এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এ বার ওই সংসদের বিরুদ্ধে আইনের পথ ধরলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের
তিন অফিসার। তাঁদের মধ্যে দু’জন যুগ্ম রেজিস্ট্রার। সংসদের ‘অ্যাকাডেমিক অডিট’-এর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছেন তাঁরা।
ওই তিন অফিসার এবং দুই শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিল সংসদ। তাদের দাবি, নিজেদের সীমার মধ্যে থেকেই কাজ করছে তারা।
কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট-কাউন্সিলের সদস্যদের নাম সুপারিশ করে চিঠি পাঠানো। কখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষিকা তপতী বসুর বিরুদ্ধে তদন্ত, কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের বিরুদ্ধে তদন্ত। আবার কখনও যাদবপুরে ‘যোগ্য’ প্রার্থীকে বঞ্চিত করে ‘অযোগ্য’কে নিয়োগ করার কথা জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখা। অ্যাকাডেমিক বা শিক্ষা অডিটের নামে এই ধরনের বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদ।
তেমনই এক উদ্যোগ হিসেবে প্রশ্ন সংসদ প্রশ্ন তুলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অফিসার এবং দুই শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে। সংসদের সদস্য-সচিব সুব্রত ঘোষ বলেন, “ওই পাঁচ জনের নিয়োগের ব্যাপারে আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক ভাবে সেই সব অভিযোগের ভিত্তি আছে বলে মনে হয়েছে। তাই কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু হয়েছিল। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কিছু নথিপত্র চায়।” সুব্রতবাবু জানান, সমাবর্তনের কাজে ব্যস্ত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ নথি পাঠাতে কিছুটা সময় চান। তার পরেই তিন অফিসারের দায়ের করা মামলার কাগজ এসে পৌঁছয় সংসদে। আজ, বুধবার মামলাটির শুনানি আছে বলে জানান সংসদের সদস্য-সচিব।
যাদবপুরের প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ সংসদের কাজে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাঁদের এক জন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব আইন এবং নিয়মবিধি অনুযায়ী চলে। এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র অনুমতি ছাড়া কারও নিযুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। সংসদ কোন এক্তিয়ারে এ-সব নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাগজপত্র চেয়ে পাঠায়, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না!”
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে মূলত পরামর্শদাতার ভূমিকা নেয় উচ্চশিক্ষা সংসদ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র বিভিন্ন সুপারিশ, নতুন নিয়ম কী ভাবে কার্যকর হবে, সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে তারা।
কিন্তু উচ্চশিক্ষা সংসদ নিজেদের এক্তিয়ার ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ জানিয়ে ইতিপূর্বেই আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘কুটা’র সদস্যেরা। ওই সংগঠনের এক নেতা বলেন, “হঠাৎ ওঁদের (সংসদের) এক দল প্রতিনিধি এসে কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। আচার্য থেকে শুরু করে উপাচার্য পর্যন্ত সকলকেই বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
সীমা ছাড়ানোর অভিযোগের ব্যাপারে সংসদের বক্তব্য কী?
সদস্য-সচিব সুব্রতবাবু বলেন, “আইনে কয়েকটি শব্দ নেই বলে উচ্চশিক্ষা সংসদের এক্তিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কিছুই করা হচ্ছে না। তবে বিভ্রান্তি কাটাতে আইনে কিছু পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া চলছে।” |