|
|
|
|
বিতর্ক শুরু ফাঁসির অন্য আসামিদের নিয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এক জঙ্গির ফাঁসি হয়েছে প্রায় আট বছরের দীর্ঘ টালবাহানা পেরিয়ে। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হল ফাঁসি নিয়ে রাজনৈতিক তরজার নয়া পর্ব। এ বার যার কেন্দ্রে রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আরও কয়েক জন আসামি। আফজল গুরুর মতোই যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করা নিয়ে জারি রয়েছে একই রকম দীর্ঘ টালবাহানা।
আফজলের ফাঁসির পর জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা গত কাল বলেছিলেন, পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করতে চাইছে অনেকে। উপত্যকাবাসীকে আর্জি জানিয়েছিলেন শান্ত থাকতে। আজ ইউপিএ-র এই শরিক নেতা প্রকাশ্যেই রীতিমতো কড়া ভাষায় কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন। আফজলের ফাঁসি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করে তিনি ফাঁসি চাইলেন রাজীব গাঁধীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন জঙ্গির। ওমর দাবি তুলেছেন, কাশ্মীরের সঙ্গে যে বৈষম্য করা হল না, তার প্রমাণ দিতে এ বার রাজীবের হত্যাকারীদেরও ফাঁসিতে ঝোলাক কেন্দ্র। একই সঙ্গে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আফজলের ফাঁসি যদি স্রেফ বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়, তা হলে বলার কিছু নেই। কারণ, আইনি পথে আফজলের রেহাইয়ের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একই ঘটনা ঘটেছে রাজীব গাঁধী ও বিয়ন্ত সিংহের হত্যাকারীদের ক্ষেত্রেও। ওই দুই ঘটনাই ঘটেছিল সংসদ হামলার অনেক আগে। তাদের কেন এখনও ফাঁসি হল না?”
প্রসঙ্গত, রাজীব-হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন তামিল জঙ্গি মুরুগান, সন্থন এবং পেরারিভালানকে ১৯৯১ সালে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল আদালত। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই তিন হত্যাকারী জেলবন্দি রয়েছে। তাদের ফাঁসির দিন স্থির হয়েও পিছিয়ে গিয়েছে। আবার, পঞ্জাব সরকার রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করায় পিছিয়ে দিতে হয়েছিল বিয়ন্ত হত্যায় অভিযুক্ত বলবন্ত সিংহ রাজওয়ানার ফাঁসিও।
রাজনীতির কারবারিরা গত কাল বলেছিলেন, বিজেপির জাতীয়তাবাদের হাওয়া কেড়ে নিতেই এই সময়ে আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলানোর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কারণ, বিজেপির পক্ষেও ওই পদক্ষেপ সমর্থন করা ছাড়া অন্য পথ ছিল না। অবশ্য বিজেপিও আজ রাজীব-হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি তুলে কংগ্রেসকে আক্রমণ শুরু করেছে। কিন্তু ওমর বিজেপিকেও এক হাত নিয়েছেন। বলেছেন, “বিজেপি আফজলের ফাঁসির দাবি নিয়ে দুনিয়া মাথায় করেছে। অথচ তারাও রাজীব বা বিয়ন্ত সিংহের হত্যাকারীদের নিয়ে নীরব কেন?”
এ প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “বিজেপি একেবারেই নীরব নয়, বরং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বরাবর কঠোর ব্যবস্থার পক্ষে। ভোটব্যাঙ্কের অঙ্ক কষে কংগ্রেসই রাজীব হত্যাকারীদের সাজা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।” জাভড়েকরের দাবি, রাজীবের হত্যাকারীদের শাস্তি লঘু করার দাবিতে যখন তাদের পক্ষ নিয়ে বিজেপি সাংসদ রাম জেঠমলানি মামলা করেছিলেন, তখন দূরত্বই রেখেছিল বিজেপি।
২০১১ সালের অগস্ট মাসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল রাজীব হত্যাকারীদের ফাঁসি মকুবের আর্জি খারিজ করার পর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতে যায়। ফলে ৯ সেপ্টেম্বর তাদের ফাঁসির দিন স্থির করা হলেও তাতে স্থগিতাদেশ জারি করে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এ ছাড়াও তাদের মৃত্যুদণ্ড মকুব করে যাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সে বিষয়ে তামিলনাড়ু বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করেছিল ক্ষমতাসীন দল এডিএমকে। এমনকী বিরোধী ডিএমকে-র নেতা করুণানিধিও বলেছিলেন, রাজীব গাঁধী বেঁচে থাকলে তিনিও এদের ফাঁসি চাইতেন না। অন্য দিকে, বিয়ন্ত হত্যার দায়ে বলবন্ত সিংহ রাজওয়ানার ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল গত বছর ৩১ মার্চ। কিন্তু পঞ্জাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা জানায় অকালি-বিজেপি সরকার। ফলে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রদ করা হয়।
আফজলের ফাঁসির পর রাজীব-বিয়ন্তের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় কংগ্রেস নেতারা দাবি করছেন, কাশ্মীর উপত্যকায় যাতে অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে, সেই জন্যই হঠাৎ সুর চড়িয়েছেন ওমর। ফাঁসির সিদ্ধান্ত থেকে দূরত্ব রচনা করে উপত্যকার মানুষের ক্ষোভের কথা কৌশলে তুলে ধরছেন তিনি। বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি কংগ্রেসেরই সুবিধা করে দিয়েছেন বলে ওই নেতাদের দাবি।
কিন্তু পুরনো ইতিহাস ঘাঁটলে
দেখা যাচ্ছে, রাজীব হত্যা হোক বা বিয়ন্ত হত্যা সব সময়েই হত্যাকারীদের সাজা কার্যকর করার পথে অনেকাংশেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।
সেটা কী রকম?
স্থানীয় তামিল আবেগের কারণে রাজীবের হত্যাকারীদের ফাঁসির পক্ষে নন জয়ললিতা। আবার তাঁর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সখ্য সুবিদিত। ফলে মোদী বা বিজেপি মুরুগান-সন্থনদের ফাঁসি চেয়ে সম্ভাব্য জোট শরিককে চটাতে চাইবেন না। অন্য দিকে ইউপিএ শরিক ডিএমকে-রও যে হেতু ফাঁসিতে আপত্তি, তাই কংগ্রেসেরও এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। তা ছাড়া, গাঁধী পরিবারের তরফেও একটা ক্ষমার মনোভাব বরাবর দেখানো হয়েছে। রাজীব হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নলিনীর সঙ্গে জেলে গিয়ে দেখা করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা।
ঠিক তেমনই, পঞ্জাবে অকালি দল বিয়ন্ত সিংহের হত্যাকারীর ফাঁসির পক্ষে নয়। স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদেরও এতে আপত্তি রয়েছে। কারণটা সেই এক। স্থানীয় আবেগের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিতে সংশয়ী দুই পক্ষই।
অতএব দ্বিধার মূলে কখনও স্থানীয় কারণ, কখনও সর্বভারতীয়। কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা তাই বলেই দিচ্ছেন, রাজীব বা বিয়ন্তের হত্যাকারীদের
নিয়ে বিতর্ক বেশি দূর গড়াবে না বলে তাঁরা আশাবাদী।
|
আরও যাঁরা তালিকায়
|
রাজনীতি, বিচারের জটে আটকে |
মুরুগান, সন্থন,
পেরারিভালান |
রাজীব গাঁধী হত্যা |
বলবন সিংহ রাজোয়ানা |
বিয়ন্ত সিংহ হত্যা |
দেবেন্দর সিংহ ভুল্লার |
এম এস বিট্টাকে খুনের চেষ্টা, সাধারণ মানুষ হত্যা |
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পড়ে ক্ষমার আর্জি
|
গুরমিত সিংহ |
পরিবারের ১৩ জনকে খুন |
ধরমপাল |
ধর্ষণে জামিনে পেয়ে এক পরিবারের ৫ জনকে খুন |
সুরেশ ও রামজি |
সম্পত্তি বিবাদে ৫ আত্মীয়কে খুন |
প্রবীণ কুমার |
এক পরিবারের ৪ জনকে হত্যা |
জাফর আলি |
স্ত্রী ও ৫ মেয়েকে হত্যা |
সোনিয়া ও সঞ্জীব |
সম্পত্তি বিবাদে ৮ আত্মীয়কে খুন |
সুন্দর সিংহ |
ভাইয়ের পরিবারের ৫ জনকে খুন |
সাইমন, জ্ঞানপ্রকাশ, মাদাইয়া ও বিলভেন্দ্র |
ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ২২ জনের হত্যা |
মগনলাল |
সম্পত্তি বিবাদে ৫ মেয়ের হত্যা |
বি এ উমেশ রেড্ডি |
একাধিক মহিলাকে ধর্ষণ ও খুন |
|
|
|
|
|
|