|
|
|
|
|
পেনাল্টিটা ছিল না, তবু দু’গোল
দিতে পারত ওডাফারা
চুনী গোস্বামী |
|
মোহনবাগান: ০
ইস্টবেঙ্গল: ০ |
৯ ডিসেম্বর, কলকাতা ফুটবলের কলঙ্কময় এক দিন দেখেছিলাম।
৯ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা ফুটবলের দুই সেরা কোচের মস্তিষ্ক-যুদ্ধ দেখে রাখলাম!
মাঝে শুধু দু’টো মাস। ভাবতে পারিনি বড় ম্যাচের প্রেক্ষাপটে এত অদলবদল ঘটে যেতে পারে। এত দিন জানতাম, বড় ম্যাচ মানে ‘প্রেশার’ ম্যাচ। যেখানে ফুটবলারদের চাপের তপ্ত কড়াইয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। ভাবতে পারিনি, সেখানে অহেতুক হাতাহাতি, গুঁতোগুতি থাকবে না। থাকবে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ফুটবল। থাকবে করিম বনাম মর্গ্যানের মগজাস্ত্রের ধুন্ধুমার লড়াই। কত দিন যে এমন মন ভাল করে দেওয়া ম্যাচ দেখিনি ডার্বিতে!
অনেকে পাল্টা প্রশ্ন তুলবেন, গোলই তো হল না। তা হলে ভাল ম্যাচ কীসের? মানছি, গোল হয়নি। কিন্তু এত ভাল ট্যাকটিক্যাল গেমও ইদানীং দেখিনি। গ্রাউন্ড পাসিং, মেহতাবদের জায়গা বদল, বল কন্ট্রোল মর্গ্যানের টিম কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে হৃদয় জিতে নিয়েছে। মোহনবাগান আবার গোলের সুযোগ পেয়েছে বেশি। নিজেদের বক্সে ওপারার হ্যান্ডবল নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হচ্ছে। আমি মনে করি, ওটা অনিচ্ছাকৃত। তাই রেফারির পেনাল্টি দেওয়ার প্রশ্ন ছিল না। ওটা বাদ রেখেই বলছি, মোহনবাগান প্রথমার্ধেই দু’গোলে এগিয়ে যেতে পারত। ওডাফার যে ফ্রি কিকটা পোস্টে লাগল, দশ বারের মধ্যে ন’বার ওটা গোলে থাকবে। টোলগেরও বাঁ পায়ের একটা শট বারের উপর দিয়ে উড়ে গেল। এ ছাড়াও একটা আত্মঘাতী গোল প্রায় হয়ে যাচ্ছিল। ইস্টবেঙ্গলের অর্ণব মণ্ডলের দোষে।
করিমকে দেখলাম চিন্তাভাবনার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিও পাল্টাচ্ছে। শুরুতে ৪-৩-৩। ওডাফা, টোলগের সঙ্গে মণীশ ভার্গব। মানে, করিম তখন গোল করে জিততে চাইছিল। মাঝে ৪-৪-২। কারণ, ওই সময় মাঝমাঠের দখল আস্তে আস্তে নিয়ে নিচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। শেষে ৪-৫-১, কারণ ততক্ষণে করিমের বোঝা হয়ে গিয়েছে, জেতা যাবে না। বরং ড্র করে এক পয়েন্ট তুলে নেওয়া ভাল। |
আই লিগে এখন |
প্রথম তিন |
শেষ তিন |
|
ম্যাচ |
জয় |
পয়েন্ট |
|
ম্যাচ |
জয় |
পয়েন্ট |
ইস্টবেঙ্গল |
২০ |
১২ |
৪০ |
এয়ার ইন্ডিয়া |
১৬ |
৩ |
১৫ |
চার্চিল |
১৭ |
১২ |
৩৮ |
ইউনাইটেড সিকিম |
১৯ |
১ |
১২ |
ডেম্পো |
১৮ |
১০ |
৩৫ |
মোহনবাগান |
১৫ |
১ |
৬ |
|
মর্গ্যান সাহেবও তিনটে জিনিস ঠিক করেছিলেন। টোলগে-ওডাফাকে জায়গা দেবেন না। দেননি। নবি-মাথানি সমৃদ্ধ মোহনবাগান উইংকে ভোঁতা করতে ইসফাক আহমেদকে ব্যবহার করবেন। আর তিন, মেহতাব যেমন ডিফেন্স করবে, তেমনই ফুলঝুরির মতো পাস বাড়াবে ফরোয়ার্ডদের জন্য। আমার মনে হয়, আজ যদি টোলগে আরও সক্রিয় হত, এত ফর্মেশন ভাঙাভাঙিতে যেতে হত না বেঞ্চারিফাকে। মুশকিল কী জানেন, টোলগে উঁচু দরের স্ট্রাইকার নয়। ভাল স্ট্রাইকার বল ঠিকঠাক রিসিভ করবে, ছোট-ছোট ড্রিবল করবে, নিখুঁত ‘ওয়াল’ খেলবে সঙ্গী স্ট্রাইকারের সঙ্গে। টোলগে এ সব পারে না। আজ অনেক সময়ই দেখছিলাম, ওডাফার পায়ে বল, ইস্টবেঙ্গলের তিন জন ওকে ঘিরে ধরেছে, আর ওডাফা ওয়াল খেলার জন্য লোক খুঁজে বেড়াচ্ছে। এটা কেন হবে?
তবু বলব, মোহনবাগান চলতি মরসুমের সেরা ফুটবলটা আজ খেলেছে। বিশেষ করে উলটো দিকে মর্গ্যানের মতো ধুরন্ধর কোচ যখন আছে। আছে মেহতাব হোসেনের মতো ফুটবলার। ডার্বিতে দু’জনকে দেখে মুগ্ধ হলাম। ইস্টবেঙ্গলের মেহতাব। মোহনবাগানের ইচে। মেহতাব রক্ষণে নেমে এসে ওপারার সঙ্গে জুটি বেঁধে ওডাফাকে ট্যাকল করেছে। তিরিশ-চল্লিশ গজের ফাইনাল পাস বাড়িয়েছে চিডির জন্য। চিডি পারেনি কারণ, ইচে ওকে নড়তে দেয়নি। ইচে পরিচ্ছন্ন ট্যাকল করল, জায়গা ছেড়ে একবারও ওঠেনি। কারণ জানত, টিমের হাফ লাইন ভাল নয়। উঠে গেলে, চিডিরা তরতরিয়ে বক্সে ঢুকে পড়বে। একটা জিনিস দেখে বরং আশ্চর্য হলাম। দ্বিতীয়ার্ধে মর্গ্যান সাহেব প্রতিপক্ষকে বাগে পেয়েও অলআউট গেলেন না কেন? মণীশ ভার্গব, মণীশ মাথানিদের নিয়ে তৈরি মোহনবাগান মাঝমাঠের তো তখন দম বেরিয়ে গিয়েছে। রাইট ব্যাকে দাঁড়িয়ে নির্মল ছেত্রী শুধু বল ওড়াচ্ছে!
যা-ই হোক, দু’টো টিমের সম্ভাব্য ভাগ্য দিয়ে ম্যাচ রিপোর্টটা এ বার শেষ করি। যাঁরা মনে করছেন, ডার্বি থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ায় চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ইস্টবেঙ্গল পিছিয়ে পড়বে, ভুল করছেন। চার্চিলের সঙ্গে মর্গ্যানের টিমের ফারাক যতই আজকের পর দু’পয়েন্টের হোক, মনে রাখতে হবে চার্চিলকে দু’বার খেলতে হবে মোহনবাগানের সঙ্গে। আর দু’বারে চার্চিল দু’বারই জিতবে না। বরং চিন্তা হচ্ছে, মোহনবাগান নিয়ে। আমরা এখন ১৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট। ইস্টবেঙ্গল নাহয় আবার জীবন পেয়ে যাবে, কিন্তু আমরা শেষে বাঁচব তো?
|
মোহনবাগান: শিল্টন, আইবর, নির্মল, ইচে, নবি (সুশান্ত), ডেনসন, জুয়েল (স্নেহাশিস), মৈথানি, মনীষ ভার্গব, ওডাফা, টোলগে (কুইনটন)।
|
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, অর্ণব, ওপারা, খাবড়া, সৌমিক, পেন, মেহতাব, লালরিন্দিকা, ইসফাক (সঞ্জু), চিডি, বলজিৎ (লোবো)। |
|
|
|
|
|