|
|
|
|
পরিবার কেন আফজলের দেখা পায়নি, ক্ষুব্ধ ওমরও |
সাবির ইবন ইউসুফ • শ্রীনগর |
চোখে-মুখে রাগ স্পষ্ট। আফজল গুরুর ফাঁসির পর দিন তাঁর তুতো ভাই মহম্মদ ইয়াসিন বললেন, “আমাদের কেউ কিচ্ছু জানায়নি। সরকারের কাছে প্রথম এবং শেষ দাবি, আফজলের মৃতদেহ আমাদের দেওয়া হোক।”
চুপিসারে ফাঁসি, মৃত্যুদণ্ডের খবর পরিবারকে আগে থেকে না জানানো এবং তিহাড় জেলের ভিতরেই আফজলের দেহ কবর দেওয়া কেন্দ্রের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েই অসন্তোষ জমা রয়েছে কাশ্মীরে। বিরোধী পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি গত কালই বলেন, “মানবিকতার খাতিরে অন্তত আফজলের দেহ ফেরত দেওয়া উচিত ছিল।” আজ হুবহু এক সুরে অসন্তোষ জানান জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।
গত কাল তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালে আজ বেশ রাগত স্বরে ওমর বলেন, “আফজলের ফাঁসি দুর্ভাগ্যজনক। ফাঁসির আগে তাঁকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া উচিত ছিল। |
 |
আফজলের ফাঁসির প্রতিবাদে অনশন। মঞ্চে লস্কর প্রতিষ্ঠাতা
হাফিজ সইদ ও ইয়াসিন মালিক। ইসলামাবাদে। ছবি: এপি |
মানবিকতার দিক থেকে এ এক বিরাট ট্র্যাজেডি।” ফাঁসির দিনক্ষণ জানিয়ে আফজলের পরিবারকে স্পিডপোস্টে চিঠি পাঠানো হয়েছিল বলে গত কাল থেকেই দাবি করে আসছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই চিঠি আফজলের পরিবারের হাতে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। ওমর কিন্তু গোটা বন্দোবস্তটাকেই কটাক্ষ করে বলেছেন, “কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে, সেই খবরটা যদি তার পরিবারকে ডাকে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, তা হলে বুঝতে হবে, গোটা বিষয়টাতেই গলদ রয়েছে।”
ওমর জানিয়েছেন, এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন। দেখবেন আফজলের দেহ কাশ্মীরে আনা যায় কি না।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই এখন বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওমরের। সে কারণেই ইউপিএ শরিক হয়েও তাঁকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে হচ্ছে অনেকে মনে করছেন। যে কারণে কেন্দ্রের তরফে ফাঁসির দিনক্ষণ তাঁকে মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে জানানো নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন ওমর। বস্তুত, আজও কার্ফু উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছে জনতা। সোপোর, বারামুলা, পুলওয়ামা, গান্ডেরবালের মতো বেশ কিছু এলাকায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছে। |
 |
কার্ফুর দ্বিতীয় দিনে থমথমে শ্রীনগর। রবিবার। ছবি: পিটিআই |
এই প্রথম মৃত্যুরও খবর এসেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিরাপত্তাবাহিনীর তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে যান এক যুবক। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। উপত্যকায় এখনও বন্ধ ইন্টারনেট। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে না খবরের চ্যানেল। খবরের কাগজ বন্ধ থাকা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছে কাশ্মীর এডিটর্স গিল্ড।
এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আগে জানলে আফজলের পরিবারের জন্য দিল্লি যাওয়ার বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করতেন তিনি। ওমরের বক্তব্য, আজমল কসাবের ফাঁসির পরেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এ বার আফজলের পালা। এর পর আর কোনও ‘যদি-কিন্তু’ ছিল না, প্রশ্নটা ছিল ‘কখন’? তাই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি কী কী ব্যবস্থা নিতে হতে পারে, তা নিয়ে দিন কয়েক আগে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছিল। কিন্তু এরই পাশাপাশি ওমর দাবি তুলেছেন, এ বার যদি রাজীব গাঁধীর হত্যাকারীদের ফাঁসি না হয়, তা হলে উপত্যকায় এই বার্তাই যাবে যে বেছে বেছে আফজলকে ফাঁসি দেওয়া হল। এর ফলে ফের বিচ্ছিন্নতাবাদের দাবি উঠতে পারে কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে মকবুল বাটের ফাঁসির পর।
আপাতত আফজলের পরিবারের দাবি, দেহ ফেরত দেওয়া হোক। অন্তত তিহাড় জেলে গিয়ে শেষকৃত্যের অনুমতিটুকু পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, জেলে আফজলের যে সব জিনিসপত্র ছিল, বই, চশমা, জামাকাপড়, রেডিও সবই তাঁর পরিবারকে দেওয়া হবে। |
|
|
 |
|
|