|
|
|
|
অন্যায় করে থাকলে ভোট দেবেন না, চ্যালেঞ্জে প্রাক্তন |
সন্দীপন চক্রবর্তী • বিশালগড় |
দু’হাতে দু’টো ইস্তাহার। একটা সিপিএমের, একটা কংগ্রেসের। জনতাকে দেখিয়ে বলছেন, “পড়ে দেখুন। যদি পিছিয়ে-পড়া মানুষের উন্নয়নের প্রকৃত অঙ্গীকার পান, ওদের ভোট দিন। যদি আমাদেরটায় পান, আমাদের ভোট দিন! সোজা কথা!” বক্তা মঞ্চ থেকে নামলে জোড়া ইস্তাহার আবার উঠে যাচ্ছে তাঁর সাদা অ্যাম্বাসাডরে।
“ডকুমেন্ট ছাড়া আমি কথা বলি না!” বিশালগড় বাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে অ্যাম্বাসডর থেকে নেমে
|
সমীররঞ্জন বর্মন |
বললেন সমীররঞ্জন বর্মন। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাটে সত্যিই পরিবর্তন এলে ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির মুখ্য দাবিদার। বললেন বটে। তবে একটু আগেই প্রমাণ দিয়ে এসেছেন, কাগজপত্র ছাড়াও তিনি কথা বলেন।
পোস্টাল ব্যালটে সরকারি কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে ত্রিপুরায়। নিজের কেন্দ্রের একটা জনসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়ে এসেছেন, “আপনাদের শান্তির জন্য একটা খবর দিচ্ছি। পোস্টাল ব্যালটের ট্রেন্ড দেখে বাম নেতাদের আত্মা বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে! ১৪ তারিখ আপনাদেরও এই ট্রেন্ডটা ধরে রাখতে হবে!” প্রসঙ্গত, পোস্টাল ব্যালট গোনা হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ভোট গণনার পরে। এখনই তার ট্রেন্ড জনসমক্ষে ঘোষণা করে দিচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী!
“প্রশাসনটার এরা যা হাল করেছে, চাপে রাখতে হয় আমাকে!” পরে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা। আসলে ঝানু রাজনীতিক। জনতার আস্থা জিততে সঙ্গে দু’দলের দু’টো ইস্তাহার নিয়ে ঘুরতে পারেন। আবার প্রশাসনকে চাপে রাখার কৌশলের পূর্ণ ব্যবহার জানেন! গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে নাকাল ত্রিপুরা কংগ্রেসে এখনও গ্রহণযোগ্য মুখ বলতে এই এক জনই। বিশালগড়ের মার্চেন্ট্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিলীপ দেবনাথের কথায়, “দাদা খুব কড়া ধাঁচের কিন্তু কাজের লোক। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দাদাই পারবেন প্রশাসনটা চালাতে।”
‘দাদা’ অবশ্য তাঁর পুরনো প্রশাসনের অতীত কীর্তির জন্যই সিপিএমের পয়লা নম্বর নিশানা। রাজ্যে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩-এর জোট সরকারের প্রথম চার বছর প্রয়াত সুধীর মজুমদারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় সুধীর বর্মণ ছিলেন পুলিশ ও বিচারমন্ত্রী। কংগ্রেস তখন দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত। বিদ্রোহ লেগেই রয়েছে। সেই সরকারের শেষ ১৩ মাস মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন বিশালগড়ের ‘দাদা’।
পুলিশমন্ত্রী থাকার সময় সুধীরবাবুদের পরিকল্পনায় সন্ত্রাস কী ভাবে মাত্রাছাড়া হয়েছিল, এত দিন পরেও তার সাল-তারিখ দিয়ে বই বার করে বাজারে নেমেছে সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে তারা নিশানায় রাখত প্রয়াত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়কে। তবে ‘দাদা’কে এখানে বিশেষ বিচলিত দেখাচ্ছে না। বলছেন, “আমি মোকাবিলা করতে তৈরি। মাই স্লেট ইজ ভেরি মাচ ক্লিয়ার! যদি অন্যায় করে থাকি, ভোট দেবেন না! এই সব অর্থহীন কথার পিছনে দৌড়লে নির্বাচন হয় না!”
সঙ্গে আরও সংযোজন, “কুড়ি বছরের বাম জমানায় ব্লু ফিল্ম আর নারী পাচারের শিল্প হয়েছে! আমরাও ক্ষমতায় ছিলাম। ব্লু ফিল্ম করিয়েছিলাম বলে একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারলে ভোটে দাঁড়াবই না!” বলতে বলতেই কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে-যাওয়া পথচলতি জনতার জন্য হাত কপালে উঠল সমীররঞ্জনের।
সেই ১৯৭২ সাল থেকে বিশালগড়েই দাঁড়াচ্ছেন। রেকর্ড নিয়ে জনতার সামনে তাঁর কথাও পরিষ্কার “আগে কখনও কখনও পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তার জন্য আমি ও আপনারা উভয়েই ভুক্তভোগী!” গত বারই সিপিএমের ভানুলাল সাহার (এখন ডেপুটি স্পিকার) কাছে হেরেছিলেন প্রায় ন’শো ভোটে। ভানুবাবুর মতোই দোকানে-বাড়িতে ঘুরছেন সমীরবাবুও। পুরনো কায়দায় ভোটটা করেন। সকালে স্নান সেরে লম্বা পুজো-পাঠের পর্ব পেরিয়ে তবেই শুরু হয় প্রচার।
ছেলে সুদীপ রায় বর্মন এখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। বড় ছেলে সন্দীপের ইটভাটা থেকে সম্প্রতি এনএলএফটি-র প্রচারপুস্তিকা, টাকাপয়সা নিয়ে উদ্ধার নিয়ে ভোটের আগে বাজার সরগরম হয়েছিল। পিতার প্রতিক্রিয়া, “কিছু বলতে চাই না। ওই ছেলে তো রাজনীতিই করে না! যারা করেছে, পরিণাম ভুগতে হবে!” বাংলা থেকে এসে সমীররঞ্জনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বিশেষ স্নেহভাজন কংগ্রেস নেতা মানসরঞ্জন ভুঁইয়া। মানসবাবু বলে গিয়েছেন, “সিপিএমের চেয়ে সন্ত্রাসবাদী দল ভারতীয় রাজনীতিতে আছে নাকি? তারা আবার সন্ত্রাসের কথা বলে কী?” মানসবাবুর পাশাপাশিই সমীরবাবু বিশেষ কৃতজ্ঞ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। ত্রিপুরায় এ বার এক জনও তৃণমূল প্রার্থী না-থাকার জন্য। আগরতলায় এসে তাঁর বাড়ির রান্নাঘরে ঢুকে ‘বৌদি’র সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে-যাওয়া মমতার সরকার চালানো নিয়ে কিছু অবশ্য বলতে চাইলেন না।
ফের মুখ্যমন্ত্রী হলে? “আবার দায়িত্ব পেলে আইন-শৃঙ্খলা ঠিক করব আগে!” ফের কপালে হাত উঠল সমীররঞ্জনের। যে আইনশৃঙ্খলার জন্য বামেদের কাঠগড়ায়, সেই আইনশৃঙ্খলাই ঘুরছে তাঁর মাথায়। |
|
|
|
|
|