে আসল ধারণাটা দিয়ে থাকে। ওপেনাররা উইকেটে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা মানে দলের কাছে বার্তা যাওয়া, বাইশ গজ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। দলের বাকি ব্যাটসম্যানরাও আত্মবিশ্বাস পায়। কিন্তু শুরুতেই ওপেনাররা সমস্যায় পড়ে গেলে তো ড্রেসিংরুমে একটা আতঙ্ক ছড়ায়। গত কয়েক মাস ধরে ভারতের ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছিল। এ বার আশা করি হবে না।
তবে সহবাগ কী করবে, তা বলা খুব মুশকিল। ওর দিনে ওর চেয়ে ভাল ওপেনার কেউ নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই মেজাজে থাকলে শিখরকে নিয়ে ওর সফল হওয়াই উচিত। তবে বীরুকে মাথায় রাখতে হবে, দলটা প্রথম দুটো টেস্টের জন্য। এই দুই ম্যাচে ফ্লপ করলে কিন্তু ওর কপালেও গৌতমের মতো ‘শাস্তি’ জুটতে পারে। কারণ, অভিজ্ঞ ও ফর্মে থাকা ওয়াসিম জাফর দরজায় কড়া নাড়ছে।
সত্যি বলতে কী, অনেক দিন পর নির্বাচকদের কাছ থেকে একটা মনের মতো দল পাওয়া গেল। রায়নাকে বাদ দিয়ে মিডল অর্ডার ব্যাটিং লাইন আপও বেশ ভাল দাঁড়িয়েছে। রায়নার শর্ট বলের প্রতি দুর্বলতা আর ধৈর্যের অভাব হয়তো ওর বাদ যাওয়ার বড় কারণ। তা ছাড়া রায়নাকে নিলে ১১-য় হয়তো রাখতে হত তৃতীয় স্পিনার হিসাবে। এখন রায়না নেই। ছ’ নম্বরে সে ক্ষেত্রে রবীন্দ্র জাডেজা ওর চেয়ে ভাল।
হরভজনের দলে ফেরাটা একটা ইতিবাচক ব্যাপার অবশ্যই। অস্ট্রেলিয়ার যেহেতু পাঁচ-ছ’জন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রয়েছে, তাই দলে দু’জন অফস্পিনার রাখতে অসুবিধা নেই। ধোনি তো এই ব্যাপারটা বেশ ভালই বোঝে। অস্ট্রেলিয়ানদের দেখলে ভাজ্জি আবার একটু বেশিই চার্জড হয়ে যায়, এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। দিন্দার দলে থাকাটাও দারুণ খবর। তবে চেন্নাইয়ের টার্নিং উইকেটে (এ রকম হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল) স্পিনার অলরাউন্ডার হিসেবে জাডেজাকে দলে রাখলে দিন্দার খেলার সম্ভাবনা কম। তবে ইশান্ত তো খুবই চোটপ্রবণ। কখন ওর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, কেউ বলতে পারে না। |