রাজ্য সরকার বার বার আক্ষেপ করছে, দেনার চাপে কোষাগারে নাভিশ্বাস দশা। অথচ তারই মধ্যে মেলা-উৎসব-ক্লাবের পিছনে কোটি কোটি সরকারি টাকা কী করে ঢালা হচ্ছে, এ বার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। সম্প্রতি হাইকোর্টের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর না-হওয়া সংক্রান্ত এক মামলায় শুনানির সময়ে বিচারপতি তপেন সেন প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে মন্তব্য করেন, “যদি এ ভাবেই চলতে থাকে, তা হলে একমাত্র ভগবানই ওদের (রাজ্য সরকারকে) বাঁচাতে পারবে!”
মামলায় অভিযোগ ছিল, হাইকোর্টের কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশও মানা হয়নি। এমনকী, হাইকোর্টের নির্দেশ পরিমার্জন করে রাজ্যের অর্থ-সচিব অন্য একটি প্রস্তাব দেওয়ার পরেও বর্ধিত বেতন মিলছে না। অভিযোগ শুনে বিচারপতি সেন বর্ধিত বেতন না-দেওয়ার কারণ জানতে চান। রাজ্যের কৌঁসুলি সুব্রত তালুকদার বলেন, সরকার আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। তাই পে কমিশন বলবৎ করা যাচ্ছে না।
সরকারের যুক্তি শুনে বিচারপতির হাতে ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বাংলা সংবাদপত্রের প্রতিলিপি তুলে দেন আবেদনকারীর আইনজীবী। তার এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্লাবকে দেওয়া অনুদান, হরেক মেলা ও উৎসব বাবদ সরকারি খরচের খতিয়ান রয়েছে। যা দেখে বিচারপতি সেনের মন্তব্য, “সরকার বলছে, তাদের আর্থিক সঙ্কট চলছে! কিন্তু সংবাদপত্রের প্রতিবেদন যদি সত্যি হয়, তা হলে ক্লাবের জন্য ৭০ কোটি, বিভিন্ন মেলা ও উৎসবের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছেকী ভাবে?”
রাজ্য সরকার ওই টাকা কোন খাতে ও কোন নীতিতে বরাদ্দ করছে, বিচারপতি তা জানতে চান। এ-ও বলেন, “সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছে না। এমনই যদি অবস্থা হয়, তা হলে সব গুটিয়ে নিক!” শুধু তা-ই নয়, মেলা, উৎসব বা ক্লাবকে সরকারি অনুদান সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও অন্যত্র প্রকাশিত তথ্যাবলি একত্রিত করে হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য মামলার আবেদনকারী ‘হাইকোর্ট এমপ্লইজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর কৌঁসুলি সৌম্য মজুমদারকে নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি।
এই মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতির সব পর্যবেক্ষণ তাঁর রায়ে লিপিবদ্ধ হয়নি। রায়ে বলা হয়েছে, সরকারের ঔদ্ধত্য ও যথেচ্ছাচার হাইকোর্ট বরদাস্ত করবে না। উল্লেখ্য, কর্মীদের আপাতত দু’টি ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে সরকারই বলেছিল, পরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। সেই মতো হাইকোর্ট দু’টি ইনক্রিমেন্টের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে সরকার জানিয়ে দেয়, দু’টি ইনক্রিমেন্টই চূড়ান্ত ফয়সালা। রাজ্যের এ হেন মনোভাব হাইকোর্ট যে সহ্য করবে না, রায়ে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতি সেন। রায়ে তিনি লিখেছেন, রাজ্য সরকার এই জাতীয় ঔদ্ধত্য ও স্পর্ধা দেখালে হাইকোর্ট কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। “অবিলম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করা হোক। এ ক্ষেত্রে সরকার গয়ংগচ্ছ ভাব দেখালে বুঝতে পারবে, হাইকোর্ট কত কঠোর হতে পারে।” রায়ে বলেছেন বিচারপতি। |