|
|
|
|
|
ভোটে ত্রিপুরা |
ভোটের প্রচারে ঢিলেমিতে রাজি নন রতন
আশিস বসু • মোহনপুর |
|
রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দ্রুত সেরে নিচ্ছেন জরুরি কিছু কথা। সবে ফিরেছেন ছোট্ট একটা সভা সেরে। জানালেন, “এখনও বাকি রয়েছে দিনের প্রচারের কাজ।’’ একটু জিরিয়ে, চায়ে একটু চুমুক দিয়েই ফের পাশের পাড়ায় বেরিয়ে পড়বেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন গত দু’সপ্তাহ ধরে। ১৯৯৩ সাল থেকে টানা চারবার মোহনপুরের কংগ্রেস বিধায়ক রতনলাল নাথ এ বারও এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী, বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী নেতা। বামপন্থী রাজনীতিতে হাতেখড়ির পর সরাসরি কংগ্রেসে যোগদান।
মোহনপুর বিধানসভা কেন্দ্র এমন একটি ভৌগোলিক অঞ্চল যেখানে উর্বর কৃষিজমি, চা-বাগান, রবার বাগান ছাড়াও রয়েছে পাহাড়ি টিলা, গভীর জঙ্গল। আর একটু একটু করে এগোলেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। গত বেশ কয়েক বছর ধরে মোহনপুরবাসীর, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী বিজয়নগর অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, ভোটের আগেই এখানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যেত। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসায় এখন অবশ্য তা হয় না।
এ হেন মোহনপুরে রতনবাবু তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বার বার বলছেন, ‘‘বামফ্রন্টের দুর্নীতি, স্বজনপোষণই এ বার রাজ্যের ভোটদাতাদের প্রধান বিবেচ্য। পরিবর্তনের মাধ্যমে কংগ্রেস-জোট রাজ্যে দেবে স্বচ্ছ প্রশাসন। তাতে মোহনপুরের মানুষও সামিল হন।’’ বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে ‘বামফ্রন্টের দুর্নীতি’ নিয়ে সবচেয়ে সরব রতনবাবুর কথায়, ‘‘কংগ্রেস আমলে ত্রিপুরায় বিপিএলের সংখ্যা ছিল ৫৭ শতাংশ, এখন রাজ্য সরকারের খতিয়ান অনুসারে তা ৬৭ শতাংশ।” তা হলে শ্রমিক, কৃষক, দরিদ্র মানুষের বামফ্রন্টের ‘উন্নয়ন’ কাদের জন্য? কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির টাকা যাচ্ছে কোথায়?প্রশ্নগুলি রতনবাবু ছুড়ে দিচ্ছেন ভোটারদের সামনে।গত চার বারের বিধায়ক হয়েও দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করছেন কেন? তিনি নিজেও বুঝেছেন ‘গতিক’ সুবিধার নয়। গত বারের তুলনায় এই কেন্দ্রে ভোট বেড়েছে ১০,৫২২টি। আবার সীমা পুনর্বিন্যাসের কারণে নতুন দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত---সাতডুবিয়া এবং কলকলি, এ বার যুক্ত হয়েছে মোহনপুরের সঙ্গে। এ দু’টিতে সিপিএমের প্রভাব ভালই। তা ছাড়া, গত বারে মাত্র ১৩৫৬টি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন রতমবাবু। তাই সজাগ রতনবাবু কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
কংগ্রেস প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের গত বারের বিজিত প্রার্থী সুভাস চন্দ্র দাসের হয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর-সহ দলীয় কর্মীরা ভোট ময়দানে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। মোহনপুরে কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির প্রসঙ্গে বিজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘এলাকায় উন্নয়নের পরিকাঠামো সম্প্রসারিত হলেও ওই পঞ্চায়েতগুলিতে চলছে নগ্ন দলবাজি।’’
মোহনপুর কেন্দ্রে জাতি-উপজাতি, তফশিল, মুসলিম-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। অধিকাংশ গ্রামের রাস্তা কিছু দূর পর্যন্ত অ্যাসফল্ট বিছানো। তারপর বে-আব্রু। আরও ভিতরে গেলে ইট বিছানো, কাদামাটির ঢল। তুলাবাগানের বাসিন্দা ননীগোপাল দাস, বিষ্ণু বণিক, সুবোধ সরকারের ক্ষোভ, ‘‘আজও এলাকায় জলের সংকট মিটল না। উপরের দিকে গেলে রাস্তার বেহাল অবস্থা চোখে পড়বে সহজে। পরিবহণ সমস্যা তো রয়েছেই।’’
ভোট আসে, ভোট যায়। এ বারও এসেছে। চার বারের বিজয়ীর কিছু কাজ যে রয়েছে তা স্বীকার করেন এলাকার মানুষ। তবু মানুষের মন তো! রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস, কিন্তু সেই পরিবর্তনের স্লোগানকে মোহনপুরের মানুষ গ্রহণ করবেন না তো? কার্যত দরজায় দরজায় ঘুরে তারই পরিমাপ করে চলেছেন প্রবীণ রাজনীতিক রতনলাল নাথ। |
|
|
|
|
|