নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে অপহরণের অভিযোগে একই স্কুলের দশম শ্রেণির দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার ঘটনাটি ঘটে বসিরহাট থানার সর্দারআটি গ্রামে। শুভম দে ওরফে বাবু নামে নিখোঁজ ওই ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে তাকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দিয়েছে ওই দুই ছাত্র। এই ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখে গ্রামবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার ও গ্রেফতার করে।
বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুভমের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ ছাত্রের ছবি পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সদার্রআটি গ্রামের বাসিন্দা গণেশ দের ছেলে শুভম বসিরহাট টাউন হাইস্কুলে নবম শ্রেণির চাত্র। ওই স্কুলেই দশম শ্রেণিতে পড়ে অভিযুক্ত মিহির দাস ও অনুপম মণ্ডল। তিনজনেই বন্ধু। সোমবার স্কুলে যাওয়ার জন্য শুভম বাড়ি থেকে বের হয়। স্কুল ছুটির অনেক পরেও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। স্কুলে যোগাযোগ করে তাঁরা জানতে পারেন শুভম স্কুলেও যায়নি। শুভমকে যখন খোঁজা হচ্ছিল তখন অনুপমও সে দলে ছিল। এ দিকে মিহিরও ওই দিন স্কুল থেকে বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোক খোঁজ করলে জানা যায় সেও স্কুলে যায়নি। পরে রাত ৮টা নাগাদ মিহির বাড়ি ফিরে আসে। স্বাভাবিকভাবেই শুভমের পরিবারের লোকজন মিহিরকে শুভমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু মিহির শুভম সম্পর্কে অসংলগ্ন কথাবর্তা বলতে শুরু করলে তাঁদের সন্দেহ হয়। এরই মধ্যে তাঁরা জানতে পারেন সকালে শুভম, মিহির ও অনুপম একসঙ্গেই ছিল। মিহিরের পাশাপাশি অনুপমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে সে অস্বীকার করে। পরে দু’চার ঘা পড়তেই জানায়, সকালে সে মিহির ও শুভমকে নিয়ে গিয়েছিল ভ্যাবলা স্টেশনে। সেখানে মিহির ও শুভম শিয়ালদহগামী ট্রেনে করে কলকাতায় চলে যায়।” মিহিরকে চেপে ধরতে সে জানায়, পড়াশোনার জন্য বাড়িতে বকাবকি করায় তারা তিনজন ঠিক করেছিল কলকাতায় গিয়ে একসঙ্গে ঘরভাড়া নিয়ে দোকানে কাজ করে উপার্জন করবে। সেই মতো সে বাড়ি থেকে দু’ হাজার টাকা চুরি করে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনুপম পিছিয়ে গেলে সে ও শুভম কলকাতায় যাবে ঠিক করে ভ্যাবলা স্টেশনে যায়। তাদের সঙ্গে অনুপমও ছিল। সে ও শুভম ট্রেনে শিয়ালদহ যায়। কিন্তু সেখানে কোনও কাজ জোটাতে না পেরে ফিরে আসে উল্টোডাঙায়। মিহিরের দাবি, “উল্টোডাঙা থেকে আমরা দু’জন বাগুইআটিতে যাই ঘরভাড়া করতে। ঘর না পেয়ে ফের ফিরে আসি উল্টোডাঙায়। রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে আমি বাড়ি ফেরার কথা বললেও শুভম রাজি হয়নি। সে শিয়ালদহ চলে যায়।”
মিহিরের মুখে সব শুনে সন্দেহ বাড়ে গ্রামের লোকের। তারা তাকে ও অনুপমকে একটি ঘরে আটকে রাখে। অনুপমের বাবা পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বসিরহাট থানায় খবর দেন। আইসি শুভাশিস বণিক বলেন, “জেরায় অনুপম ও মিহির শুভমের পরিবারকে যা জানিয়েছিল পুলিশকে তাই-ই জানায়। তবে মিহিরের দাবি, শুভম তাকে ছেড়ে শিয়ালদহে যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা নেয়। বলেছিল, কাজ না পেলে বাড়ি ফিরে আসবে। তবে অভিযুক্তদের কথায় অসঙ্গতি থাকায় তাদের আরও জেরা করা হচ্ছে।” শুভমের বাবা গণেশবাবুর অভিযোগ, টাকার লোভে মিহির ও অনুপম পরিকল্পনা করে তাঁর ছেলেকে পাচারকারীর হাতে তুলে দিয়েছে।”
এ দিকে মঙ্গলবার সকালে অনুপম ও মিহিরকে তাদের পরিবারের লোকেরা থানায় দেখতে গেলে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাঁদের উপরে চাড়াও হয়। মিহিরের জ্যাঠামশাই গোবিন্দ দাসকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
যদিও অনুপম ও মিহিরের পরিবারের বক্তব্য, “ওরা যা করেছে, তা নেহাতই ছেলেমানুষি। পড়াশোনা নিয়ে বকাবকির জন্যই সম্ভবত এমন কাণ্ড করেছে। মিহিরের মতো শুভমও শীঘ্রই ফিরে আসবে।” |