মেলার মাঠে হোর্ডিং-পোস্টারে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-দ্বিজেন্দ্রলাল এমনকী জয় গোস্বামীও আছেন। কিন্তু তাঁদের টেক্কা দিয়েছেন আর এক কবি। তাঁর ‘মাটি’ কবিতাটির উদ্ধৃতির ছড়াছড়ি। কিছু নমুনা ‘মাটিকে ঘিরে জীবনস্বপ্ন / মাটিতে অহল্যা মা / মাটিকে ঘিরেই মাতঙ্গিনী / গর্জে ওঠে আম্মা..’. মঞ্চে এই কবিতার উদ্ধৃতি দিলেন নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কবিতাই কার্যত মাটি-উৎসবের ‘থিম-ভার্স’। শুধু চিত্রকর মমতা নন, কবি মমতাও মাটি-উৎসবের প্রাপ্তি বিশেষ।
|
পথ দুর্ঘটনায় সদ্যপ্রয়াত বাউলশিল্পী গৌরখ্যাপার স্ত্রী দুর্গাদি বাউল, কার্তিক দাস বাউল, নদিয়ার অর্জুন খ্যাপা, সাধন দাস বৈরাগ্য প্রমুখকে মঞ্চে সম্মানিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আপ্লুত দুর্গাদি বাউল বললেন, “আমার মমতা মা বাউলদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। আমাদের দুঃখের দিন শেষ।” হুগলির দৃষ্টিহীন বাউল-শিল্পী বিশ্বনাথ অধিকারী গান বেঁধে গাইলেন, “মা বলো আর আম্মা বলো তফাত কিছু নাই / মা, মাটি আর মানুষ আমরা যমজ ভাই।”
|
পাহাড় থেকে বারাসত হয়ে পানাগড়। ‘দিদি’র সঙ্গে ঘুরছেন বড়বাজারের রঞ্জন গুপ্তও। যেখানে দিদি, সেখানে তিনি। মাটি-উৎসবেও পসরা সাজিয়েছেন মমতার ছোট-বড় ছবি ও তাঁর মুখ-আঁকা চাবির রিং নিয়ে। দিব্যি আছি! পরপর উৎসব মানে নতুন-নতুন জায়গায় বেড়ানো এবং দলের প্রতি ভালবাসা প্রকাশেরও একটা সুযোগ। থ্যাঙ্ক ইউ দিদি--- বিক্রিবাট্টার ফাঁকে বললেন রঞ্জন।বিদেশ মন্ত্রক।
|
স্রেফ মা-মাটি-মানুষ নয়! রয়েছে আরও ‘ম’! গ্রামের পুকুরের পক্ষে উৎকৃষ্ট আধ কেজির জিয়ল পাঙাশ মাছ চাষের জন্য জোরালো সওয়াল করছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। মিষ্টিরও ছড়াছড়ি। ক্ষীরপাইয়ের কড়ায়-ভাজা গরম বাবরশা, বাঁকুড়ার মেচা আর কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়ার মধ্যেও জোর টক্কর। গরম আস্কে পিঠে ছাড়াও এ সব মিষ্টিও দেদার চাখছেন গ্রাম-শহরের বাবু-বিবিরা।
|
‘দিদি’ এক মনে আঁকার সময়ে দূর থেকে ক্যামেরা তাক করেন আলোকচিত্রীরা। তাঁদের সামনে পথ আটকে সদ্য বইমেলা-কাণ্ড খ্যাত নিরাপত্তারক্ষী কুসুম দ্বিবেদী। ক্যামেরাধারীদের অনুরোধে হেসে ফেলে বললেন, “উফ্, তোদের যত ফ্রেমিং আর অ্যাঙ্গল, পারি না!” শিল্পী নচিকেতা একমাত্র ‘দিদি কী আঁকছ’ বলে এক গাল হেসে কাছাকাছি হেঁটে গেলেন।
|
কেমন আঁকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? শুনে খাপ্পা চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। “আরে বাবা, মমতা মমতার মতো আঁকছেন! চার্চিল ছবি আঁকলে এ সব প্রশ্ন উঠত কখনও? কিংবা যদি ওবামা আঁকতেন!
|
মাটির মান |
বর্ধমানের পানাগড়ে শনিবার থেকে শুরু হল মাটি উৎসব। মাটির উপরে নির্ভর করে বহু মানুষের জীবিকা। কিন্তু মাটির মান নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। কী কী সমস্যা রাজ্যের মাটিতে? কী করা দরকার চাষের উন্নতির জন্য?
|
মাথাব্যথার কারণ |
• কৃষিকাজ অনুযায়ী সারা রাজ্যে মাটি ছ’রকম। ধরন না বুঝে চাষ করা বড় সমস্যা।
• নতুন পলি অঞ্চল অর্থাৎ হুগলি, হাওড়া, নদিয়া, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনায় অতি-ব্যবহারে মাটির ক্ষমতা হ্রাস।
• বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় মাটির উপরিভাগের উর্বর অংশ ধুয়ে চলে যায়। উৎপাদন ক্ষমতা কমে।
• প্রায় ৪০ শতাংশ জমি এখনও সেচের জল পায় না।
• ছোট ছোট জমি। এক চাষি উপযুক্ত প্রতিষেধক দিলেও পাশের জমিতে পোকা হলে তা সংক্রমিত হয় তাঁর জমিতে। কমে ফলন। |
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ |
• মাথা পিছু জমি কমছে। শুধু শস্য উৎপাদন না করে প্রয়োজন সুসংহত খামার পরিকল্পনার। ফসলে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে মৎস্যচাষ বা পশুপালন।
• গোষ্ঠী-কৃষিকাজ চালু করা। ছোট ছোট জমির জন্য উদ্ভূত সমস্যা মিটতে পারে। বাড়বে উৎপাদন।
• বীজ উৎপাদন হতে পারে রাঢ় অঞ্চলে। গোষ্ঠী বা সমবায় তৈরি করে বীজ উৎপাদনের ব্যবস্থা করে দিলে চাষিরা উৎসাহ পেতে পারেন।
• বৃষ্টির জল ধরে রাখতে হবে। সেই জলে ধুয়ে যাওয়া মাটির অংশ থাকে। তা দিয়ে চাষ করলে উর্বরতা ফিরে পাবে মাটি। |
*তথ্য: উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অধ্যাপকদের সৌজন্যে।
পানাগড়ের বিরুডিহায় মাটি উৎসবের প্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে কৃত্রিম ধানখেত। উদ্বোধনের পরে সেখানে ধানের চারা পুঁতলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (মাঝখানে)। শনিবার ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান। |
|