নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শিয়রে পঞ্চায়েত নির্বাচন। অথচ উন্নয়নে খরচ করার অর্থ নেই। বাজার থেকে ধার করার সীমাও শেষের দিকে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তাই ক’দিন আগেই দরবার করে এসেছেন মনমোহন সিংহের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মতো কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ বার কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। বৈঠকে অমিতবাবু আর্জি জানালেন, রাজ্যের জন্য কেন্দ্র ২০ বছরের মতো দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখুক। রাজ্য সরকার নিজের আয় বাড়িয়েছে। এ বার অর্থ মন্ত্রকও রাজ্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক। বিশেষ যোজনায় আর্থিক সাহায্য করুক উন্নয়ন খাতে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা খরচে ব্যর্থতা, মেলা-উৎসবের নামে কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় ও চরম অর্থ সঙ্কটেও ক্লাবগুলিকে টাকা বিলোনোর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র কেন সাহায্যের হাত বাড়াতে যাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি?
চিদম্বরমের সঙ্গে বৈঠকে অমিতবাবু নিজেই এ সবের জবাব দেওয়ার চেষ্টা চালান। মহাকরণের একটি সূত্রের কথায়, “উন্নয়নের টাকা অপচয় নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙারই চেষ্টা করেন তিনি।” বছরখানেক আগে জঙ্গলমহল ও অনুন্নত এলাকা উন্নয়নে কেন্দ্র ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা দিয়েছিল। বৈঠক শেষে অমিতবাবু আজ বলেন, “ওই টাকা কোথায় কত খরচ হয়েছে, তা অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছি। অর্থ ব্যয়ের শংসাপত্রও দিয়েছি।”
তা সত্ত্বেও চিদম্বরমের পক্ষে শেষ পর্যন্ত কতটা সাহায্য করা সম্ভব, সেটাও বড় প্রশ্ন। মনমোহন বাজেট অধিবেশনের আগে তৃণমূলের জন্য দরজা একেবারে বন্ধ রেখে তিক্ততা বাড়াতে চাইছেন না। তাঁর কথায় চিদম্বরম পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নতুন করে খতিয়ে দেখতে রাজি হলেও অর্থ মন্ত্রক কিন্তু বলছে, দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করতে হলে আরও আলোচনা প্রয়োজন। রাজ্যকেও তার জন্য বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে। আবার অর্থমন্ত্রী নিজেই যেখানে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রকের বরাদ্দ ছাঁটতে চলেছেন বাজেটে, সেখানে রাজ্যের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো খুবই কঠিন। রাজকোষ ঘাটতি ৫.৩%-এ বেঁধে রাখতে বদ্ধপরিকর চিদম্বরম। যে কারণে চলতি অর্থবর্ষে খরচ না হওয়া বরাদ্দের টাকাও বাঁচিয়ে রাখতে বলছেন তিনি। অমিতবাবুকেও সে কথা জানিয়েছেন চিদম্বরম।
পরস্পরের সঙ্কট নিয়ে এই আলোচনার নিট ফল তবে কী দাঁড়াল?
অমিতবাবুর কথায়, “উনি তাঁদের অসুবিধার কথা বলেছেন। তবে আমাদের বক্তব্য নিয়েও ভাববেন বলে জানিয়েছেন। যা কথা হল তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।” অমিতবাবুর বক্তব্য, এ দিনের আলোচনা থেকে যদি কোনও ক্ষেত্রে একমত হওয়ার জায়গা তৈরি হয়, তবে আবারও আলোচনা হতে পারে কেন্দ্রের সঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোজ নিয়ম করে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও অর্থসঙ্কটে তাদেরই দ্বারস্থ হওয়া ও আলোচনার রাস্তা খুলে রাখা ছাড়া পথও নেই অমিতবাবুদের। রাজ্যের রাজকোষের হাল কতটা খারাপ, তা তাঁরা ভালই জানেন। কর্মচারীদের বেতন, পেনশন দেওয়ার পরে সামান্য টাকাই থাকে উন্নয়নের জন্য। চলতি অর্থবর্ষে রাজ্য সরকার ২২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। কিন্তু জানুয়ারি মাস পর্যন্তই ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নিয়েছে রাজ্য। বাকি দু’মাসে চাইলেও ৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকার বেশি ঋণ মিলবে না। এ দিকে মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে ২ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে চলেছে।
অর্থ মন্ত্রক বরাবরই রাজ্যকে বলে এসেছে, শুধু কেন্দ্রীয় সাহায্যের ভরসায় না থেকে রাজ্যকেও আয়ের উৎস বাড়াতে হবে। নতুন কর বসাতে হবে। বাড়াতে হবে রাজস্ব আয়। সেই সূত্রেই অমিতবাবু আজ জানান, বাম আমলের শেষ বছরে (২০১০-’১২) রাজস্ব আয় ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরে (২০১২-’১৩) তা ৩১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ফলে ঋণ শোধের ক্ষমতাও বেড়েছে রাজ্যের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ২০ বছরের মতো দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে রাজ্য সরকারের পক্ষে তা শোধ করতে অসুবিধা হবে না এখন। অমিতবাবুর আরও অনুরোধ, রাজ্যের ঋণের বোঝা কিছুটা অন্তত মকুব করা হোক। নিদেনপক্ষে ঋণ শোধের সময়সীমা বাড়ানো হোক। অবিলম্বে অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন খাতেও আরও অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন অমিতবাবু। এর পিছনে রাজনৈতিক দায় রয়েছে তৃণমূলের। কর আদায়ের ভাগ হিসেবে রাজ্যের প্রাপ্য পেতে পেতে এপ্রিল হয়ে যাবে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের মুখে গ্রামীণ প্রকল্পগুলির কাজ চালাতে অবিলম্বে টাকা দরকার মমতা সরকারের। |