রেকর্ড প্রণবের
সাত মাসে তিন জনকে ফাঁসিকাঠে
পথ নিয়েছেন সাত মাসও হয়নি। কিন্তু এই স্বল্প সময়েই তিন জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
অতীতে রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নিয়ে মাত্র সাত দিনের মধ্যে এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের আর্জি খারিজ করেছিলেন শঙ্করদয়াল শর্মা। কিন্তু তাঁকে ছাপিয়ে গেলেন প্রণববাবু। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর নভেম্বরে প্রথমে মুম্বই সন্ত্রাসের আসামি মহম্মদ আজমল আমির কসাবের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেন তিনি। আর এ বার সংসদ হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী আফজল গুরু। গত মাসের পাঁচ তারিখ আরও এক জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ঘটনাটি নিয়ে অবশ্য হইচই হয়নি। স্ত্রী ও মেয়েকে নৃশংস ভাবে খুন করার জন্য সাইবানা নিঙ্গাপ্পা নাটিকার নামে কর্নাটকের বেলগাঁওয়ের ওই ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।
তবে প্রণববাবুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির ভূমিকা এ ক্ষেত্রে সীমিত। আফজলকে ফাঁসি দেওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত একান্তই সরকার তথা কংগ্রেসের। সেই সিদ্ধান্ত প্রণববাবুর সিলমোহর দেওয়াটাও প্রথামাফিক। প্রণববাবু হয়তো কিছুটা কালক্ষেপ করতে পারতেন। অথবা সরকারকে এক বার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে দেখতে বলতে পারতেন। বদলে প্রণববাবু যেটা করেছেন, সেটাই তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত। একদা এই ঝানু রাজনীতিক ফের বুঝিয়ে দিলেন, সাংবিধানিক পদের ক্ষমতা দেখিয়ে ‘অতিসক্রিয়তায়’ বিশ্বাসী নন তিনি। সরকারের সঙ্গে সংঘাতও তাঁর পথ নয়। বরং তাঁর নিজের কথাতেই, ‘ম্যান অফ সিস্টেমস’ তিনি।
যদিও রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রণববাবু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দল এমনকী খোদ কংগ্রেসের কিছু নেতার ধারণা ছিল উল্টো। যাঁরা মনে করছিলেন, রাইসিনা হিলসে পৌঁছে সরকারকে বেগ দিতে পারেন প্রণববাবু, সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যেতে পারেন। তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পি চিদম্বরম অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে তার অনেক কিছু রাতারাতি বদলে ফেলেন। অনেকের আশঙ্কা ছিল, এ জন্য মোক্ষম সময়ে বেঁকে বসতে পারেন নতুন রাষ্ট্রপতি।
কিন্তু আজ তাঁদের সকলকেই ফের ভুল প্রমাণ করলেন প্রণববাবু।
যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কসাব ও আফজলের মৃত্যুদণ্ডের আর্জি খারিজ করলেন প্রণববাবু, তাতে পরিষ্কার যে সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করছেন প্রণব। ১০ জনপথের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ বলছেন, গোটা চিত্রনাট্য রচনাতেও তিনি শরিক। এমনকী ঠিক কোন সময়ে কসাব বা আফজলের ফাঁসি হতে পারে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি নির্ধারণেও প্রণববাবুর ভূমিকা রয়েছে। ফাঁসির সিদ্ধান্তটি নিয়ে যে ভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করেছে সরকার, তার মধ্যেও রাষ্ট্রপতির ‘চাণক্য বুদ্ধি’র স্পষ্ট ছাপ দেখছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক কালে প্রণববাবুর সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধী যে ভাবে বারে বারে তাঁর কাছে গিয়েছেন, তাতে এঁদের কথা একেবারেই ফেলে দেওয়া যায় না।
আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার সুপারিশে প্রণববাবু সায় দেওয়ায় আরও একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। তা হল, এই সিদ্ধান্ত নিতে আসলে দেরি করেছে কংগ্রেস তথা সরকারই। কারণ আফজলকে ফাঁসি দেওয়ার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দিয়েছিল ২০০৫-এ। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম। ২০০৬-এর অক্টোবরে তাঁর কাছে মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি জানিয়েছিলেন আফজলের স্ত্রী তবসুম গুরু। কংগ্রেসের একাংশের দাবি মতো যদি ধরেও নেওয়া হয় যে কালাম ফাঁসির পক্ষে ছিলেন না, তা হলেও ২০০৭-এর জুলাইয়ের পর আফজলকে ফাঁসি দিতে পারত সরকার। কারণ তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন কংগ্রেস মনোনীত প্রতিভা পাটিল। তাঁকে বাছাইয়ের নেপথ্যে ছিলেন সনিয়া গাঁধী। ফলে সনিয়া-মনমোহন আফজলকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তা নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতেন না প্রতিভা। এতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, আফজলকে ফাঁসি দেওয়ার সময় নির্বাচন একেবারেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। দ্রুত সায় দিয়ে এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এর জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতা যশবন্ত সিনহা পর্যন্ত তাঁর প্রশংসা করে বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি প্রমাণ করলেন, দেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই।”

রজ্জুর ফাঁসে

মকবুল বাট

সতবন্ত সিংহ

সুখদেব সিংহ

ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়

আজমল কসাব

আফজল গুরু


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.