সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা এবং সেগুলি ঘটার পর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিদ্বজ্জনের লেখার পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই পত্রের অবতারণা। প্রায় সব বিশিষ্ট ব্যক্তির কলমেই দেখছি, পুরুষতন্ত্রকে তুলোধোনা করা হয়েছে। এবং ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনার পিছনে কারণ হিসাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকেই দাঁড় করানো হয়েছে। হ্যাঁ, গ্রামেগঞ্জে বা শহরতলির দিকে বা অনেক ক্ষেত্রে কলকাতার বুকে ঘটা এ রকম বেশ কিছু ঘটনার পিছনে পুরুষতন্ত্র নিঃসন্দেহে দায়ী। এমনকী বর্তমান সমাজে উদ্ভূত বেশ কিছু সামাজিক সমস্যার জন্যও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে দ্বিধাহীন ভাবে দায়ী করা চলে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, কলকাতা শহরের অত্যাধুনিক সমাজব্যবস্থার (যে সমাজে ছেলে ও মেয়েদের সামাজিক দূরত্ব খুবই কম) অন্তর্গত ছেলেদের মধ্যেও কিন্তু মেয়েদের উদ্দেশে অশ্লীল আচরণের প্রবণতা দিন দিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এ ক্ষেত্রে কি পুরুষতন্ত্রকে দায়ী করা চলে?
আমার বয়স বেশি নয়, আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এই ছাত্রজীবনের স্বল্প অভিজ্ঞতার মধ্যেই এমন কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, যেগুলি ধর্ষণের মতো গুরুতর না-হলেও অন্তত শ্লীলতাহানির পর্যায়ে পড়ে। এবং যেটা উল্লেখযোগ্য, ঘটনাগুলির কুশীলবরা প্রত্যেকেই অল্পবয়সি এবং স্কুলছাত্র। বড়দের কথা ছেড়ে দিলাম, কিন্তু এই অল্পবয়সিরাও আজকাল বাসে-ট্রামে- ট্রেনে বা রাস্তাঘাটে কোনও তরুণীকে দেখে দূর থেকে মন্তব্য করে (অতি উৎসাহীরা আবার পাশে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করতেও পরোয়া করে না), ‘উফ্, মালটাকে কী দেখতে দেখেছিস?’ বা ‘কী সলিড পিস মাইরি!’ তার পর শুরু হয় গালিগালাজ এবং নানা রকমের ‘টন্ট’, টিটকিরি বা কটূক্তি। সঙ্গে জুড়ে যায় ‘সিটি’ দেওয়া ইত্যাদি।
আজকাল আবার নতুন ধরনের আইডিয়া বেরোচ্ছে। যেমন, কোনও মহিলাকে দেখে তার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গোপনে ফটো তোলা, তার পর সেটিকে এডিট করা ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন, কিছু ছেলে যে সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের ‘মাল’ বা ‘পিস’ বলে চিহ্নিত করে, সেখানে এ রকম ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা নিতান্ত স্বাভাবিক নয় কি?
এর জন্যও পুরুষতন্ত্রকে দায়ী করা যেতে পারে। কিন্তু কলকাতা শহরের বুকে এই মেট্রোপলিটান জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত খবরের কাগজের ভাষায় জেন ওয়াই ছেলেদের মধ্যে পুরুষতন্ত্রের ধারণা একেবারেই প্রযোজ্য নয়। ছেলেরা যেখানে ছোটবেলা থেকে কো-এড স্কুলে মেয়েদের সঙ্গে পড়েছে, মেয়েদের সিগারেট খেতে, ড্রাইভ করতে, পার্টিতে যেতে দেখছে, বাবা ও মাকে এক সঙ্গে অফিস যেতে দেখছে, সেখানে পুরুষতন্ত্রের বীজ তাদের মাথায় ঢোকা এক রকম অসম্ভব বলেই আমার মনে হয়। তা হলে তাদের এ রকম আচরণের কারণ কী?
মনোবিদরা নানা কথা বলবেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, এর পিছনে দায়ী শিক্ষার অভাব। আমাদের সমাজে বাবা-মায়েরা ছেলেদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সায়েন্টিস্ট ইত্যাদি হতে উৎসাহ দেন। কিন্তু ক’জন বাবা-মা ছোটবেলা থেকে ছেলেদের বলেন, ‘মেয়েদের সম্মান করতে শেখো, শ্রদ্ধা করতে শেখো’ ইত্যাদি? ধর্ষণ বা মেয়েদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য এক ধরনের বিকৃত মানসিকতারই ফলাফল। কিন্তু ক’জন অভিভাবক সেই মানসিকতা যাতে তৈরি না-হয়, সে দিকে যথাযথ নজর দেন? অবশ্য আমাদের মতো ছেলেরা অভিভাবকের থেকে যা শেখে, তার তিন গুণ বেশি শেখে বন্ধুবান্ধবের থেকে। সুতরাং এ ধরনের বিকৃত মানসিকতা আকছার তৈরি হচ্ছে। এর ফলাফল বেশির ভাগ সময় লঘু হয়, সেগুলো পুলিশ বা তার আগে সংবাদ মাধ্যমের কাছে পৌঁছয় না। কিন্তু যখন গুরুতর হয়ে ওঠে, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
আমার মতে, মোমবাতি-মিছিল করে বা ধর্ষকদের ফাঁসি দিয়েও বোধহয় এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন করা যাবে না। প্রমাণ, দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরেও সংবাদ মাধ্যমে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হতে থাকা। এর জন্য চাই যথাযথ শিক্ষা। বলতে খুবই লজ্জা করে, সম্প্রতি এক জন শিক্ষককে জড়িয়ে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। স্কুলকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িয়ে না-থেকে শিক্ষকশিক্ষিকারা যদি ছাত্রদের মধ্যে মেয়েদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করার কথা প্রচার করেন, তা হলে বোধহয় পড়াশোনার উপরেও ছাত্রদের কিছু লাভ হতে পারে। শুধু মাত্র সঠিক শিক্ষা ও সঠিক মানসিকতার অভাবে মেয়েরা বর্তমান সমাজে ছেলেদের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে না-থেকেও বার বার আক্রান্ত হচ্ছে।
সবশেষে একটা কথা না-বললেই নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মহিলা। তিনি কোন ধর্ষণের ঘটনার পর কী মন্তব্য করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। কিন্তু তাঁর অনুগামীদের সংখ্যা প্রচুর। তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার কথা আজ সুদূর পাশ্চাত্যের পত্রিকাতেও প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমান যুব সম্প্রদায়ের এক বিরাট অংশ আজও তাঁকে নিজেদের রোল মডেল হিসাবে দেখে।
আমার বিনীত নিবেদন, বিভিন্ন জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর উত্তেজক রাজনৈতিক ভাষণের কিছু অংশে যদি এ ধরনের শিক্ষামূলক বিবৃতি খুব সামান্য পরিমাণেও থাকে, তা হলে বোধহয় কমবয়সি ছেলেদের মধ্যে মেয়েদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করার মতো মানসিকতা কিছুটা হলেও জন্ম নেবে। পশ্চিমবঙ্গের মা-মাটি-মানুষের মধ্যে মা যে আজ সত্যিই বড় অসহায়!
সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-৫৫
|
হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সে যেখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়ে, বিশেষ করে ২২ এবং ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পরিকাঠামোজনিত কিছু ত্রুটি রয়েছে। ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সম্প্রসারিত অংশে (টিকিয়াপাড়ার দিকে) পর্যাপ্ত আলো নেই। বেঞ্চির সংখ্যাও অল্প। ২২ এবং ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কিছু জায়গায় বালি, সিমেন্ট, স্টোনচিপস স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে। ফলে, যাত্রীদের চলাফেরা করতে অসুবিধা হচ্ছে। ২২ এবং ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে ট্রেনের সময়-সারণি জ্ঞাপক ডিসপ্লে বোর্ড নেই। ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীদের ট্রেনের সময়-সূচি জানতে হচ্ছে। ২২-২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন ছাড়ে। এর অধিকাংশই রাতে। পর্যটক ছাড়াও অনেক প্রবীণ নাগরিক এবং রোগী এ সব ট্রেনে চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যান। উপযুক্ত পরিকাঠামো না-থাকায় যাত্রীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। উপরোক্ত সমস্যার আশু প্রতিকারের আশায় দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সপ্তর্ষি ঘোষ। কলকাতা-৯ |