বাবা জ্ঞান দিয়ো না
একলা থাকার বড় সুখ
ক্তিম ঠিক সকাল দশটায় ফোনটা পেল। বেঙ্গালুরু থেকে চাকরির ডাক এসেছে তার। এটা কিন্তু প্রথম বার নয়। এর আগে বারকয়েক সুযোগ পেয়েও নিজেকে বঞ্চিত করেছে ও। কারণটা আর কিছু নয়। পিছুটান। রাই-এর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। রাই-এর ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে কলকাতা ছাড়ার কথা মাথায়ও আসত না। কিন্তু সেই রাই-ই বদলে গেল পুরোপুরি। ছেড়ে গেল রক্তিমকে। আজ সব বন্ধনের অবসান। প্রথম দিকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ত রক্তিম। কিন্তু এখন ও বেশ সুখে আর বহাল তবিয়তেই আছে। অনেক উন্নতি করতে হবে। ওকে বেঁধে রাখার অধিকার এখন কারও হাতে নেই।
একাকীত্ব দু’রকম। কখনও তা উপভোগ্য, আবার কখনও বা অসহনীয়। এখন জেন-ওয়াই কিন্তু একাকীত্ব উপভোগ করতেই সিদ্ধহস্ত। জীবনে প্রণয়ের অংশীদার নেই তো কী? মন খারাপ করে মুখ গুঁজে বসে থাকার দিন এখন শেষ।
‘সিঙ্গল হ্যাপি লাইফ’ চেখে নিতে উৎসুক সকলেই।

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
স্বাধীন জীবনের স্বাদ নিতে হলে ‘সিঙ্গল’ না হয়ে উপায় নেই। যেখানে খুশি যেতে পারার মধ্যে যে আনন্দ আছে, তা আর কিছুর মধ্যেই নেই। কলেজছাত্রী তনয়ার কথায়, “কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার নেই। প্রেম করলে এই স্বাধীনতা কোথায় পেতাম? বেশির ভাগ বন্ধুকেই দেখি বয়ফ্রেন্ডের নজরবন্দি হয়ে থাকতে হয়।”
ছেলেদেরও দেদার মজা। কোনও বাধা নেই নিজের মতো করে সময় কাটানোতে। “ইচ্ছেমতো ইন্ডিয়ার ম্যাচ দেখতে পারি। আগে খেলাগুলো মিস করতাম। গার্লফ্রেন্ডের জোরাজুরিতে হাত ধরে ঘুরতে বেরোতে হত। মন না চাইলেও মুখে কিছু বলতে পারতাম না,” বলছেন সন্তোষপুরের সায়ন্তন ঘোষ। আরও বলছেন, “সম্পর্কে থাকাটাই বড় কথা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তো দেখি, সম্পর্কে থেকেও পরস্পরের মধ্যে শত যোজন দূরত্ব। তার থেকে একা থাকা ঢের ভাল।”
সামাজিকীকরণের ধরন এমনই যে ছোট থেকেই মানুষকে ভাবতে শেখায় একা পথ চলা যায় না। তবে এই ধারণা এখন বদলেছে। উত্তর কলকাতার এক স্কুলের শিক্ষিকা চন্দ্রলেখা সেন বলছেন, “জীবনের পথে একা চলতে আমার নিজের যদি আপত্তি না থাকে, তবে কারই বা কী বলার থাকতে পারে! সম্পর্কের সুতোয় নিজেকে বাঁধতে চাওয়ার কথা আমার মাথাতেই আসে না।”

ভাটার পকেটে জোয়ারের ইশারা
প্রেম করলে পকেটে ভাটা তো পড়েই। এই আগুনধরা বাজারে প্রেমের খরচটা ভাবাচ্ছে অনেককেই। মুভির টিকিটই হোক বা ডিনারে গিয়ে খরচ এর থেকে দূরে থাকতে গেলে প্রেম না করাটাই কাজের কাজ। তার থেকে নিজের জন্য খরচ করাটাই বেস্ট অপশন। সেকেন্ড ইয়ারের কৌশিক যেমন বলছিলেন, “মেয়েদের চাহিদা মেটানোর মতো ছেলে আমি নই। ফি বছর ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ভাল গিফ্ট দিতে পারিনি বলে আমার আগের সম্পর্কটা কেঁচে গেছে। সেই থেকে সিঙ্গল লাইফেই আমি হ্যাপি।” কোনও চাপ নেই। ফুরফুরে জীবন। নিজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের পর বাকি টাকা জমান তিনি।
টিপস
• নিজেকে উপলব্ধি করুন। ছোটবেলার পুরোনো শখগুলো ঝালিয়ে নেওয়ার এই তো সময়।
• ভাল খান, যত খুশি শপিং করুন। নিজেকে সাজান। মোদ্দা কথা, নিজের জন্য খরচ করুন।
• পেশাগত জীবনে আরও মনোযোগ দিন।
• বন্ধুদের সময় দিন।
• ডেটিং চলতে থাকুক আপন গতিতে। হঠাৎই হয়তো পেয়ে গেলেন মনের মতো সঙ্গী।
• যারা আপনাকে ‘সিঙ্গল’ বলে খেপায়, সে সব ভুলভাল লোকদের জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
বন্ধু তোর সঙ্গে সারাবেলা
প্রেমে নিজেকে জড়িয়ে রেখে বন্ধুকে সময় না দেওয়ার ছবিটা চোখের সামনে ভাসছে নিশ্চয়ই? বেলেঘাটার রাজরূপা বছর দু’য়েক প্রেম করে মহা ফাঁপরে পড়েছিলেন। বলতে গেলে তাঁর জীবন নিয়ন্ত্রণের রাশটাই ছিল বয়ফ্রেন্ডের হাতে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশতে না দেওয়া তো ছিলই। প্রাণ খুলে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে হাসতেই ভুলে গিয়েছিলেন রাজরূপা। সম্পর্কের প্রতি যথেষ্ট সিরিয়াস ছিলেন। কিন্তু দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে ভালবাসা উবে যেতে বসেছিল। শেষমেশ সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। এখন তাঁর জীবনের ‘প্রায়োরিটি’ বন্ধুরাই। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া কী মুভি দেখতে যাওয়া চলে যখন তখন। কেউ আর মাথা গলাতে আসে না জীবনে। এই জীবনই তো মনে মনে চেয়ে এসেছিল ও।

ফ্লার্ট করার ছাড়পত্র
চুটিয়ে ফ্লার্ট করার জন্য সিঙ্গল থাকাই শ্রেয়। প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর নিত্যনতুন ফ্লার্ট করায় কেউ আটকাতে পারবে না। সদ্য চাকরিতে পা রাখা রণদীপের প্রেম ভেঙে গেছে বছর দেড়েক আগে। ফ্লার্টিং থেকে বিরত হতে হবে ভেবে নতুন করে প্রেমে পড়তেও চান না তিনি। বলছিলেন, “ফ্লার্ট করতে গিয়েই যদি হঠাৎ করে কাউকে ভাল লেগে যায়, তবে অন্য কথা। স্টেডি রিলেশনশিপের জন্য এ বার একটু সময় নেব।”
তবে মাথায় রাখতে হবে যে, মুক্ত জীবন, একা জীবন শুনতে যতটা রোম্যান্টিক, বাস্তবে ততটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাই ধৈর্য ধরুন। নিজের উপর ভরসা রেখে সামনে এগিয়ে চলুন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.