নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অর্ডিন্যান্সে রাজ্যপাল সই করেছিলেন আগেই। তার ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে মহাকরণ থেকে প্রথম দফায় রাজ্যস্তরের চারটি সমবায়ে বিশেষ অফিসার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। আর সোমবার রাতেই সেগুলির দরজায় নোটিস লটকে কাজকর্মের রাশ নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন রাজ্য সরকার নিযুক্ত বিশেষ অফিসারেরা। তবে একাধিক সমবায়ের পরিচালন কমিটির সদস্যেরা জানিয়েছেন, অর্ডিন্যান্সের প্রতিলিপি তাঁরা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হাতে পাননি। অর্ডিন্যান্সের উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে।
মহাকরণের খবর: ২০০৬ সালে রাজ্যের তদানীন্তন বাম সরকার সমবায়-আইনে কিছু সংশোধনী এনেছিল, যা ২০১১-র গোড়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। এক সমবায়-কর্তা বলেন, “পুরনো
আইনে সমবায়ের পরিচালন সমিতির মেয়াদ ছিল তিন বছর। সংশোধিত আইনে তা পাঁচ বছর করা হয়।” কিন্তু তাতে সময়সীমার বিষয়টি স্পষ্ট না-থাকায় নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে আইনে ফের সংশোধনী আনে। সমবায়মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি মঙ্গলবার বলেন, “২০১১-র ১৮ জানুয়ারিকে মাপকাঠি ধরা হয়েছে। এর আগে নির্বাচিত সমবায় পরিচালন সমিতির মেয়াদ হবে তিন বছর। নির্বাচন তার পরে হয়ে থাকলে মেয়াদ পাঁচ বছর।”
এখানেই আপত্তি তুলেছে একাধিক সমবায় সংগঠন। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির তাগিদেই আইন বদলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এক সমবায়-কর্তার কথায়, “২০১১-য় পালাবদলের আগে ক্ষমতায় যে হেতু বামেরা ছিল, তাই তৃণমূল সরকার মনে করছে, সব সমবায় সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গিয়েছে। তাদের আশা, নতুন নির্বাচন হলে তারাই সমবায় দখল করবে।” রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আমলা দিয়ে সমবায় ব্যাঙ্ক ও সমিতিগুলোর ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে।” সরকার কী বলে?
অশোকবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। “সরকার চাইছে সমবায়গুলোয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে। অর্ডিন্যান্স তারই অঙ্গ।” বলেন তিনি।
মহাকরণের হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গে ২৫ হাজার ২৬৫টি সমবায় আছে। নতুন সরকারের আমলে আদালতের নির্দেশে বিভিন্ন সময়ে এর ১৭৪৮টিতে বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। অর্ডিন্যান্সের জোরে প্রথম পর্যায়ে আরও চারটিতে তা-ই হল। সমবায় দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, ১৯৮৩-র যে সমবায়-আইন মেনে পরিচালন সমিতি নির্বাচন হয়েছি, তাতেই বলা আছে, তিন বছর পেরিয়ে গেলে নির্বাচন বাধ্যতামূলক। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও বিভিন্ন স্তরের বহু সমবায়ে নির্বাচন হয়নি। |