পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলায় পুলিশের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য রাজ্য সরকারের মনোভাবকেই দায়ী করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার বর্ষপূর্তির দিনে এবিপি-আনন্দে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ওই মহিলা সম্পর্কে নেতারা (তৃণমূলের) কী ভাষায় কথা বলছেন! সরকারের এই মনোভাব পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে গেল।”
২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে পার্ক স্ট্রিটে পানশালা থেকে এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। তদন্তের প্রথম পর্যায়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে আখ্যা দেন। মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রীরা ওই মহিলার চরিত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারও সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। ওই সময় সরকারের মনোভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে তদন্ত চালিয়েছিলেন কলকাতার তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান দময়ন্তী সেন। মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে দিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেন তিনি। কিন্তু তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে বদলি করা হয়। মঙ্গলবার সরকারের মনোভাবের কথা তুলে ফের সেই বিতর্কই উস্কে দিলেন বুদ্ধবাবু।
বুদ্ধবাবু এ দিন বলেন, “আমাদের সময়েও পার্ক স্ট্রিটে অপরাধ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই সরকার তাদের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে।” বানতলার ধর্ষণের প্রসঙ্গও টেনে আনেন বুদ্ধবাবু। তিনি বলেন, “জ্যোতিবাবুর একটা মন্তব্য নিয়েই শুধু খবর হয়। কিন্তু বানতলায় যারা ওই কাজ করেছিল, তারা সারা জীবন জেল খাটছে, সেটা খবর হয় না।” সরকারের এই প্রতিক্রিয়াটিই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বুদ্ধবাবু।
এই প্রসঙ্গে বারাসতে রাজীব দাস-হত্যার কথা ওঠে। বুদ্ধবাবু বলেন, “সে সময় সরকারের ভূমিকার কথা ভেবে দেখুন। আমরা একবারও ঘটনাটা মিথ্যা বলে অপরাধকে প্রশয় দিইনি। পুলিশের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এখন হয় ঠিক উল্টো। মুখ্যমন্ত্রীই বলেন সাজানো ঘটনা, আর এতে অপরাধী, দুষ্কৃতীরা উৎসাহিত হয়।”
শুধু বুদ্ধবাবুই নন, পার্ক স্ট্রিটের বর্ষপূর্তির দিনে সরকারের এই মনোভাবের কথা তুলে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছে কংগ্রেসও। এ দিন ওই ঘটনায় সরকারের ভূমিকার নিন্দা করে দু’টি মিছিল বের হয়। দুপুরে শহরের বিশিষ্ট জনেদের মিছিল গাঁধী মূর্তি থেকে পার্ক স্ট্রিটে যায়। সন্ধ্যায় মোমবাতি নিয়ে মিছিল করে কংগ্রেস। পার্ক স্ট্রিটে ঢোকার সময়ে দু’টি মিছিলকেই আটকে দেয় পুলিশ। মিছিলে কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডে সরকারের ভূমিকা টেনে এনে বলেন, “পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার এক বছর পরেও চার্জ গঠন করা গেল না। দিল্লির ঘটনায় সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, কমিশন গঠন করা হয়েছে। আর এখানে ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী তাকে সাজানো বলছেন!”
কড়েয়ায় আমিনুলের আত্মহত্যার প্রসঙ্গেও এ দিন বুদ্ধবাবু বলেন, “খুব খারাপ হয়েছে। যে ভাবে পুলিশ তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করেছে, তাতে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।” যদিও দোষীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের উপরে খবরদারির অভিযোগ বাম আমলেও একাধিক বার
উঠেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও আলিমুদ্দিনে এসে মিটিং করে গিয়েছেন মজিদ মাস্টার। বুদ্ধবাবু অবশ্য দাবি করেন, “আমি দলের কাউকে গ্রেফতার করতে কোনও দিন বারণ করিনি। মজিদ মাস্টারকে গ্রেফতার করতেও বারণ করিনি।” |