প্রয়োজনীয় নিয়োগ ছাড়াই শনিবার থেকে গোঘাট-১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু হয়ে গিয়েছে অন্তর্বিভাগ। হুগলির দাদপুরের সভাস্থল থেকে সে দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অন্তর্বিভাগের উদ্বোধন করে দেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যথাযথ পরিষেবা মিলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও।
চিকিৎসক, নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব মিটিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অন্তর্বিভাগ চালুর দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। কিন্তু নিয়োগ না করে অন্তর্বিভাগ চালু হয়ে যাওয়ায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদেরও আশঙ্কা, এতে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা বিঘ্নিত হবে। এমনকী, এই অবস্থায় অন্তর্বিভাগটি কত দিন চালু থাকবে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোনও রোগী ভর্তি হননি ঠিকই, কিন্তু হলে কী হবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনা যাচ্ছে না স্বাস্থ্যকর্মীদের।
সমস্যার কথা মেনে বিএমওএইচ দুর্গাপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে অসুবিধার কথা জানিয়েছি। আপাতত অন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কর্মীদের নিয়ে এসে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তণিমা মণ্ডলের আশ্বাস, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীদের অভাব রয়েছে জানি। তবে, সমস্যা কেটে যাবে। একটু সময় লাগবে।” |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবার জন্য অন্তত দু’জন চিকিৎসক, চার জন নার্স, চার জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, দু’জন সাফাইকর্মী এবং এক জন ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে গোঘাটের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী চিকিৎসক রয়েছেন এক জন। খাতায়-কলমে তিন জন নার্স থাকলেও বর্তমানে কাজে আসছেন এক জন (বাকি দু’জনের এক জন প্রসবকালীন ছুটিতে রয়েছেন, অন্য জন কিছু না জানিয়ে আসছেন না বলে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের)। সাফাইকর্মী রয়েছেন এক জন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক-নার্সদের থাকার জায়গা নেই। তাঁরা ওয়ার্ডেই থাকেন। অন্তর্বিভাগটি উদ্বোধনের দিনই এক জন নার্স সকাল ন’টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ‘ডিউটি’ করে চলে যান। আর বদনগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জরুরি ভিত্তিতে এক জন নার্সকে আনা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরের দিন থেকে তিনি ছুটি নিয়ে নেন।
পালা করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এ ভাবে এখান-ওখান থেকে চিকিৎসক-নার্স ধরে এনে সুষ্ঠু পরিষেবা কি দেওয়া যায়?
স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু হয়। তখন ৩০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করার কথা থাকলেও চিকিৎসক এবং কর্মীর অভাবে তা হয়নি। শুধু বহির্বিভাগ চালু হয়। অবশেষে শয্যাসংখ্যা কমিয়ে অন্তর্বিভাগ চালু হলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হল না। |