|
|
|
|
কোলে উঠতে চান ২০০ কেজির বউ |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
পাত্রীর দাবি একটাই, “আমার বর যেন আমায় কোলে তুলে নিয়ে আদর করে।” নিজের শর্তের কথা জানিয়ে নিজেই প্রায় অট্টহাস্য করে উঠলেন ‘হেভিওয়েট’ পাত্রী সারান আলেকজান্ডার। পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনের ভাষায়: পাত্রী ৬ ফুট। ওজন ২০৫ কিলো। নামী-দামী ক্রীড়াবিদ। দেশে-বিদেশে ঘোরেন। নাম উঠেছে গিনেস বুকেও। ডিভোর্সি, তিন সন্তানের জননী। সন্ধান করছেন মনের মতো পাত্র। পাত্রের ওজন শ’দেড়েক বা তার কম হলেও চলবে। কিন্তু উচ্চতা সাড়ে ৬ ফুটের কম হলে চলবে না।
নিজের বিয়ের বিজ্ঞাপনের খসড়া নিজেই বানিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন সারান আলেকজান্ডার। সেই হাসিতে এক দরাজ দিল মহিলার জীবন সংগ্রাম যেমন লুকিয়ে রয়েছে, তেমনই রয়েছে চাপা দুঃখ। তবে তাঁর জীবন দর্শনই হল, ‘নো রিগ্রেট। ওনলি হ্যাপিনেস।” তাই প্রায় পঞ্চাশে পৌঁছেও নতুন করে ঘর বাঁধতে চান বিশ্বের সবচেয়ে ভারি মহিলা ক্রীড়াবিদ, মহিলা সুমোর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
ইংল্যান্ড থেকে দুই মহিলা সুমো কুস্তিগীর এই প্রথম বার অসম তথা ভারতে পা রাখলেন। সারানের সঙ্গী আমান্ডা উইলকক্স। ২০তম অসম শিল্প ও বাণিজ্যমেলার বিশেষ আকর্ষণ তাঁরা। গত বছর, এই মঞ্চেই এসেছিলেন বিশ্বের পয়লা নম্বর সুমো তারকা ব্যায়াম্বাজাভ উল্লামবায়ার ও চতুর্থস্থানে থাকা কেলি নেইটিং। |
|
সারান ও আমান্ডার লড়াই। শনিবার গুয়াহাটিতে। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
আর আজ সন্ধ্যার লড়াইয়ে একে অন্যের সঙ্গে সমানতালে লড়ে গেলেন শেফিল্ডের সারান আর ইয়র্কশায়ারের আমান্ডা। একজনের বয়স ৪৮, অন্যজনের ৪৩। প্রথম জনের তিন সন্তানের বয়স যথাক্রমে ২৯, ২৭ ও ১২। দ্বিতীয়জন ইতিমধ্যেই ঠাকুমা হয়েছেন।
অন্য কোনও খেলায় না গিয়ে, সোজা, জাপানিদের মৌরসীপাট্টায় হানা দেওয়া কেন? সারানের সোজা কথা, “আসলে আমার সব ঢেকে যায় ওজনেই। উচ্চতা ৬ ফুট আর ওজন গড়ে দুশোর আশপাশে থাকে। আপনিই বলুন, আর কোন খেলায় এই ওজন নিয়ে নাম করতে পারতাম?” ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে তিন সন্তানকে মানুষ করার জন্য সুমো কুস্তির অবলম্বনটাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন ২০০৫ সাল থেকে। পরের বছরেই ২৫ জন কুস্তিগীরকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাল মিলিয়ে বাড়াতে থাকেন ওজন। তার সৌজন্যেই গত বছর ২০৫ কেজি ওজন-সহ বিশ্বের সবচেয়ে ভারি মহিলা ক্রীড়াবিদের গিনেস রেকর্ড। “কিন্তু ওজন মানেই ডায়াবেটিস আর হৃদরোগের ষোলো আনা সম্ভাবনা। তাই প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে ব্যয়াম বাড়াই। খাওয়া কমাই। অনেকটাই রোগা হয়েছি এক বছরে। এখন মাত্র ১৮০ কিলো!” সারান খেতে ভালবাসেন ভেড়া, স্যালাড, কলা। বেশি খান রাতে। গোটা দিনের খোরাকি মোটামুটি ৫ হাজার ক্যালোরি। কুস্তির পাশাপাশি তাঁর পেশা, শুনতে অবাক লাগলেও, বাচ্চা সামলানো। বলাই বাহুল্য, তাঁর চেহারা দেখে বাচ্চারা ভয়েই কাত, দুষ্টুমি করার প্রশ্নই নেই। তাঁর নিজের ছোট ছেলেও ইতিমধ্যে এস্তোনিয়ায় ছোটদের সুমোয় অংশ নিয়েছে।
তাঁর চেয়ে ইঞ্চি কয়েক বেঁটে, ১২৮ কিলো ওজনের আমান্ডা ডিস্কো ঠেকের বাউন্সার। পেশায় ও আকারে দৈত্যাকার হলেও তাঁর দিনের অবসর সময়টা কিন্তু নাতির সঙ্গে পুতুল খেলেই কেটে যায়। বড় খাওয়াদাওয়ার পালা সারেন দুপুরেই। জাপানিদের নিজস্ব এই কুস্তির প্যাঁচ শিখতে গত বছর জাপানে ছিলেন সারান। সুমোর দেবতা ইয়োকোজুনাকে দেখার মুগ্ধতা কাটেনি এখনও। তবে বেড়াতে গিয়ে তাঁর বড় সমস্যা, বিমানের ‘ইকনমি’ আসনে তিনি মোটেই আঁটেন না। ১৪ ফেব্রুয়ারি অবধি অসমে কাটিয়ে পরের লক্ষ্য, জার্মানি। মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ।
ভারতে প্রথমবার পা দিয়ে, বিমানবন্দর থেকে গুয়াহাটি অবধি রাস্তার দুই পাশে তাঁর দৈত্যাকার হোর্ডিং দেখে দিলখুশ হয়ে গিয়েছে। সারান মজা করে বলেন, ‘কাজিরাঙা যাওয়ার সুযোগ পেলে ভাল হত। হয়ত উদ্যোক্তারা ভয় পাবেন আমায় নিয়ে যেতে। আমি কিন্তু, হাতিতে চেপেছি আগে। উটের পিঠেও উঠেছি। হাতি-উট দুটিই কিন্তু এখনও সুস্থ।”
মণিরাম দেওয়ান ট্রেড সেন্টারে প্রথম দিনের লড়াই শেষ। দর্শকদের মনোরঞ্জন করা বিরাট কালো শরীরটা এ বার বিশ্রাম চায়। শেষবেলায় হাত নেড়ে বলে গেলেন, “পাত্র দেখতে থাকুন। এই দেশে হলেও চলবে। মনে রাখবেন, আমি বৃহদাকার হতে পারি, কদাকার নই। বিগ ইজ বিউটিফুল।” |
|
|
|
|
|