আনন্দবাজারে মুখ খুললেন কলঙ্কিত ডার্বির সেই রেফারি
‘এ বার তো আমি ছিলাম না, তা হলে বিতর্ক কেন’
তিপ্পান্ন মিনিটে ইস্টবেঙ্গল বক্সে টোলগের শট যখন ওপারার হাতে লাগল, তখন তিনি যুবভারতী থেকে ১৯২৪ কিমি দূরে। আমদাবাদের মাঠে। সিটি পুলিশ টিমের জার্সি গায়ে স্টপারে দলের রক্ষণ আগলাচ্ছেন।
টোলগেরা যখন ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে তখন তিনিও জিরোচ্ছিলেন ঘরোয়া লিগের খেলায় সেন্ট্রাল স্পোর্টসকে ১২-১ গোলে হারানোর তৃপ্তি নিয়ে। ল্যাপটপ খুলে সবে মাত্র জানতে পেরেছেন কলকাতায় ডার্বি ম্যাচ ড্র। সেখানেও পেনাল্টি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক।
ঠিক সেই সময়েই আনন্দবাজারের ফোন। অভিমানের সুরে হাসতে হাসতে বিষ্ণু চৌহানের প্রতিক্রিয়া, “আজ তো আমি রেফারি ছিলাম না। তা হলে আবার বিতর্ক কেন?”
পরক্ষণেই সামলে নিলেন ৬২ দিন আগে বিতর্কিত ডার্বি ম্যাচের রেফারি। বললেন, “সন্তোষ দেশের অন্যতম সেরা রেফারি। খেলা তো দেখিনি। রিপিট টেলিকাস্টে দেখব, বল হাতের কাছে গিয়েছে না হাত বলের কাছে?”
‘কাহানি মে টুইস্ট’ এল এর পরে। অবাক করে দিয়ে গুজরাত পুলিশের ‘টাফ কপ’ বিষ্ণু বললেন, “ভারতীয় ফুটবলে আমার প্রিয় ফুটবলার ওডাফা। ওর স্কিল দু’চোখ ভরে দেখতে হয়। আজ গোল পায়নি? নবি খেলেছে? সুস্থ আছে তো?”
৯ ডিসেম্বর ২০১২ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
মনে করিয়ে দিতে হল দিন কুড়ি আগে তাঁকে দেওয়া তাঁর সেই ‘প্রিয় ফুটবলার’-এর অভিশাপ-“আমি কিছু করিনি। ওই রেফারি মিথ্যা বলে আমার জীবন সাময়িক জটিল করেছেন। ঈশ্বর ওকে বা ওর স্ত্রী-সন্তানকে সাজা দেবেন।”
ঈশ্বরে বিষ্ণুরও অগাধ আস্থা। তাঁর ফোনের ‘রিং টোন’ “এ তো সচ্ হ্যায় কি ভগবান হ্যায়।” কাটা কাটা শব্দে অন্য প্রান্ত থেকে এ বার জলদগম্ভীর কণ্ঠে বিষ্ণুর উত্তর, “মা দুর্গার কাছে আমি পরিষ্কার। কোনও মিথ্যা বলিনি। কী স্বার্থ আমার? সে দিন ওটা লাল কার্ডই ছিল। আমি সাহস রাখি। ‘ডরপোক’ নই।”
বিয়াল্লিশ বছরের জীবনে ১৪ মরসুম গুজরাতের হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলেছেন বিষ্ণু। দেশের হয়ে অংশগ্রহণ করেছেন বিশ্ব পুলিশ মিটেও। পেশাগত এবং পারিবারিক জীবনের মাঝে তাঁর বিনোদন স্রেফ ফুটবল। রেফারিং শুরু ১৯৯৯-এ। আই লিগ খেলাচ্ছেন ছ’বছর। আদর্শ একদা বিশ্বসেরা ইতালীয় রেফারি পিয়েরলুইজি কলিনা। দক্ষ রেফারি হিসাবে সুনাম থাকায় এ বারের ফেড কাপ ফাইনালে ডেম্পো-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে বাঁশি মুখে নেমেছিলেন বিষ্ণু। ৯ ডিসেম্বরের ভেস্তে যাওয়া ডার্বির পর গোটা দেশের প্রচারমাধ্যমের একটা বড় অংশ তাঁকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিল। কী ভাবে সে সব সামলালেন? এ বার খানিকটা বিরক্ত। বিষ্ণু চৌহান বললেন, “ফুটবলের নিয়ম মেনে লাল কার্ড দেখিয়েছি। এতে সামলাবার কী আছে? তার পরেও তো আই লিগে পুণেতে দু’টো, দিল্লিতে তিনটে ম্যাচ খেলালাম।”
ফের যদি যুবভারতীতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ আসে? পুলিশের গলায় এ বার তারুণ্যের আবেগ। বললেন, “ফের একটা ডার্বি ম্যাচে রেফারিং করতে মুখিয়ে রয়েছি। ওই ম্যাচটা তো শেষ করতে পারিনি। ভবিষ্যতে বড় ম্যাচ খেলালে শেষ করেই মাঠ ছাড়ব।”
কলকাতায় ডার্বি ম্যাচ করতে নেমে তখন পা কাঁপবে না? শুদ্ধ ইংরেজিতে জোড়াসাঁকোর নোবেলজয়ীকে ধার করে বিষ্ণু চৌহান বলতে শুরু করলেন, “হোয়্যার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার অ্যান্ড দ্য হেড ইজ হেল্ড হাই...।”
অন্য ডার্বি অন্য বিতর্ক
প্রসঙ্গ দর্শক
ডার্বির ৮৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দর্শক। সংগঠক মোহনবাগানের হিসেব, এক লক্ষ দশ হাজারের স্টেডিয়ামে দর্শক হয়েছিল পঁচিশ হাজার। আগের ৯ ডিসেম্বরের ডার্বিতে দর্শক হয় এক লক্ষ। টিকিটের দাম ছিল ৫০ ও ৭০ টাকা। এ বার টিকিটের দাম ২০০, ৩০০, ৪০০ টাকা।
এখানকার যা আর্থিক অবস্থা তাতে দুশো, চারশো টাকার টিকিট করলে এ রকমই দর্শক হবে।
ট্রেভর মর্গ্যান, ইস্টবেঙ্গল কোচ
আমি এরপর সংগঠকদের অনুরোধ করব অন্তত ৫০ ও ১০০ টাকার টিকিট করার।
মদন মিত্র, ক্রীড়ামন্ত্রী
দামের জন্য দর্শক আসেনি মানতে রাজি নই। টিকিট না কেটে কেউ মাঠে ঢুকতে পারেনি। এটাও লোক না হওয়ার অন্যতম কারণ।
অঞ্জন মিত্র, মোহনবাগান সচিব
প্রসঙ্গ পেনাল্টি
ম্যাচের ৫৩ মিনিটে টোলগের শট ওপারার হাতে লেগে বাইরে চলে যায়। পেনাল্টি দেননি রেফারি। ফিফার ১২ নম্বর ধারায় রয়েছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে হাতে বল লাগালে তবেই পেনাল্টি। প্রশ্ন উঠেছে, ওপারা কি ইচ্ছে করে হাত লাগিয়েছিলেন?
পরিষ্কার পেনাল্টি। আশা করি পরের বার অন্তত পেনাল্টিটা পাব।
করিম বেঞ্চারিফা, মোহনবাগান কোচ
আমি উল্টো দিকে ছিলাম। সামনে ফুটবলাররা ছিল। বুঝতে পারিনি।
ট্রেভর মর্গ্যান, ইস্টবেঙ্গল কোচ
ওপারা ইচ্ছাকৃত ভাবে হাত লাগায়নি। তাই পেনাল্টি দেয়নি।
এ কে মামুকোয়া, ম্যাচ কমিশনার
ইস্টবেঙ্গলে যখন পেনাল্টি প্র্যাক্টিস করতাম, তখন ওপারা কিপিং করত। আমি মোহনবাগানে চলে এলেও ওপারা অভ্যাসটা ছাড়তে পারেনি।
টোলগে ওজবে, মোহনবাগান ফুটবলার

ছবি: উৎপল সরকার




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.