মোর্চার আপত্তি অগ্রাহ্য করে লেপচা উন্নয়ন বোর্ড মমতার
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আপত্তি অগ্রাহ্য করেই দার্জিলিং পাহাড়ে লেপচাদের জন্য পৃথক উন্নয়ন বোর্ড গড়ল রাজ্য সরকার। জানুয়ারির শেষে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে লেপচাদের পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার কথা বলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে বিভাজন করতে চাইছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সে কথায় এক রকম কোনও গুরুত্ব না দিয়েই মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই পর্ষদ গড়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। মোর্চার তরফে ওই বোর্ড জিটিএ-র অধীনে রাখার দাবি জানানো হয়েছে। যদি তা না করা হয়, তা হলে ওই পর্ষদ মোর্চা নেবে না বলে জানিয়েছে। তবে ওই বোর্ড জিটিএ-এর মতোই স্বশাসিত হবে কি না, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্ক আরও সংঘাতের পথে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন পাহাড়বাসীদের অনেকেই।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘মায়েল লিয়াং লেপচা উন্নয়ন বোর্ড’ নামে ওই পর্ষদের প্রধান দফতর হবে কালিম্পংয়ে। লেপচা সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়ন, প্রসার ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করবে পর্ষদ। কৃষি, শিল্প, পশুপালন, মৎস্যচাষ, পর্যটনের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন থেকে শুরু করে সমাজকল্যাণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের দায়িত্বও পর্ষদের। রাজ্য ও কেন্দ্রের টাকায় পর্ষদ প্রয়োজন মতো ভবন নির্মাণ, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, জমি ও অন্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের অনুমোদনও পেয়েছে।
বিকেলে রাজ্য সরকারের তরফে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা বৈঠকে বসেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে দূরত্বের কারণে গুরুঙ্গ ইতিমধ্যেই জিটিএ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ওই বৈঠকে ঠিক হয়, নবগঠিত পর্ষদকে তাঁদের দাবি মতো জিটিএ-র মধ্যে রাখা না হলে, গুরুঙ্গ দ্রুত পদত্যাগ করবেন। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেছেন, “আমরা বরাবর দাবি জানিয়েছি জিটিএ-র মধ্যেই লেপচা উন্নয়ন বোর্ড গড়তে হবে। তা না করে পৃথক লেপচা উন্নয়ন বোর্ড করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।”
লাভার গুম্ফায় মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র
তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই সব পদক্ষেপ করছেন। তাঁর দাবি, “পাহাড়ের উন্নয়নই মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য। এখানে কোনও ভেদাভেদ না-করে সকলে মিলে চলতে হবে। বাংলাও এগোবে। পাহাড়ও এগোবে।”
নবগঠিত পর্ষদের জন্য পাহাড়ে অশান্তি আরও বাড়লে তা কিন্তু সারা বাংলারই উদ্বেগের কারণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ দিন এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পাহাড় হাসছে না বলে আমরা হাসব, এমন রাজনীতি আমরা করি না।” একই সঙ্গে জিটিএ গঠনের পরে তড়িঘড়ি লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সমস্যার গভীরে যেতে হবে। লেপচাদের নামে একটা কিছু করে দিলাম। কারা লেপচা বুঝতে হবে তো! চিন্তাহীন সব পদক্ষেপ।” পাশাপাশি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত দু’দশকের দীর্ঘ সময় পাহাড় কিন্তু শান্তই ছিল। নতুন করে মোর্চার আন্দোলন শুরুর পরে আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের বোঝানোর কাজও তাঁরা শুরু করেছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “গোর্খাল্যান্ডের সঙ্গে আপস করে আলোচনা উচিত হয়নি। আমি অশোককে (তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য) বলেছিলাম ওদের বোঝাও। কিন্তু আলোচনা থেকে সরে এসো না। গোর্খাল্যান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ আপসে আখেরে ক্ষতি হয়েছে।” তবে পাহাড়ের ব্যাপারে বর্তমান রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনে পরামর্শ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দরকারে সরকারকে পরামর্শ দেব।”
সংখ্যাগরিষ্ঠ লেপচাদের সংগঠন ইন্ডিজেনাস লেপচা অ্যাসোসিয়েশন নবগঠিত পর্ষদকে স্বাগত জানিয়েছেন। যদিও আর একটি সংগঠন এই পর্ষদকে জিটিএ-র আওতাতেই রাখার দাবি করেছেন। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ ও গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্সও এই পর্ষদকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে একজোট হয়ে আন্দোলনের ব্যাপারে মোর্চা তাঁদের বৈঠকে ডাকলেও গোর্খা লিগ ও টাস্ক ফোর্সের নেতারা সেখানে যাবেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিনই জলপাইগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, “অনেকেই মনে করেছিলেন, পাহাড় সমস্যার সমাধান হল। কিন্তু পিনটেল ভিলেজে যখন ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হল তখনই আমরা বলেছি যে এটা সমাধানের পথ নয়। বরং নতুন করে প্যান্ডোরার বাক্স খোলা হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.