‘ছুটিতে’ শিক্ষকেরা, নাজেহাল হাসপাতাল
নাম, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা ৯৯। অথচ সেখানে গেলে দেখা মেলে না শিক্ষক-চিকিৎসকদের। কেউ রোগী রেখে দিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে কলকাতায় চলে যান। দায়িত্বে থাকলেও কারও আবার খোঁজ মেলে না। অভিযোগ, বেশিরভাগ সময়েই অধিকাংশ শিক্ষক-চিকিৎসক থাকেন ‘ছুটিতে’। চিকিৎসকদের এমন ‘ছুটি’র বহরে নাজেহাল রোগীরা।
প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন কান্দির বাশেদ শেখ। ভর্তি হওয়ার পরে দু’দিন তাঁর ওষুধ-স্যালাইন চলে। এরপর ২৪ জানুয়ারি তাঁকে ‘ছুটি’ লিখে শিক্ষক-চিকিৎসক পিএন সিংহ পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে কলকাতায় চলে যান। এ দিকে, ওই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি থাকা রোগীদের দায়িত্ব নিতে নারাজ ওয়েস্টবেঙ্গল হেলথ সার্ভিসেস-এর চিকিৎসকেরা। ফলে ৫ দিন বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয় ওই রোগীকে।
২৮ জানুয়ারি হাসপাতালের কাজে যোগ দিয়েই পিএন সিংহ বাশেদ শেখকে কলকাতায় ‘রেফার’ করে দেন। কিন্তু কলকাতায় যাওয়ার মত আর্থিক অবস্থা না থাকায় আত্মীয়স্বজন রোগীকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। অভিযোগ, শিক্ষক-চিকিৎসক পিএন সিংহ সোমবার সকালে কলকাতা থেকে বহরমপুরে আসেন এবং বুধবার বিকেলে ফের কলকাতায় ফিরে যান। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও সদুত্তর দিতে না পেরে শেষে তিনি ফোন কেটে দেন।
অন্য দিকে, রবিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে যে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের রোগী দেখার দিন ছিল, ওই দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে তাঁর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে রোগীর বাড়ির লোক শিশুটিকে কোন চিকিৎসক দেখবেন তা জানতে ওয়ার্ডমাস্টার এবং সুপারের ঘরে ছোটাছুটি করেন। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই চিকিৎসকেরা যোগাযোগ করলে তিনি হাসপাতালে আসেন। এখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা পরিষেবার এটাই দস্তুর!
‘দু’দিনের’ মেডিক্যাল কলেজ এবং ‘পাঁচ দিনের’ জেলা হাসপাতাল! দিনের পর দিন এ ভাবে চলার ফলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা লাটে উঠেছে বলে অভিযোগ। কেননা, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা দু’দিন রোগী দেখছেন আর বাকি পাঁচ দিন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপরে এসে পড়ছে সমস্ত দায়িত্ব। এই অবস্থায় চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নাকি জেলা হাসপাতালের অধীনে কর্মরত!
সমস্যা রয়েছে অন্য বিভাগ নিয়েও। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পদে যেমন রয়েছেন ১০ জন শিক্ষক-চিকিৎসক। সোম ও মঙ্গলবার মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক তিন জন মিলে ২৪ ঘন্টার ডিউটি করেন। সেখানে হেল্থ সার্ভিসেস-এর এক জন চিকিৎসককে ২৪ ঘন্টা ডিউটি করতে হয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে শিক্ষক-চিকিৎসক এবং হেল্থ সার্ভিসেস-এর চিকিৎসকদের ‘বিবাদ’ মেডিক্যাল কলেজে কান পাতলেই শোনা যায়। বিবাদের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের বহরমপুর শাখার সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “মালদহে ওই বিবাদ চরম আকারে রয়েছে। এখানেও শুরু হয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে ওই সমস্যা মিটিয়ে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার।”
শিক্ষক-চিকিৎসকদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, সম্পূর্ণ ভাবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এখনও শুরু হয়নি, আবার জেলা হাসপাতালের অধীনেও নেই। ফলে কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি। এতে চিকিৎসা পরিষেবা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।”
সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক অবশ্য বলেন, “মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকরা ছুটির আবেদন করেন অধ্যক্ষের কাছে। ফলে আমি জানতেই পারি না কোন শিক্ষক-চিকিৎসক কবে-কখন ছুটি নিচ্ছেন। ফলে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক-কর্মীদের নিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু সমস্যা রয়েই গিয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।”
শিক্ষক-চিকিৎসকদের ছুটিতে থাকার ব্যাপারে হতাশ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার সাহা। তাঁর কথায়, “বিষয়টি শিক্ষক-চিকিৎসকদের বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও ছুটি নেওয়ার বিষয়টি জানেন। চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার বদলে তাঁরা যে ভাবে ছুটি নিয়ে থাকছেন তাতে শিক্ষক-চিকিৎসকদের একাংশের আচরণে আমি হতাশ।”

মেডিক্যাল কলেজের সাতকাহন
রোগী পরিষেবার ক্ষেত্রে সরাসরি যে সমস্ত শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন, তাঁরা সরকারি নিয়ম মেনে পরিষেবা দিচ্ছেন না।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি নেই।
ল্যাব-টেকনিশিয়ান ৩৫টি পদে কর্মী নেই।
চতুর্থ শ্রেণি পদেও কেউ নেই।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স নেই।
হাসপাতালের ভিতরে শিক্ষক-চিকিৎসকদের জন্য কোনও আবাসন নেই।
ফরেন্সিক বিভাগে দু’জন চিকিৎসক। তাঁরা ময়নাতদন্ত বা অন্য ‘মেডিকো-লিগ্যাল’ কেস করার সময়ে পাওয়া যায় না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.