পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ঘর গোছানোর সময়ে শরিকি বিবাদেই জড়িয়ে পড়ল বামফ্রন্ট। যে দিনহাটা কাণ্ড নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল, তাকেই সামনে রেখে কোচবিহারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নামছে ফরওয়ার্ড ব্লক। উত্তর ২৪ পরগনায় আবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে খোদ ফরওয়ার্ড ব্লকই। মধ্যমগ্রামে সুভাষ মেলাকে কেন্দ্র করে ফব-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আইনি লড়াই এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বুধবার মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার রাতেই জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মূল প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। মঙ্গলবার মেলা চালু হয়। এই দিন রাতেই সবাইকে বের করে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ বার সিপিএম সর্বত্র প্রার্থী দিতে পারবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। তারই মধ্যে বামফ্রন্টের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে জোটের দুর্বলতাকে প্রকট করল ফব। পঞ্চায়েত ভোটে কোচবিহারে তারা বেশি আসন দাবি করেছে। দলীয় সূত্রে খবর, আসন বণ্টন নিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু কোচবিহারে বৈঠক করলে ফব-র রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা কোচবিহারে দলের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহর নেতৃত্বে ফব উত্তরবঙ্গে তাঁদের দলের শক্তিবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে আসন সমঝোতার সময়ে অগ্রাধিকারের দাবি তোলেন। তা নিয়ে সিপিএম নেতাদের সঙ্গে ফব নেতাদের বাদানুবাদ হয় বলেও জানা গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিমানবাবু জানিয়েছেন, আসন সমঝোতা পুরনো রীতি মেনেই করা হবে কিন্তু নানা জায়গায় ব্যতিক্রম হতে পারে। |
প্রচারে উদয়ন |
দিনহাটা কাণ্ডকে সামনে রেখেই পঞ্চায়েত ভোটে—জনসভায় বললেন উদয়ন গুহ |
• ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ দিনহাটায় মহকুমা শাসকের দফতরে আইন অমান্য আন্দোলনে ফরওয়ার্ড ব্লক। নেতৃত্বে উদয়ন গুহ, নৃপেন রায়। আন্দোলন ঘিরে খন্ডযুদ্ধ। পুলিশের গুলিতে মৃত ৫ দলীয় কর্মী। স্বপন মহন্ত, প্রদীপ বর্মন, নীরেন চক্রবর্তী, নিরোদ বর্মন, ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।
• উদয়ন গুহ, নৃপেন রায় সহ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের পুলিশের। পরে উদয়ন, নৃপেন সহ ৬৬ জনের নামে খুন, খুনের চেষ্টা, সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়া, সম্পত্তি নষ্ট-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের।
• বাম সরকার দিনহাটা কাণ্ডের তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণ চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে কমিশন গড়ে।
|
|
কোচবিহারে উদয়ন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
• সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব মিটে যাওয়ার পর ২০১০ সালে শীল কমিশনের রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে জমা পড়ে। নতুন সরকার আসার পর ওই রিপোর্ট হারিয়ে যায়।
• ২০১২ সালে রিপোর্ট খুঁজে পায় নয়া সরকার।
• পুলিশ সূত্রে খবর, এক বছর আগে দিনহাটা কান্ডের ঘটনা নিয়ে আদালতে ৬৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। ওই ব্যাপারে শুনানি এখনও শুরু হয়নি। |
|
ফব নেতাদের বক্তব্য, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড় শরিক সিপিএমকে তারা জেলায় টেক্কা দিয়েছে। সেই মতো আসন দিতে হবে তাদের। উদয়নবাবু সেই সঙ্গেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন, দিনহাটা কাণ্ডের পরে দলের নেতৃত্বের উপরে কর্মী-সমর্থকদের আস্থা বেড়ে যাওয়াতেই জেলায় দলের প্রভাব তারপর থেকে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দিনহাটায় ফব-র আইন অমান্য কর্মসূচি ছিল। সেই আন্দোলনের সময়ে পুলিশের গুলিতে ৫ ফব-কর্মীর মৃত্যু হয়। তখন জখম হয়ে মারা যান এক এনভিএফ কর্মীও। সেই সময়ে বামফ্রন্টের শাসনাধীন সরকারের বড় শরিক সিপিএমের বিরুদ্ধে সমালোচনার ধার বাড়ায় ফব। সে বছর পঞ্চায়েত ভোট থেকেই জেলায় ফব-র আসনও বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে দিনহাটা পুনরুদ্ধার করা ছাড়াও মোট ৭টি আসনে জয়ী হন ফব প্রার্থীরা। যেখানে বামেরা সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে পান ১৬ টি আসন। উদয়নবাবু বলেছেন, “আমাদের শক্তি যা ছিল, তা ধরে রাখা গিয়েছে। কারও কারও শক্তি যে কমেছে তা স্পষ্ট।”
এই পরিস্থিতিতে এ বার ফের ভোটের মুখে দিনহাটা কাণ্ডকেই তুরুপের তাস হিসেবে তুলে ধরছেন উদয়নবাবুরা। তিনি বলেন, “দিনহাটা কান্ডের জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। ওই ঘটনার জন্য যে তদন্ত কমিশন হয়েছিল তা লোক দেখানো ব্যাপার ছাড়া কিছু নয়। এটা আমরা আগেও বলেছি। এবার পঞ্চায়েতের প্রচারেও বলব।” কিন্তু ফব নেতারাও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিব্রত। মধ্যমগ্রামের সুভাষ মেলার এ বার রজতজয়ন্তী বর্ষ। এই মেলা বরাবর ফব নেতারাই পরিচালনা করেন। কিন্তু জেলা সম্পাদক হরিপদ বিশ্বাস এবং জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই বিবাদ চলছে দলেরই প্রাক্তন মন্ত্রী সরল দেবের গোষ্ঠীর সঙ্গে। বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। |