|
|
|
|
সারা রাত পায়চারি, খাবার মুখে তোলেননি আফজল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দীর্ঘ আট বছর তিনি অপেক্ষায় কবে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। বলেছিলেন, “জেলের মধ্যে জীবনটা নরক হয়ে উঠেছে। সরকারকে বার বার বলেছি, দেরি না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। এ ভাবে আর মরে বেঁচে থাকতে চাই না।” তবু শুক্রবার সন্ধ্যায় তিহাড় জেলের এক কর্তা এসে যখন জানালেন, কালই তাঁর ফাঁসি হবে, চমকে উঠলেন তিনি ২০০১ সালে সংসদে জঙ্গি হানায় অন্যতম অপরাধী আফজল গুরু।
তিহাড়ের পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, আফজল এক রকম নিশ্চিত ছিলেন, ভারতীয় রাজনীতির জেরে হয়তো কোনও দিনই শেষ পর্যন্ত ফাঁসি হবে না তাঁর। আফজলের পুরনো সাক্ষাৎকারেও সে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে তিনি বলেছিলেন, “কংগ্রেস তার দুই মুখে জোড়া খেলা খেলছে। কোনও দিনই ওরা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবে না।”
২০০১ থেকেই এই জইশ নেতার ঠিকানা তিহাড়ের ৩ নং জেল। দিনের বেশির ভাগ সময়টা একা-একাই কাটাতেন। সঙ্গী বলতে ছিল একটা রেডিও আর বই। জেলের কুঠুরিতেই বই-এর দারুণ সংগ্রহ ছিল আফজলের। মাঝে এক সময় অনুরোধ করেছিলেন, মৃত্যুদণ্ড হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁকে কাশ্মীর জেলে থাকতে দেওয়া হোক। কিন্তু কোনও দিনই সে আবেদন মানা হয়নি। গত কাল ফাঁসির কথা শুনে প্রথমটা চমকালেও, পরমুহূর্তেই একেবারে শান্ত হয়ে যান। আপাত ভাবে সুস্থিত দেখাচ্ছিল তাঁকে। প্রত্যক্ষদর্শী তিহাড়ের কর্তাদের মুখেই জানা গেল এ সব কথা। গত কাল সন্ধে ৬টা নাগাদ ডিআইজি সুধাকর তাঁকে প্রথম খবর দেন, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। জানতে চান, তাঁর শেষ ইচ্ছের কথা। কিছু বলেননি আফজল। শুধু একটা কোরান চেয়েছিলেন।
শুধু তা-ই নয়, পছন্দের কোনও খাবার খেতে চান কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। এ বারও নিরুত্তর আফজল। দশ বছরেরও বেশি তিহাড়ে রয়েছেন তিনি। এত দিন তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিহাড়ের অনেকেই। রোজ যা খেতেন, সেই মতো ডাল, রুটি, সব্জি দেওয়া হয় আফজলকে। সে সব ছুঁয়েও দেখেননি তিনি।
আজ ভোর পাঁচটা নাগাদ জেলের এক কর্তা কারারক্ষীকে গিয়ে বলেন, আফজলকে ঘুম থেকে তুলতে। রক্ষী জানান, সারা রাতে দু’চোখের পাতা এক করেননি আফজল। তিন গ্লাস জল খেয়েছেন। ১৬ ফুট বাই ১২ ফুট কুঠুরিটাতে রাতভর পায়চারি করেছেন আফজল। আর হাতে তসবি জপে গিয়েছেন।
|
বুঝতে পারছি মানুষের মনে হয়তো কিছু ক্ষোভ রয়েছে। এই পরিস্থিতিকে অনেকেই রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করতে পারেন। অনুরোধ করছি, শান্ত থাকুন।
ওমর আবদুল্লা |
|
আফজলের কুঠুরির পিছন দিকে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। দু’দিন আগে থেকেই আশপাশ ফাঁকা করে দেওয়া হয়। তিহাড়ের কাছাকাছি কোনও ফাঁসুড়ে ছিল না। তাই বাইরে থেকে আনানো হয় তাঁকে। আফজল যেখানে ছিলেন, জেলের সেই অংশের সুরক্ষা ব্যবস্থা-ও জোরদার করা হয়। এমনকী কবর দেওয়ার জন্য গর্তটাও আগে থেকেই খুঁড়ে রাখা হয়েছিল। সকালে চা খেতে দেওয়া হয় আফজলকে। মুখে তোলেননি। বরং নমাজ পড়েন। এর পর সাড়ে সাতটার সময় ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয় আফজলকে। জেলের ডিরেক্টর জেনারেল বিমলা মেহরা বলেন, “তাঁর শরীর ভাল ছিল।” ফাঁসিকাঠে তোলার আগে আগে ডাক্তাররা তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত, ম্যাজিস্ট্রেট, এক চিকিৎসক, জেলের কিছু উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তি এবং মৌলবী-সহ আট জন। মঞ্চে ওঠার পর আবারও জানতে চাওয়া হয়, তাঁর যদি কোনও শেষ ইচ্ছে থেকে থাকে। আফজল তখনও চুপ। মুখে কালো টুপি পরিয়ে দেন ফাঁসুড়ে। বলেন, সরকারের ইচ্ছেতেই তিনি সব কিছু করছেন। কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা তাঁর নেই।
এর পরেই ফাঁসি দেওয়া হয়। সাত মিনিট পরে তাঁর দেহ নামানো হয়। উপস্থিত ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, আফজল মৃত। ধর্ম-আচার মেনে জেল চত্বরে তাঁর ৩ নং কুঠুরির কাছেই কবর দেওয়া হয় আফজলকে।
আফজলের দেহ নিতে চেয়েছে তাঁর পরিবার। সে আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে সরকার। জইশ-জঙ্গি হয়ে ওঠা কাশ্মীরের ফলব্যবসায়ী আফজল বার বার চেয়েছিলেন, কাশ্মীরে ফিরতে। সে আর হল না। |
|
|
 |
|
|