উৎসবের নামে তোলাবাজি
সমাজবিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের অভিযোগ বুদ্ধের
ততার প্রশ্নকে হাতিয়ার করে আবার তৃণমূল নেতৃত্বকে আক্রমণ করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রবিবার শহিদ মিনারের সভায় তিনি তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে উৎসবের নামে তোলাবাজি এবং সমাজবিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ আনলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যারা অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, তারা সরকারের মাথায় বসে আছে।” তাঁর অভিযোগ, “সমাজবিরোধীদের দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের বিধায়করা তোলাবাজি করছে।” এর বিরুদ্ধে এলাকার মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর ডাকও দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ইতিমধ্যেই বুদ্ধবাবুকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছে তৃণমূল। বুদ্ধবাবুর আইনজীবী তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। এ দিন বুদ্ধবাবুর অভিযোগের জবাবে আজ, সোমবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার রাতে নলহাটি থেকে তিনি বলেন, “আমি নির্বাচনী প্রচারে রয়েছি। বুদ্ধবাবু কী বলেছেন, শুনেছি। সাংবাদিক বৈঠকেই জবাব দেব।” বুদ্ধবাবুর মন্তব্যের জবাব দিতে
রুচিতে বাধে এই মন্তব্য করেও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বাম আমলে হাতকাটা দিলীপ, বুল্টন, পলাশ থেকে আরম্ভ করে মজিদ মাস্টার বা প্রয়াত বাপি গুপ্ত উদাহরণ সামনেই আছে। তাতেই স্পষ্ট, কারা সমাজবিরোধীদের মদত দিত।”
শহিদ মিনারের সামনে জনসভায় বক্তৃতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের।—নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম নেতা মজিদ মাস্টারের নামে বাম আমলের দু’টি খুনের মামলা চলছে বলেও জ্যোতিপ্রিয়বাবুর অভিযোগ। রবিবার কলকাতা জেলা সিপিএমের ডাকে শহিদ মিনার ময়দানের ওই সভায় তৃণমূল নেতৃত্বের সততা ছাড়াও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গটিও সামনে আনেন বুদ্ধবাবু। কলকাতার মানুষকে সঙ্গে পেতে সিপিএম যে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এই বিষয়টিকেও হাতিয়ার করছে, এ দিন বুদ্ধবাবুর কথাতেই তা স্পষ্ট। শনিবারই বরাহনগরে স্কুলের ছাত্রীর শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। ক’দিন আগে কন্যার শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে বারাসতে আক্রান্ত হন এক পিতা। বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, স্কুলের ছাত্রী থেকে আরম্ভ করে কর্মরত মহিলা কেউই আর নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করছেন না। এ নিয়ে তিনি নিয়মিত টেলিফোন বা চিঠিতে অভিযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এরা এত সাহস পাচ্ছে কোথা থেকে? সমাজে অপরাধ থাকলেও তা দমন করে রাখা যাবে কি না, তা সরকারের উপরে নির্ভর করে।” বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, রাজ্যে নানা ধরনের অপরাধ, বিশেষ করে মহিলাদের শ্লীলতাহানি বাড়ছে।
বাম আমলে অপরাধী-সমাজবিরোধীরা ছিল, এ কথা কবুল করেও বুদ্ধবাবু দাবি করেন, “তখন সমাজবিরোধীরা পুলিশকে ভয় করত। কিন্তু এখন ভয় পাচ্ছে না। কারণ, প্রথমেই বলা হচ্ছে ও সব মিথ্যা কথা। সমাজবিরোধীরাও ভাবছে, আমরা ওদের (তৃণমূলকে) ভোটে জিতিয়েছি। ওরা কী করবে?” এই সূত্রেই ওঠে শহরে পুজোর জাঁকজমকের কথাও। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়ার ফলেই বাম আমলে সিপিএমের কোনও প্রথম সারির নেতা বা বিধায়ক সরাসরি পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকতেন না। কিন্তু তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা থাকেন। এই পার্থক্যটিও এখন মানুষের সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট সিপিএম নেতৃত্ব। বুদ্ধবাবু বলেন, “শারদীয় উৎসবের মাথায় মন্ত্রী, বিধায়ক। কোটি কোটি টাকা তুলছেন। এটা কি তোলাবাজি নয়? পাড়ায় পাড়ায় এ সব হচ্ছে। আমরা কোনও দিন এ সব প্রশ্রয় দিইনি।” তার পরেই তৃণমূলের বিধায়কদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ তুলে বুদ্ধবাবু বলেন, “সমাজবিরোধীদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিধায়ক, মন্ত্রীরা তোলাবাজি করলে সমাজবিরোধীরা ছেড়ে দেবে? দেবে না।” এলাকায় সাধারণ মানুষ কি কয়েক জন গুন্ডার কাছে মাথা নিচু করে থাকবেন সেই প্রশ্ন তুলে বুদ্ধবাবু সাধারণ মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দেন।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, মানব মুখোপাধ্যায় এবং পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচি বক্তৃতা করেন। সকলেই এ দিন তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। লোকসভা, পুরভোট, বিধানসভা ভোটে পরপর হারের ফলে কলকাতা জেলা সিপিএমের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে আলিমুদ্দিনের পরামর্শেই গত তিন মাস ধরে কলকাতা জেলা সিপিএম প্রচারে নামে। বহু জায়গায় সভা করে। খাদ্য নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন দাবিতে ও কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ১২ লক্ষ মানুষের সই সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও তাদের দাবি। এ দিনের সভায় সমস্ত লোকাল কমিটি ও শাখা সংগঠন থেকে যাতে লোক আসে, তার জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার ফব-র সভায় শহিদ মিনারের মাঠ না ভরলেও এ দিন সেখানে ভিড় হয়েছিল। যা দেখে সিপিএম নেতৃত্ব কিছুটা আশ্বস্ত।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.