|
|
|
|
বিদায়ঘণ্টা বাজলেও শীতের ব্যাটে ফের ভেল্কিবাজি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ও উচ্চচাপের সৌজন্যে দক্ষিণবঙ্গে ফের শীতের দাপাদাপি। এতটাই যে, আবার শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে বাঁকুড়ায়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে নেমে গেলে আবহবিজ্ঞান সেটাকেই শৈত্যপ্রবাহ বলে। রবিবার বাঁকুড়ায় পারদ পাঁচ ডিগ্রি নেমে যাওয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দাঁড়ায় ১০ ডিগ্রি। কনকনে ঠান্ডা চলছে পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলাতেও। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় এক ধাক্কায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি নীচে।
চলতি মরসুমে শীত অবশ্য বারে বারেই এই ধরনের ওঠা-পড়ার খেল্ দেখিয়েছে। হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে বেশ কিছু দিন ব্যাট চালিয়েছে শীত। তার পরে ভরা মরসুমেই উচ্চচাপের ধাক্কায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৬-৭ ডিগ্রি উপরে উঠে গিয়েছিল। ফলে রমরমা কমে যায় ঠান্ডার। আবার তার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রবল দাপটে ফিরে আসে উত্তুরে হাওয়া। এ ভাবে দু’তিন বার শৈত্যপ্রবাহের মুখেও পড়েছে দক্ষিণবঙ্গ। জানুয়ারির গোড়ায় উত্তুরে হাওয়ার দাপটে কলকাতা হারিয়ে দিয়েছিল লন্ডনকেও। এক মরসুমেই বাংলার শীত-ভাগ্যে এ-হেন উত্থান-পতনের নজির খুব বেশি নেই।
বারবার পর্যুদস্ত হয়েও শীতের ব্যাট ফের রান পাচ্ছে কী ভাবে?
সাইবেরিয়া অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনই এর কারণ বলে জানাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, ওই পরিবর্তনের ফলে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা বায়ুপ্রবাহ, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢোকে) আসছে এ দেশে। |
নিম্নমুখী
পারদ |
|
স্থান সর্বনিম্ন তাপমাত্রা*
বাঁকুড়া ১০ (-৫)
শ্রীনিকেতন ৯.৬ (-৪)
কলকাতা ১৪.১ (-৩)
মেদিনীপুর ১২.৬ (-৩)
*ডিগ্রি সেলসিয়াসে |
|
তার জোরেই শীতের এই ভেল্কিবাজি। এবং উত্তুরে হাওয়ার চলতি ইনিংস তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।
সাধারণ ভাবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই দক্ষিণবঙ্গ থেকে পাততাড়ি গোটাতে শুরু করে শীত। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, এ বারেও তেমনটাই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন তাঁরা। ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১৯ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছিল। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, এ বার দক্ষিণবঙ্গ থেকে সত্যি সত্যিই বিদায় নিতে চলেছে শীত। কিন্তু গত সপ্তাহের মাঝামাঝি উত্তর ভারত থেকে আসা একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই হিসেব উল্টে দেয়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে একটি উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়। তার ফলে রাজ্যে বায়ুপ্রবাহে ফের পরিবর্তন ঘটে যায়। সেই পরিবর্তনের সুবাদে ফিরে আসে শীতের পরিস্থিতি।
হাওয়া অফিস জানায়, এ দিন কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ডিগ্রি কম। আজ, সোমবার মহানগরের তাপমাত্রা একই রকম থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
তা হলে কি শীতের পরিস্থিতি আপাতত বহাল থাকবে?
অতটা আশা দিচ্ছে না হাওয়া অফিস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, দক্ষিণবঙ্গে উচ্চচাপ বলয়টি এখনও সক্রিয় রয়েছে ঠিকই। তবে দিন দুয়েকের মধ্যেই সেটি দুর্বল হয় পড়বে। কাল, মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা ফের বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, “শীতের এটাই শেষ পর্যায়। এর পরে তার বিদায় নেওয়ার পালা।”
দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম, মধ্য ও উত্তর ভারতের একাংশেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে রয়েছে। বিশেষত হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে এ দিন বেশ ঠান্ডা মালুম হয়েছে। তবে দিন দুয়েকের মধ্যে সেখানেও তাপমাত্রা বাড়বে বলে আবহবিদদের পূর্বাভাস। তবে মৌসম ভবনের এক আবহবিদ জানান, উত্তর-পশ্চিম ভারতে চলতি মাসের শেষেও শীত থাকবে। |
|
|
|
|
|