নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
প্রায় ৫ বছর আগে মৃত্যু হয়েছে মীরা রাণী করের। অথচ শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানায় তাঁর নামে মারপিটের অভিযোগ জমা পড়েছে। গত ১১ জানুয়ারি সেবক রোড এলাকায় জমি নিয়ে গণ্ডগোলের সময়ে মীরা রাণী দেবী ছিলেন বলে অভিযোগে লেখা হয়েছে। প্রায় এক মাস গড়াতে চললেও মৃত মহিলার নামে কেন এফআইআর করা হল তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনার কথা শুনে বিস্মিত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “জমির ব্যাপারটা আমি জানি না। ওই গণ্ডগোলের ঘটনায় একজন মহিলাকে মারধরের অভিযোগ পেয়েছিলাম। তার পরেই পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে উপযুক্ত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাই। মৃত মহিলার নামে অভিযোগের ঘটনা নিয়ে প্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “অনেক সময় কেউ অভিযোগ করার সময় তা নিয়ে মামলা করা হয়। পরে তা তদন্ত করে দেখা হয়। এখানে যদি কোনও মৃত মহিলার নামে অভিযোগ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে খোঁজ নেব। সেরকম হলে মিথ্যে অভিযোগের জন্য আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও রঘুনাথবাবুর আইনজীবী অত্রি শর্মা জানান, তাঁর কাছে মীরা দেবীর নামে করা এফআইআরের প্রতিলিপি রয়েছে। তিনি বলেন, “মৃতের নামে এফআইআর করা হয়েছে। এ তো ভাবাই যায় না।”
মীরা দেবীর ছেলে রঘুনাথবাবুর অভিযোগ, ওই দিন অরূপ মজুমদারের নেতৃত্বে হায়দরপাড়ায় তাদের সাড়ে তিন কাঠা জমি দখল নিতে একদল যুবক হামলা চালায়। তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি রঘুনাথবাবু, তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা দেবী এবং তাঁর মেয়ে ও বোনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কৃষ্ণা দেবী বেশ কয়েকদিন সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি ওই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। কিন্তু রঘুনাথবাবুর অভিযোগ, পুলিশ অরূপবাবুদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা তো নেয়নি, উল্টে তাঁর মৃত মা সহ তিনজনের নামে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল সরকার মীরা দেবী সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সে হিসেবেই মামলা করা হয়।
ঘটনাচক্রে, অরূপবাবুর নাম জড়িয়ে পড়ায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও আলোড়ন পড়ে যায়। কারণ, বাম আমলে ডাবগ্রামের একজন প্রভাবশালী সিপিএম নেতা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অরূপবাবুর বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়। অরূপবাবু তৃণমূল নেতাদের একাংশের ঘনিষ্ঠ বলেও সিপিএমের তরফে অভিযোগ ওঠে। যদিও তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেছেন, “অরূপবাবু আমাদের দলের কেউ নন।” এমনকী, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও তাঁর দলের নাম ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশ অরূপবাবুকে গ্রেফতার না-করায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অরূপবাবু উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। এ ব্যাপারে অরুপবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এর বেশি কিছু বলার নেই।”
এদিন রঘুনাথবাবু অবশ্য তাঁর প্রয়াত মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “মিথ্যে অভিযোগ করে কি করে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। পুলিশ কেনই বা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে সব জানিয়েছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথবাবুর পাশাপাশি ওই জমি মালিকানা দাবি করেছেন গোপালবাবু। তা খতিয়ে দেখছে ভূমি রাজস্ব দফতর। তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর নান্টু পাল বলেন, “ওই জমি কার তা ভূমি রাজস্ব দফতর দেখবে। কিন্তু ওইদিন যে ভাবে রঘুনাথবাবুর পরিবারের উপরে হামলা হয়েছে তা মানা যায় না। পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বধূর মৃত্যু। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ এক বধূর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতার নাম মাম্পি দাস(২৪)। বাড়ি আলিপুদুয়ার থানার চণ্ডীরঝাড় গ্রামে। আগুন পোহাতে গিয়ে গত ২২ জানুয়ারি ওই বধূর গায়ে আগুন লাগে। |