সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিস (সি এস ও) পাঁচ শতাংশ হারে আয়বৃদ্ধির অনুমানটি প্রকাশ করিবার পর দেশব্যাপী একটিই অপেক্ষা ছিল অর্থ মন্ত্রক কী ভাবে এই দাবিকে নস্যাৎ করে, তাহা দেখিবার। অর্থ মন্ত্রক হতাশ করে নাই। বলিয়াছে, সি এস ও যে পদ্ধতিতে এই অনুমানে উপনীত হইয়াছে, তাহা একটি বিশেষ অবস্থায় যথার্থ যখন দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন একটি প্রবণতা বজায় রাখিয়া চলে, তখন। কিন্তু যখন উৎপাদনের প্রবণতার দিক পরিবর্তন ঘটে, তখন সি এস ও-র ব্যবহৃত পদ্ধতিটি ভুল। অস্যার্থ, অর্থ মন্ত্রক নিশ্চিত, ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন পাঁচ শতাংশের বেশি হারে বাড়িবে। কত বেশি হারে, অর্থ মন্ত্রক বলে নাই। ধরা যাক, অর্থ মন্ত্রক যাহা বলিতেছে, তাহাই যথার্থ সি এস ও ভুল বলিয়াছে। ভারতীয় অর্থনীতি ২০১২-১৩ সালে পাঁচ শতাংশ নহে, সওয়া পাঁচ অথবা সাড়ে পাঁচ অথবা পৌনে ছয় শতাংশ হারে বাড়িবে। কিন্তু প্রশ্নটি তো আধ শতাংশ কম-বেশির নহে প্রশ্নটি অর্থনীতির মৌলিক অসুখের। পাঁচ অথবা সাড়ে পাঁচ শতাংশে সেই অসুখের চরিত্রের ইতর-বিশেষ হইবে না।
অসুখটি দ্বিমাত্রিক: নীতিবৈকল্য এবং প্রয়োগবৈকল্য। কৃষি একটি উদাহরণ। হিসাব বলিতেছে, কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৮ শতাংশে দাঁড়াইবে গত অর্থবর্ষের অর্ধেক মাত্র। কৃষির এই অবস্থা কেন? সরকারের উত্তর হইবে, এই বৎসর বর্ষা স্বাভাবিক হয় নাই। গ্রাম লইয়া এত ঘোষিত উদ্বেগের পরেও ভারতীয় কৃষি এখনও কেন এমন বর্ষানির্ভর থাকিবে, সেই প্রশ্নের জবাব সরকারের ঘরে নাই। দ্বিতীয় কথা হইল, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বর্ষা ক্রমেই আরও অনিয়মিত হইয়া উঠিবে। এই অবস্থাকেই ‘নূতন স্বাভাবিক’ হিসাবে বিচার করা বিধেয়। সরকার তাহার পরিবর্তে অনিয়মিত বর্ষাকে এক বৎসরের ঘটনা হিসাবে দেখিতে ব্যস্ত। নীতি এবং প্রয়োগ, দুই ক্ষেত্রেই সরকারি অপদার্থতা স্পষ্ট। বিপদ সর্বত্রই। পরিষেবা ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হার কমিয়াছে। উৎপাদন ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হার আরও বেশি কমিয়াছে। সামগ্রিক শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার দাঁড়াইয়াছে ৩.১ শতাংশ, আর উৎপাদন ক্ষেত্রে ১.৯ শতাংশ। বস্তুত বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং জল বাদে আর কোনও ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার দুই শতাংশের সীমা অতিক্রম করে নাই। পরিকাঠামো ক্ষেত্র ধুঁকিতেছে। সরকার দায় অস্বীকার করিবে কী উপায়ে?
সরকার নীতিবৈকল্যে ভুগিতেছে, ফলে সংস্কারের পথে এক পা আগাইলে শত পা পিছাইয়া আসাই দস্তুর। এক বৎসর পূর্বে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সহিত যুক্ত বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিয়াছিলেন, সংস্কার শীঘ্রই আসিতেছে। ক্যালেন্ডার বদলাইয়াছে, সংস্কার এখনও অধরা। প্রয়োগবৈকল্যের একটি উদাহরণ পসকো-র জন্য জমি অধিগ্রহণে ব্যর্থতা। বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় অর্থনীতির উপর বিশ্বাস হারাইয়াছেন। আর্থিক বৃদ্ধির গতিভঙ্গ তাহারই ফল। হিসাবের পদ্ধতিগত ত্রুটি খুঁজিবার পরিবর্তে এই বিশ্বাস ফিরাইয়া আনিতে মনোযোগী হওয়াই সরকারের কর্তব্য। নচেৎ, ভারতীয় অর্থনীতির নিস্তার নাই। |