গ্রামের গরিবদের আস্থা ফিরছে, আশাবাদী বুদ্ধদেব
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে গ্রাম বাংলায় সিপিএমের দুর্গ আরও ভেঙে পড়েছে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সর্বত্র প্রার্থী দিতে পারবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ী তাঁরা। পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের মুখ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিন্তু এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত নন। তাঁর দাবি, গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই ঠিক-বেঠিক বুঝতে পারছেন গ্রামের গরিব মানুষ। ধীরে ধীরে তাঁদের আস্থা ফিরছে সিপিএমে।
গত প্রায় এক বছর নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখার পরে পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে ফের সক্রিয় হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় জেলায় সভা করছেন। বেশ ভাল ভিড়ও হচ্ছে সেই সব সভায়। সাধারণ মানুষের এই সাড়াই বুদ্ধবাবুকে আশাবাদী করে তুলেছে বলে সিপিএম সূত্রের মত।
তৃণমূল স্বাভাবিক ভাবেই এই আশাবাদের বিরোধী। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত নেতার কথা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটাই তো বড় প্রশ্ন। তবে বুদ্ধবাবুকে সিপিএম যত সামনে আনবে, ততই রাজ্যের মঙ্গল। মানুষের যে সামান্য অংশ আমাদের সমর্থন করেননি, বুদ্ধবাবুর মুখ দেখলে তাঁরাও আমাদের দিকে আসবেন।”
পঞ্চায়েত ভোটে দলের সেনাপতি হিসেবে রণকৌশল তৈরির কাজ যে তিনি শুরু করে দিয়েছেন, সেটা এ দিন বুঝিয়ে দেন বুদ্ধবাবু। গ্রামাঞ্চলে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তুলনায় বয়স্ক অনেকেই ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছেন বলে সিপিএমে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বার সেই ব্যবস্থা অবসানের ইঙ্গিত দিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, “যাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তাঁকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই মাপকাঠি আমরা ঠিক করেছি। বয়স, কর্মতৎপরতার থেকেও স্থানীয় মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।” রাজ্য কমিটির বৈঠকে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত নিচুতলা পর্যন্ত কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বুদ্ধবাবু জানান।
এই কাজ করতে গিয়ে পাঁচ বছর আগে নেওয়া দলীয় সিদ্ধান্তও বদলাতে চান বুদ্ধবাবু। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শিক্ষকদের প্রার্থী করা হবে না। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের ব্যতিক্রম ঘটেছিল। কিন্তু বুদ্ধবাবুর মতে, “শিক্ষকদের পুরোপুরি ভোট থেকে বাদ দেওয়া ঠিক বলে মনে করি না।” প্রাথমিক শিক্ষকদের পুরো বাদ দেওয়া যাবে না বলেও বুদ্ধবাবু জানিয়েছেন।
জেলায় জেলায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করার ক্ষেত্রেও সাফল্য আসবে বলে দাবি বুদ্ধবাবুর। তাঁর কথায়, “একশো শতাংশ না পারলেও, যোগ-বিয়োগ করে দেখা যাচ্ছে, মূলত পারব।” তিনি একই রকম আশাবাদী শুদ্ধকরণের ব্যাপারে। যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, তত দিন অমিতাভ নন্দী, সুশান্ত ঘোষদের নিয়ে চলতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু বিরোধী আসনে বসার পরে বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বেই রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অমিতাভ, লক্ষ্মণ শেঠকে। নেওয়া হয়নি সুশান্তকে। দল থেকেই বাদ গিয়েছেন অনিল বসু। নাম নিয়ে আলোচনায় না-ঢুকলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দলে কারও কারও কিছু প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। যেমন মাতব্বরি। নাগরিক জীবনে হস্তক্ষেপ। আমরা বলেছিলাম, এগুলো একদম বন্ধ করতে হবে।” প্রশ্ন হচ্ছে, এ কাজে তাঁরা কতটা সফল হয়েছেন? বুদ্ধবাবুর জবাব, “এলাকা ধরে ধরে এই ধরনের প্রবণতা শোধরানোর চেষ্টা করেছি। অনেকটা পেরেছি।” তরুণদের নেতৃত্বে তুলে আনায় যে ঘাটতি রয়েছে, তা এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন বুদ্ধবাবু। বলেছেন, “দলে যে আরও নতুন বুদ্ধিমান ছেলে-মেয়ে দরকার এটা বুঝতে পারছি।” তরুণ নেতাদের মধ্যে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম বা সুজন চক্রবর্তীর নাম করে বুদ্ধবাবু বলেন, “যাঁর মধ্যেই গুণ দেখা যাচ্ছে, তাঁকেই তুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।” যদিও সিপিএমের অন্দরে কারও কারও অভিযোগ, জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তের সময় যে ভাবে অনেক কম বয়সেই বুদ্ধবাবু, বিমান বসু, অনিল বিশ্বাস, দীনেশ মজুমদারকে নেতৃত্বে তুলে আনা হয়েছিল, বুদ্ধবাবুর জমানায় তেমনটা হয়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.