প্রয়োজনীয় শ্রমিক না মেলায় আরামবাগ ব্লকের গৌরহাটি-১ পঞ্চায়েতের সাঁপড়াজোল গ্রামে ব্যাহত হচ্ছে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই এই সমস্যা হচ্ছে বলে দিন কয়েক আগে বিডিও প্রণব সাঙ্গুইয়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিকের ‘জব কার্ড’ রয়েছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বার্ষিক পরিকল্পনায় সম্প্রতি দিন দশেকের ব্যবধানে প্রথমে গ্রামের খিড়কি পুকুর এবং তার পরে মসজিদতলা পুকুর সংস্কারের অনুমোদন মেলে। সেই মতো প্রথমে খিড়কি পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয় দিন ছয়েক আগে। সব শ্রমিককে কাজে লাগানো হলে দেড় মাসের মধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মসজিদতলা পুকুরটি আগে সংস্কারের দাবি তুলেছেন সেখানকার তৃণমূল নেতা শেখ সাইফুল ইসলাম। তাঁর নিষেধেই ওই এলাকার অধিকাংশ শ্রমিক খিড়কি পুকুর সংস্কারের কাজে আসছেন না বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় খিড়কি পুকুর সংস্কারের কাজে দেরি হলে মাছ চাষ এবং সেচে সমস্যার আশঙ্কা করছেন অনেক গ্রামবাসী।
পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পার্থ নন্দী বলেন, “মসজিদতলা পুকুরটি আগে সংস্কারের দাবি উঠেছে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। দৈনিক গড়ে মাত্র ৩৫-৪০ জন শ্রমিক খিড়কি পুকুর সংস্কারের কাজ করছেন। এই গতিতে কাজ হলে প্রায় চার মাসের উপর সময় লাগবে। তত দিনে বর্ষা এসে যাবে। মসজিদতলার পুকুরটির কাজ আদৌ শুরু করা যাবে না।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারি নিয়ম মেনে খিড়কি পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজে গতি নেই বললেই চলে। ওই দলের তরফেই অন্য পুকুর আগে সংস্কারের দাবি উঠেছে।” শেখ সাইফুল ইসলাম-সহ জনা দশেক তৃণমূল কর্মী গত মঙ্গলবারই বিডিও-র কাছে তাঁদের পছন্দের পুকুরটি হয় আগে সংস্কার করা বা দু’টি পুকুরই এক সঙ্গে সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান।
বিডিও জানিয়েছেন, আগে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রকল্প আগে রূপায়িত হবে। শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হলে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খিড়কি পুকুর সংস্কারের পক্ষে থাকা তৃণমূল নেতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে সন্টু বলেন, “খিড়কি পুকুর সংস্কারের আগে মসজিদতলার দলীয় নেতাকর্মীদের আলোচনার জন্য ডেকেছিলাম। ওঁরা কোনও সহযোগিতাই করেনি। এখন তাঁদের পাড়ার পুকুরটি আগে করার দাবিতে কর্মসূচি রূপায়ণে বাধা দিচ্ছেন। এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে।” অন্য দিকে, মসজিদপাড়ার তৃণমূল নেতা শেখ সাইফুল ইসলামের দাবি, তাঁদের কোনও আলোচনায় ডাকা হয়নি। তিনি বলেন, “খিড়কি পুকুর গ্রামের মানুষ কম ব্যবহার করেন। মসজিদতলার পুকুরটির উপরে ২০০টি পরিবার নির্ভরশীল। সিরাজুল ইসলাম নিজের প্রভাব খাটিয়ে খিড়কি পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন। তাই আমাদের পাড়ার শ্রমিকেরা কাজে যাচ্ছেন না।” গোটা বিষয়টি নিয়ে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “সব শ্রমিককে এক সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে। একটি পুকুরের কাজ দ্রুত শেষ করে অন্য পুকুরটির কাজ শুরু করা হোক। দলের এই কোন্দল বরদাস্ত করা যাবে না।” |