বাবা জ্ঞান দিয়ো না
আমি সে ও সখা
তিনি যখন তখন হারিয়ে যান, স্টেশনের চত্বরে।
অবলা অভিমানে মিশে যান মানুষের ভিড়ে। শিখে নেন একা একা সাঁতরে পার হওয়ার মন্ত্র। আর গেয়ে ওঠেন,“দূরবিনে চোখ রাখব না না না।”
দূরবিনে চোখ রেখে দূরে চলে যাওয়া চরিত্রকে কিছুতেই কাছের করে দেখতে চান না গীতিকার, সুরকার এবং সম্প্রতি কবি হয়ে ওঠা অনুপম রায়। কিন্তু ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বিদ্যে-বুদ্ধি-যুক্তি দিয়ে কিছুতেই বেরোতে পারেন না প্রেমের গানের ভুলভুলাইয়া থেকে। এই নিয়ে পর পর দু’বছর ভ্যালেনটাইনস ডে-তে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর গানের অ্যালবাম।
এ বারের অ্যলবামের নাম ‘দ্বিতীয় পুরুষ’। কী রকম যেন পরকীয়া পরকীয়া গন্ধ নামটায়!
হেসে উঠে বললেন, “একেবারেই তাই। বাঙালি নারী-পুরুষের প্রেমে মাঝে মাঝেই কেমন করে যেন তৃতীয় চরিত্র ঢুকে পড়ে। সেই তৃতীয় জনের মধ্যে কী রকম একটা ঝাড় খাওয়া প্রেমিকের ঘোর কাজ করে। তখন সে নানা রকম গান বাঁধে, গান গায়, কবিতা পড়ে আর ভাবখানা এমন করে এই বেশ সুখে আছি। সেই তৃতীয় জনই হল দ্বিতীয় পুরুষ।”
কথা বলতে বলতে অনুপম গেয়ে ওঠেন নতুন অ্যালবামের গান, “আমি আজকাল ভাল আছি/তোকে ছাড়া রাতগুলো আলো হয়ে আছে।”
অনুপমের মতে দ্বিতীয় পুরুষই হোক বা দ্বিতীয় নারী, এই রকম ‘ভাল আছি’ ভেবেই সান্ত্বনা পায় নিজেরা। তা অনুপমও পান নাকি এমন সান্ত্বনা? তিনিও কি কোথাও দ্বিতীয় পুরুষ? কারও জীবনের?
না, একেবারেই সে কথা স্বীকার করলেন না অনুপম। তবে দু’ চার জন নারীকে যে নিজের মনের অগোচরেই ভাল লাগে না তা নয়। কখনও কখনও ছোট ছোট এসএমএস, চ্যাটে কথা, চিঠি আদানপ্রদান চলে। কিন্তু সেই পর্যন্তই। বাস্তবে প্রেমিকা বলে কেউ নেই তাঁর। হয়তো নেই বলেই অ্যালবামে আবারও রাখা হয়েছে ‘বাইশে শ্রাবণ’এর সেই গানটি, “এক বার বল তোর কেউ নেই/ কেউ নেই।”
বারবার ভ্যালেনটাইনস ডে-তে তাঁর অ্যালবাম রিলিজ হয় বলেই প্রশ্নটা এসে পড়ে, অনুপম কি বিশ্বাস করেন বিশেষ এই দিনটির প্রেমের উৎসবে?
হ্যাঁ, তিনি বিশ্বাস করেন। নিজে কোনও দিন ভ্যালেনটাইনস ডে-তে কোনও প্রেমিকাকে গোলাপ বা টেডি বিয়ার উপহার না দিলেও মনে করেন এই দিনটায় সমস্ত প্রেমিক-প্রেমিকার পথে নেমে, হাত ধরাধরি করে প্রেমের উৎসব করা উচিত। প্রেমের জন্য একটা দিন নির্দিষ্ট থাকলে তো ভালই।

অনুপম রায়। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
প্রেমে প্রেমে ছয়লাপ হয়ে যাক রাস্তাঘাট। মাইকে বাজুক প্রচুর প্রেমের গান। আর বিকিয়ে যাক ফুলওয়ালাদের পসরা থেকে সমস্ত সুগন্ধি গোলাপ। “এমনকী বয়সে যাঁরা অনেক প্রবীণ তাঁরাও যদি এই দিনটায় দুজনে মিলে আনন্দ করে কাটান, ভাল লাগবে। সম্পর্কে একটা নতুন আলো খেলে যাবে,” বলছিলেন অনুপম।
এ হেন প্রেমমুগ্ধ অনুপমের জীবনে প্রথম প্রেমটা ঠিক কেমন ছিল? সে এক গল্প। ক্লাস সেভেন কী এইটে পড়েন তখন। স্কুলবাসে করে যাওয়ার সময় একটি মেয়েকে প্রথম ভাল লাগতে আরম্ভ করে। অনুপম তার দিকে মাঝে মাঝে তাকাতেন। মেয়েটিও তাকাত। যত দিন যায় ওই তাকানোর ঘনত্ব বাড়তে থাকে। একটা সময় এল যখন অনুপম যত না তাকান, মেয়েটি তার চাইতে বেশি তাকাতে শুরু করে। অনুপম বললেন, “আর তখনই আমার বুক দুরুদুরু শুরু হল। এই রে! এই বার তো কথা বলতে হবে। তখন যা বয়স কথা বলার কোনও মানেই হয় না। কিছু হয়ে গেলে সামলাব কী করে, সেই কথা ভেবে ক্লাস টেনে উঠে স্কুলবাসে যাওয়াই ছেড়ে দিলাম। ভীরু প্রেমিকেরা যেমন হয় তাই হল।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হয়ে ঢোকার পরও অনুপমের মনে বেশ প্রেম প্রেম একটা হাওয়া খেলেছিল। কিন্তু তখন কোনও প্রেমিকা নেই। “একটি মেয়েকে ভাল লাগার পর, মনে মনে খুব সাহস করে তার সঙ্গে বার তিনেক কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রত্যেকবারই মেয়েটি বলেছিল সে খুব ব্যস্ত। তাই প্রেমের কথা তো দূরস্থান, কোনও সাধারণ কথাও তার সঙ্গে বলা হয়নি,” কৃত্রিম আক্ষেপের সুরে বলছিলেন অনুপম।
প্রেমিকাদের সঙ্গে কথা বলা হোক বা না হোক, থেকে গেছে তারা ভিড় করে অনুপমের গানে আর কলমে। নতুন অ্যালবামে একটি গানের কথা এই রকম, “দেড়শো বছর আগেও আমি/ তোমায় চেয়ে গান লিখেছি/ পুকুর ধারে জলের গন্ধে বাংলা ভাষায় চোখ ধুয়েছি/ এখন তুমি খুঁজতে এলে?”
অনুপমের প্রেমের গান থেকে বাদ পড়ে না অঙ্কের খাতাও। এক সময় নাকি অঙ্কের সঙ্গেও তাঁর প্রেম হয়েছিল। ভালবেসে ফেলেছিলেন জ্যামিতিকেও। অঙ্কের পরিভাষায় লিখেছেন নারী-পুরুষের প্রেমের কথা, ‘কার্টিসিয়ান কোঅর্ডিনেট/ আমরা ফ্রি/ তুমি চার শূন্য, আমি শূন্য তিন”। এক বিরহী প্রেমিকই যেন ঘুরে ফিরে আসে তাঁর গানে। ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় গেয়ে ওঠেন এমনই আরেকটি গান।
“যদি ওর সাথে ভাল থাকো, থাকতে পারো।
আমার দেহে বন্ধ হয়ে,
আমার গানের ছন্দ কেটো না।
আমি এ সব বলেই থাকি
কিছু মনে কোরো না।”

‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এর নতুনত্ব তা হলে কি দ্বিতীয় পুরুষ হয়ে থাকার বিরহ? অনুপম বললেন, “দ্বিতীয় পুরুষ কথাটার মানে দ্বিতীয় সত্তাও। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই দ্বিতীয় এক মানুষ থাকে, দ্বিতীয় এক সত্তা থাকে। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে তার সঙ্গে হয়তো মাঝে মধ্যেই দেখা হয়। সেই সত্তা তার সারা দিনের পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব করে। নিজেকে অন্য ভাবে সংজ্ঞা দেয়। সেই দর্শনটাও আমার নতুন অ্যালবামের ভাবনা। আর আছে সাউন্ড। নতুন ধরনের মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে কিছু গানে। কিছু গান রক অ্যান্ড রোল স্টাইলে। আর কিছু গানের যন্ত্রানুষঙ্গে থাকছে গিটার, পিয়ানো, এস্রাজ।”
শুভদীপ, নবারুণ, রোহিত, সন্দীপন অনুপম রায়ের নিজস্ব ব্যান্ডের শিল্পীরাই রয়েছেন মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টে। ভ্যালেনটাইনস ডে-টা অনুপমের কাটবে বিভিন্ন আউটলেটে গিয়ে অ্যালবাম রিলিজ করতে করতেই।
নিজের প্রেম নাই বা রইল, অন্যের প্রেমে গানের সুরের মূর্ছনা সঞ্চার করাও তো আর এক প্রেম।
অনুপমের জন্য রইল গিটার, কলম আর সাদা খাতার পাতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.