‘প্রহারে’ মৃত্যু প্রৌঢ়ার, অভিযুক্ত স্বামী-দুই ছেলে-পুত্রবধূরা
দোতলার ঘরের জানালা দিয়ে চিৎকার করে পড়শিদের সাহায্য চেয়েছিলেন মুমূর্ষু, ‘আহত’ প্রৌঢ়া। শনিবার তালা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করেন পাড়ার লোকেরা। গভীর রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকেরা জানান, প্রৌঢ়ার বুকে গুরুতর আঘাত লেগেছিল। রবিবার অভিযোগ ওঠে বরাহনগরের বি কে মৈত্র রোডের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে স্বামী, দুই ছেলে, বৌমার অত্যাচার, মারধরের কারণেই। তার ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে প্রৌঢ়ার স্বামী ও বড় ছেলের। এ দিন প্রৌঢ়ার দেহ এলাকায় পৌঁছলে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবেশীরা। বেলঘরিয়ার এডিসি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “ওই মহিলাকে কী কারণে মারধর করা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে তাঁর উপরে প্রায়ই অত্যাচার করা হত। না হলে পাড়ার লোকেরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ করতেন না।” একটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই প্রৌঢ়ার নাম গীতা কর্মকার (৫৪)। স্বামী আনন্দ, বড় ছেলে আশিস, ছোট ছেলে মনোজ এবং তাঁদের স্ত্রীর সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকতেন গীতাদেবী। তাঁর বাপের বাড়ির লোক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই মহিলার উপরে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হত।
অভিযুক্তদের দু’জনকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।
গীতাদেবীর পাশের বাড়ির বাসিন্দা সঞ্জীব নিয়োগী জানান, শনিবার সকাল থেকে ওই প্রৌঢ়াকে মারধর করা হচ্ছিল। তাঁকে ঘরে আটকে রেখে বাড়ির সকলে বেরিয়ে যান। সঞ্জীববাবু বলেন, “বিকেলের দিকে হঠাৎ তিনি ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার করতে থাকেন। কোনওমতে দোতলার ঘরের জানালা দিয়ে একটি ডুপ্লিকেট চাবি নীচে ফেলে দেন তিনি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়ার ছেলেরা দরজার তালা খুলে দোতলায় যান। আর্থারাইটিসে আক্রান্ত ওই প্রৌঢ়াকে পাঁজাকোলা করে বার করে নিয়ে আসেন তাঁরা। তাঁর শরীরে মারধরের চিহ্ন ছিল বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারান গীতাদেবী। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে ইসিজি পরীক্ষার করে চিকিৎসক জানান, ওই প্রৌঢ়ার হৃৎপিণ্ডে কোনও ভাবে আঘাত লেগেছে। গভীর রাতে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
রবিবার সকালে গীতাদেবীর দেহ এলাকায় পৌঁছলে বিক্ষোভ শুরু হয়। তাঁর ছোট ছেলে, দুই বৌমা এবং কয়েক জন আত্মীয় ওই বাড়িতে ছিলেন। তাঁদের আটকে রাখেন এলাকার বাসিন্দারা। খবর যায় পুলিশে। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গিরিশ পার্ক এলাকার একটি সোনার দোকানের কর্মী আনন্দবাবু এবং তাঁর বড় ছেলে আশিস পলাতক। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গীতাদেবীর দোতলা বাড়ির প্রায় সবক’টি কাচের জানালাই ভাঙা। সামনের রাস্তায় ইটের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ভিড় জমেছিল ওই বাড়ির সামনে। মোতায়েন ছিল পুলিশও।
গীতাদেবীর ওই বাড়ির একতলার ভাড়াটে অপর্ণা সিংহ বলেন, “পাঁচ বছর ধরে এই বাড়িতে রয়েছি। বেশির ভাগ সময়েই জেঠিমাকে (গীতাদেবী) অন্যরা মারধর করত। অনেক বার প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয়নি।” এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দোতলার ঘরে ওই প্রৌঢ়াকে তালাবন্ধ করে রাখা হত। তাঁকে ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হত না। অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বাড়ছিল।
পুলিশ জেনেছে, যে বাড়িতে গীতাদেবী থাকতেন সেটি ওই মহিলার নামেই লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি আদায় করার জন্যই চলত অত্যাচার। ওই প্রৌঢ়ার ভাই জানিয়েছেন, তাঁর দিদি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার উপরে বাড়ির লোকেরা নিয়মিত নির্যাতন চালানোয় গীতাদেবীর শরীর আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। মাস ছয়েক আগে তাঁকে মারধর করার অভিযোগে ওই মহিলার বড় ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। পরে গীতাদেবী থানা থেকে অভিযোগ তুলে নেওয়ায় তাঁর ছেলে ছাড়া পান।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.