এসএসকেএম হাসপাতালের উল্টো দিকে জল আনার নাম করে ট্যাক্সি থেকে নেমে গেলেন চালক। পিছনে বসে রইলেন ব্যবসায়ী। আচমকা পিছনের দু’দিকের দরজা খুলে ব্যবসায়ীর দু’পাশে বসে পড়ল দুই যুবক। অন্য এক যুবক উঠে বসল চালকের আসনের পাশে। নিজের আসনে ততক্ষণে উঠে বসেছেন ট্যাক্সিচালক। গাড়ি চলতেও শুরু করল। চলন্ত গাড়িতে বসেই অস্ত্র দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে থাকা সওয়া এক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিল দুষ্কৃতীরা। ওই ব্যবসায়ীকে নামিয়ে দেওয়া হল প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে।
হেস্টিংস থানায় সোমবার এই অভিযোগ দায়ের করেছেন বিকাশ হেতনপুরিয়া নামে ওই ব্যবসায়ী। পুলিশকে তিনি জানান, রাত সাড়ে আটটা থেকে ন’টা পর্যন্ত এজেসি বসু রোড, হরিশ মুখার্জি রোড, এলগিন রোড, ডি এল খান রোড হয়ে বিদ্যাসাগর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড পেরিয়ে প্রিন্সেপ ঘাটে তাঁকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
|
বিকাশ হেতনপুরিয়া |
পুলিশ জানায়, ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি পেশায় কর পরামর্শদাতা। সোমবার মেটকাফে স্ট্রিটের অফিস থেকে বেরিয়ে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ থেকে ট্যাক্সিতে ওঠেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দুই কর্মী। তাঁর কাছে দু’টি ব্যাগে ছিল বিভিন্ন মক্কেলের থেকে জমা পড়া সওয়া কোটি টাকা। পুলিশকে বিকাশ জানান, কর্মীদের রাজভবনের সামনে নামান তিনি। বিকাশের অভিযোগ, হসপিটাল রোডে আচমকা গাড়ি থামিয়ে ট্যাক্সিচালক তাঁকে বলেন, গাড়ি গরম হওয়ায় জল দরকার। রাস্তার কল থেকে জল আনতে নামেন তিনি। চালক নামতেই ওই তিন যুবক উঠে তাঁর চশমা খুলে দেয়। ফলে তিনি ভাল দেখতে পাচ্ছিলেন না। এর পরে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
বিকাশ পুলিশকে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের খপ্পর থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি কয়েক জনকে ফোন করেন এবং তাঁদের পরামর্শে হেস্টিংস থানায় যান। পুলিশকে জানান ট্যাক্সির নম্বরও। ওই নম্বর ধরেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ব্যবসায়ীর বয়ান অনুযায়ী দুষ্কৃতীদের স্কেচ আঁকাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগে বেশ কিছু অসঙ্গতি মিলেছে। মঙ্গলবার বিকাশকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানান, বিভিন্ন মক্কেলের থেকে জানুয়ারি মাসের সংগ্রহ করা টাকা নিয়ে তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। ওই টাকা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার কথা ছিল। তিনি যে টাকা নিয়ে বাড়ি যাবেন, তা অফিসের কর্মীরা ছাড়া আর কেউ জানত না বলেও বিকাশ জানান। মঙ্গলবার জেরা করা হয় বিকাশের অফিসের এক কর্মীকেও।
তদন্তে নেমে পুলিশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছে না। টাকা ছিনিয়ে নিলেও ব্যবসায়ীর সোনার আংটি বা অন্য কিছু নেয়নি দুষ্কৃতীরা। পুলিসের প্রশ্ন, লুঠ করাই যদি দুষ্কৃতীদের উদ্দেশ্য হয়, তা হলে আংটি বা মোবাইল তারা কাড়ল না কেন। বিকাশ পুলিশকে জানান, তিনি ট্যাক্সির পিছনে বসেছিলেন। কিন্তু তিনি চিৎকার করলেন না কেন? পুলিশ আরও জানায়, ওই ব্যবসায়ীর কাছে সত্যিই অত টাকা ছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। পরীক্ষা করা হচ্ছে তাঁর মোবাইলের কল-লিস্ট। |