ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রাক্তন
পাঁচ বছর পর দেশ হাসবে আমাদের দেখে
রাজ্যের শিল্প-ভবিষ্যৎ নিয়ে শিল্প-বণিক মহলের যা উদ্বেগ, তারই প্রতিধ্বনি করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর ভয়, শিল্পায়নের এই খরার জেরে পাঁচ বছর পরে রাজ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। যা শুনে শাসক দলের পাল্টা প্রশ্ন, বুদ্ধবাবুরা ৩৪ বছরে রাজ্যকে কোথায় নামিয়েছিলেন!
বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পরে এই প্রথম টিভি সাক্ষাৎকার দিলেন বুদ্ধবাবু। এবিপি আনন্দে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারেই প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল সরকারের শিল্পনীতি নিয়ে। তাঁর কথায়, “এই সরকার কী করতে চায় সেটাই বুঝতে পারছি না। জমি নীতিও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই নীতিহীনতা, দিশাহীনতা আমার ভয় লাগছে। এ পার্টি জেতে, ও পার্টি হারে ঠিক আছে। কিন্তু পাঁচ বছর পরে পশ্চিমবঙ্গ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কল-কারখানা নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা নেই সারা দেশ আমাদের দেখে হাসবে।”
বেসরকারি শিল্পের জন্য তাঁর সরকার যে এক ছটাকও জমি নেবে না, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পমহলের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মতো ছোট জোতের রাজ্যে তাদের পক্ষে সরাসরি চাষির থেকে জমি কেনা অসম্ভব। সিপিএম-ও বরাবরই এই মতের শরিক। বুদ্ধবাবু বলেন, “সরকার কিছু না-করলে শিল্পপতিদের হয় জমি মাফিয়াদের কাছে যেতে হয়। না হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।” সুতরাং শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত জানিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, “ব্রিটিশ আমলের আইন পাল্টানো উচিত। সামগ্রিক উন্নতি করতে হলে নতুন আইন চাই, যেখানে সরকারের হাতে বেশি ক্ষমতা দেওয়া উচিত। তবে শুধু আইন দিয়েও এটা করা যায় না। মানুষকে বোঝাতে হবে। তাঁরা দামটা যেন ঠিক পান। এবং যতটা সম্ভব পুনর্বাসন। এই তিনটিকে রক্ষাকবচ নিয়ে সরকারের এগোনো উচিত।”


কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাঁর দলও তো জমি অধিগ্রহণের বিরোধী। বুদ্ধবাবুর যুক্তি, অন্যান্য অনেক রাজ্যে শিল্পের নামে হাজার হাজার একর জমি নিয়ে আবাসন তৈরি হচ্ছে। সেটা মানা যায় না। “কিন্তু কোনও অবস্থাতেই জমি নেব না। ৫০ একর জমি নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এসইজেড গড়তে চাইলে তা-ও দেব না। এটা কী করে চলতে পারে!” প্রশ্ন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, “দলে বেসরকারি শিল্প সম্পর্কে একটা মনোভাব আছে, সবটা তাদেরই করে নিতে হবে। আমার মনে হয়, সেটা সম্ভব নয়।”
শিল্পায়নের স্লোগানে ভর করেই ২০০৬-এ সপ্তম বারের জন্য ক্ষমতায় বসেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু পরের পাঁচ বছরে সেই শিল্পায়ন করতে গিয়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঘটনা এবং তারই জেরে ২০১১ সালে ভরাডুবি। বুদ্ধবাবু অবশ্য এখনও মনে করেন, কিছু ভুলত্রুটি হলেও তাঁর শিল্পায়নের লক্ষ্য সঠিক ছিল। তিনি বলেন, “কৃষি ও কৃষকের উপর যে গুরুত্ব, তা আমাদের সরকার কখনওই ছোট করে দেখেনি। তবে আমরা ভাল করেই বুঝেছিলাম, শুধু কৃষির সাফল্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এগোতে পারে না। এ জন্য দরকার বড়, উৎপাদন শিল্প, যার হাত ধরে মাঝারি ও ছোট শিল্প আসবে।”
তাই সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা আর নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব তৈরির পরিকল্পনা করেছিল তাঁর সরকার। কিন্তু শিল্পায়নের পথে হাঁটতে গিয়ে কোথাও কোথাও যে ভুল হয়েছিল, তা কবুল করেন বুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়, “শিল্পায়নের দু’একটি ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। নন্দীগ্রামে জমিতে হাত না দিলেও আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার হয়ে গেল! আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিলই, বুঝিনি!”
বিধানসভা ভোটে হার যে শিল্পায়নপন্থী নীতি থেকে তাঁকে সরিয়ে আনতে পারেনি, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দেন তিনি। বলেন, “আমরা পরাজিত হলে, হয়েছি। তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি যে, জমি অধিগ্রহণে আরও সতর্ক হতে হবে।” তাঁর উপলব্ধি, “মানুষের মধ্যে যেন কোনও বিরোধ না থাকে। বিরোধমূলক অবস্থা নিয়ে শিল্প করা যায় না। এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আমরা পরাজিত হলাম। একটা দল জিতল। কিন্তু শিল্পায়নের প্রশ্ন তো বাতিল হতে পারে না।” সিঙ্গুরে জোর করে জমি নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বুদ্ধবাবু বলেন, “সিঙ্গুরে ৮০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আমরা নিশ্চয়ই পেয়েছিলাম। বলা হচ্ছে, গরিবের জমি নিয়ে বড়লোক শিল্পপতিদের দিচ্ছি। এটা ইস্যু নয়। ইস্যু হচ্ছে তার জন্য কত কর্মসংস্থান হবে!” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল। মুকুল রায়ের কথায়, “ভারতের সঙ্গে গোটা বিশ্ব বাংলার তথ্যপ্রযুক্তি, পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্যে উন্নতির কথা স্বীকার করছে। বলছে, বাংলার সার্বিক ভাবে উন্নয়ন হচ্ছে।” এই সঙ্গেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “বুদ্ধবাবুদের মুখে সমালোচনা শোভা পায় না। ওদের এখন চুপ করে বসে থাকা দরকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.