অর্ধদগ্ধ অবস্থায় এক হাতুড়ে চিকিৎসকের মৃতদেহ রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার করল পুলিশ।
রবিবার সকালে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় হুগলির খানাকুলের মমকপুরে। দেহ আটকে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষ। পরে পুলিশ কুকুর আনা হয়। পেশাগত কারণেই এই খুন বলে অনুমান নিহতের পরিবারের। স্থানীয় তিন হাতুড়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম সঞ্জয় চক্রবর্তী (৩৮)। বাড়ি চিংড়া পঞ্চায়েতের কেটেদল গ্রামে।
মাড়োখানা পঞ্চায়েতের হানুয়ায় সঞ্জয়বাবুর চেম্বার। শনিবার রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথেই তাঁর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে খুন করে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে তদন্তকারীদের অনুমান। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে একটি চাদর এবং এক জোড়া জুতো পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি নিহতের নয়। ব্যাগ থেকে টাকা উধাও। সঞ্জয়বাবুর মোটর বাইকটি পাওয়া যায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কামারশালে। মোবাইল ফোনটি মেলেনি।
থানায় খুনের নালিশ জানিয়েছেন নিহতের ভাই দীপঙ্কর চক্রবর্তী। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “তিন জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
পড়ে আছে সঞ্জয়বাবুর দেহ। রবিবার মোহন দাসের তোলা ছবি। |
পুলিশ সূত্রের খবর, নিহতের মুখ দিয়ে রক্ত বেরচ্ছিল। গলায় মাফলার জড়ানো ছিল। এ দিন সকালে দেহ উদ্ধারের খবর চাউর হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। আশপাশের কয়েকশো গ্রামবাসী দেহ আটকে পুলিশ কুকুর আনার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। জনতার রোষ গিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি চোলাইয়ের ঠেকের উপর। তাঁদের অভিযোগ, ওই সমস্ত ঠেকে আস্তানা গাড়ে দুষ্কৃতীরা। সেখান থেকেই দুষ্কর্ম সংগঠিত হয়। বেশ কয়েকটি ঠেক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। ঠেকগুলির রমরমা নিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ সামলে দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। বিকেলে পুলিশ কুকুর আসে। ঘটনাস্থল থেকে পিচ রাস্তা ঘুরে উত্তর দিকে কয়েকশো ফুট গিয়েই থেমে যায় কুকুর। ওই দিকেই কিছুটা দূরে বাইকটি উদ্ধার হয়। খুনের পরে দুষ্কৃতীরা সঞ্জয়বাবুর বাইকে চেপেই খানিক দূর পর্যন্ত গিয়েছিল বলে পুলিশের অনুমান।
স্থানীয় সূত্রের খবর, চিকিৎসক হিসেবে গ্রামে নামডাক ছিল সঞ্জয়বাবুর। খানাকুল-২ ব্লকের চিংড়া, মাড়োখানা, রাজহাটি, নতিবপুর প্রভৃতি পঞ্চায়েতের নদীবেষ্টিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ তাঁর উপরে অনেকটা নির্ভরশীল ছিলেন। বাড়ির লোকেরা জানান, সম্প্রতি স্থানীয় শশাপোতা গ্রামে জায়গা কিনে একটি চেম্বার এবং নার্সিংহোম করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন সঞ্জয়বাবু। অভিযোগ, এ সব কারণেই অন্য হাতুড়েদের চক্ষুশূল হন তিনি।
নিহতের স্ত্রী মৃন্ময়ীদেবীর দাবি, “কিছু কোয়াক ডাক্তার স্বামীকে প্রায়ই হুমকি দিতেন। কয়েকবার ওঁকে হেনস্থাও করা হয়। শুক্রবার রাতেই স্বামী বলছিলেন, চেম্বার ও নার্সিংহোমের করছেন বলে কয়েক জন খুনের হুমকি দিয়েছে। শেষমেশ সত্যি সত্যিই খুন করল স্বামীকে।” |