ইয়েস নিয়ে ইয়া কাণ্ড
বিজুর একটা বড় গুণ, সব সময়ে ন্যায্য কথা বলা। দোষও অবশ্য একটা আছে। তবে ও দোষ অনেকেরই থাকে। বিজুর ক্ষেত্রে কখনওসখনও মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে যায়, এই যা!
আসলে, বিনা কারণে কেউ হেয় করলে বিজুর মাথায় রক্ত চড়ে যায়। বাজারে পেল্লাই সাইজের মাছ নিয়ে বসে বিজু। বিরাট ধারালো বঁটিতে মাছ কাটে। লোকে বলে, ‘আঁশবঁটি নিয়ে যার কারবার তার রাগ তো একটু বেশি হবেই।’
মাছের বাজারে ভিড় বেশি থাকলে অবশ্য কথা কথান্তরের প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু ভিড় একটু পাতলা হলে খরিদ্দারের সঙ্গে কিছু কথা তো হতেই পারে। এ দিনের ঘটনাটাও সে রকমই।
মাছ বিক্রির ফাঁকে বিজু একটা ন্যায্য কথা পেশ করেছিল, ‘যে হারে ইলিশের দাম বাড়ছে তাতে সামনের বছর ইলিশের কেজি হাজার ছোঁবে।’
তাই শুনে বঙ্কিমমাস্টার ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ইয়েস চাচা’।
বঙ্কিমমাস্টার চলে যায়। কিন্তু কানে লেগে যায় কথাটা। বজলুর থেকে বিজু তাই চাচাটা ঠিক আছে। কিন্তু তার আগে মাস্টার যেটা বলে গেল, কী সেটা? বিজুর জগৎটা এমনিতে খুব ছোট। সকালে উঠে আড়তে যাওয়া, মাছ আনা, মাছ বিক্রি করে বাড়ি ফেরা। ঘরে টিভি নেই, রেডিয়ো নেই। একটা মেয়ে ছিল, বিয়ে দিয়েছে অনেক দিন। সন্ধেয় মাঝে মাঝে কেবল বাড়ি লাগোয়া সুবল মাস্টারের বাড়িতে যায়। সেই সুবাদে বিজু বোঝে, কথাটা আর যা-ই হোক বাংলা নয়। ইংরেজি। বিজুর ভাষায় ‘ইনজেরি’। কিন্তু ওটা ভাল না মন্দ?
বঙ্কিমমাস্টার চলে যেতে পাশে বসা পবনকে শুধোয় বিজু। তবে সরাসরি নয়। একটু কায়দা করে।
—বঙ্কিমমাস্টার লোকটা যেন কেমন, তাই না পবন?
—কেন ভালই তো!
—না, বড় ঠেস দিয়ে কথা বলে।
—কী রকম?
—ওই তো একটু আগে বলল না। ঠিক শুনতেও পেলাম না, ইজিস না ইয়েস কী যেন!
পবনের বিদ্যেও বিজুর চেয়ে বেশি নয়। আর ও-ও বিজুর মতোই ঘরকুনো। তাই মানে করার দায়িত্বে যায় না ও। ‘হ্যাঁ ওরা সব একটু কী রকমই হয়’ বলে সাঁটে কাজ সারে।
ইয়েসের ভূত কিন্তু বিজুর মাথায় ভাল রকমই চেপেছে। দুপুরে বাড়িতে এসে ভাত খেতে খেতে বউকে শুধোয় তুমি তো অনেক কথা জান। একটা ইনজেরি শব্দের মানে বলো তো?
—কী ইনজেরি গো?
—বলো তো ইয়েস মানে কী?
—এটা তো খুব সহজ। ইয়েস মানে পায়েস।
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
—না পায়েস হলে তো কথাটা দাঁড়ায় না। আচ্ছা দাঁড়াও খাওয়া হলে সুবলমাস্টারকে শুধিয়ে আসি।
সুবলমাস্টার হল বিজুর সকল কাজের পরামর্শদাতা। বিজু খুব মানে ওকে। বউ অবশ্য বলে, ‘মাস্টার তোমাকে নিয়ে রঙ্গ করে।’ তবে বিজু মানে না সে কথা। মনের কথা খুলে সুবলমাস্টারের কাছেই বলা যায়।
সুবলমাস্টার উঠোনে বসে কঞ্চি কেটে ছিপ তৈরি করছিল। মাছ ধরার বড্ড শখ সুবলমাস্টারের। বিজু উঠোনে উঁকি দিতেই হাঁক পাড়ে। —বিজু যে! কী খবর? খাওয়াদাওয়া হয়ে গেল?
—তা হল!
—কোনও সমস্যা মনে হচ্ছে!
—সমস্যা মানে! আচ্ছা মাস্টার, ‘ইয়েস’ কথাটার মানে কী?
সুবলমাস্টারের মাথায় বদ রসিকতা ভর করে। মুখটা গম্ভীর করে বলে, ‘কে বলেছে কথাটা?’
সুবলমাস্টারের মুখ দেখে বিজু বোঝে, ‘ইয়েস’ নিয়ে ওর অনুমানটা মিথ্যে নয়। মাস্টারের দিকে চেয়ে বলে বঙ্কিমমাস্টার। কেন কথাটার মানে কী?
সুবলমাস্টারের গম্ভীর মুখে গম্ভীর উত্তর —ও মানে আমি মুখে আনতে পারব না, বিজু!
—কেন, খুব খারাপ বুঝি?
—খারাপ বলে খারাপ!
—তাও শুনি। বিজু টের পায় ওর মাথায় রক্ত উঠছে।
সুবলমাস্টারের মুখ আরও গম্ভীর বঙ্কিম শিক্ষিত লোক, তোমাকে এমন বাজে কথা বলে দিল!
বিজু বলে —মাস্টার, মানেটা কি তা হলে গরুগাধা জাতীয় কিছু?
—কিছুটা সে রকম, তবে আরও খারাপ কথাটা।
বিজু আর ঘাঁটায় না। বিরস মুখে বাড়ি ফেরে। মানেটা, যে কথাটা বলেছে, তার কাছ থেকেই জানবে বিজু। একটা হেস্তনেস্তও করবে। গায়ে শক্তি তো কম নেই ওর। বঙ্কিমমাস্টারের ওজন তো মেরেকেটে পঁয়তাল্লিশ কেজি।
সন্ধেতে ছাপাখানার গলির মুখেই বঙ্কিমমাস্টারকে পেয়ে গেল মাস্টার, একটু আড়ালে আসেন, বলে বিপুলের চায়ের দোকানের পিছনে নিয়ে এল। নিয়ে এসে সরাসরি প্রশ্ন সকালে অমন একটা খারাপ কথা বললেন কেন আমাকে?
—কী বলো তো? তোমার সঙ্গে তো তেমন...
—কেন, মনে পড়ছে না? আমি বললাম ইলিশের কেজি পরের বার হাজার ছোঁবে, তখন আপনি...
—কী তখন?
—কেন বললেন না, ইয়েস চাচা!
—তো?
—এত বড় খারাপ কথাটা আমাকে বলতে পারলেন!
—কেন তোমাকে তো সকলেই চাচা বলে বিজু। আমি নতুন কী...
—না না ওটা না। ইয়েস, ইয়েস। ইয়েস বলতে পারলেন আপনি!
এ বার হাসিতে ফেটে পড়ার জোগাড় বঙ্কিমমাস্টারের। বিজু, ইয়েস —ইয়েস মানে কী তুমি সত্যিই জানো না?
জানি বইকী! সুবলমাস্টার আমাকে বলেছে। খুব খারাপ কথা এটা। মুখে আনা যায় না, মানেটা নাকি এতটাই খারাপ।
সুবলের বদ রসিকতার রোগটা দেখছি আজও গেল না। বঙ্কিম খোলসা করে বিজুকে বুঝিয়ে দেয় ইয়েস কথার মানে।
এ বার বিজুর কী করা উচিত? সুবলমাস্টারকে গিয়ে ধরা? কেননা আসল হেয় তো ওকে সুবলমাস্টারই করে দিল! কিন্তু বিজু ভাবল অন্য কথা। সন্ধেয় মসজিদের পাশের ইস্কুলে ছেলেবুড়ো সক্কলকে পড়ায়। ওখানে যদি...। আজও সারা দিনের দুর্গতিটা তো লেখাপড়া না জানার জন্যই। বিজু মনস্থির করে ফেলে। তার পর সন্ধেয় গুটিগুটি পায়ে হাজির হয় মসজিদের পাশের ইস্কুলটায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.