প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় বিশিষ্ট জনেদের পাশে পেতে বিরোধীদের দুই শিবিরে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রতিযোগী কংগ্রেস এবং সিপিএম।
গত বিধানসভা ভোটের আগে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট জনেদের একটা বড় অংশকে ময়দানে নামিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঊনিশ মাসের মধ্যেই একদা মমতা-পন্থী সেই বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ ‘মা-মাটি-মানুষে’র সরকারের প্রতি বিরূপ হয়েছেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কংগ্রেস সেই বিশিষ্টদের নিজেদের শিবিরে সামিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আবার কেন্দ্রীয় সরকার-বিরোধী আন্দোলনে একদা তাঁদের সঙ্গে থাকা বিশিষ্টদের হাত ধরতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্বও।
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা পথে নামেন। মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন ময়দানের গাঁধী মূর্তি থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিলে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, নির্বেদ রায়, মালা রায়, দেবব্রত বসু, কৃষ্ণা দেবনাথদের সঙ্গে সুনন্দ সান্যাল, অসীম চট্টোপাধ্যায়, সমীর আইচ, মীরাতুন নাহার, শাশ্বতী ঘোষ, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, অসীম গিরির মতো বিশিষ্ট জনদের দেখা গিয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর্ব থেকে মমতা ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত ওই বিশিষ্টদের তৃণমূলের সঙ্গে দেখা যেত। বস্তুত, রাজ্যে শাসক বদল চেয়ে তাঁরা ‘পরিবর্তনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত হন। কিন্তু ইদানীং তাঁরা সরকারের নানা ‘অন্যায়’-এর বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। |
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ধর্মতলায় বিশিষ্ট জনদের বিক্ষোভ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র |
আবার সাধারণ ধর্মঘট থেকে ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’কে ছাড় দেওয়ার জন্য সিটু নেতাদের কাছে ‘ভাষা শহিদ স্মারক সমিতি’র কবি-সাহিত্যিক-নাট্যব্যক্তিত্বরা আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছেন সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী। তা হলে তাঁরাও কি একদা ‘পরিবর্তনপন্থী’ বিশিষ্টদের কাছে টানতে চাইছেন? শ্যামলবাবুর স্পষ্ট জবাব, “শঙ্খবাবুরা আমাদের কাছে যে আবেদন করেছিলেন, তার সঙ্গে বাংলার একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। আর ওই কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা বাংলার আবেগের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁরা বাংলার সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব।”
এ দিনের মিছিলের প্রেক্ষিতে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, কংগ্রেসও একদা ‘পরিবর্তনপন্থী’দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরিতে তৎপর হয়েছে। মমতার সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছিল ‘পরিবর্তনপন্থী’ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মমতা তাঁর বাড়িতে যান। তার পর দিনই প্রদীপবাবুরাও মহাশ্বেতা দেবীর বাড়ি যান। রাজ্যের বর্তমান বেহাল আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরব হওয়ার জন্য লেখিকাকে অনুরোধও করেছেন প্রদীপবাবু। এমনকী, কয়েক দিন আগে প্রদীপবাবু বইমেলায় কংগ্রেসের স্টলে মহাশ্বেতা দেবীকে সংবর্ধনাও দিয়েছেন। তবে বিশিষ্টদের কাছে টানার বিষয়ে প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “অতীতে এঁরা সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন, আজও একই কারণে তাঁরা প্রতিবাদী হয়েছেন। তাঁদের যাত্রাপথে সামিল হয়েছি।”
বিশিষ্টরাও কংগ্রেস বা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন। এ দিনের মিছিল প্রসঙ্গে সুনন্দবাবুদের বক্তব্য, তাঁরা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন। ঘটনাচক্রে তৎকালীন তৃণমূলের বক্তব্য তাঁদের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। তাঁরা বামফ্রন্ট সরকারের পরিবর্তনও চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকার অন্যায় করলে, তার বিরুদ্ধে সরব হবেন না, এমন কথা বলেননি। পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় তাঁদের স্বর কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। এটা একটা সমাপতন মাত্র। এ দিন পার্ক স্টিটে পুলিশ তাঁদের মিছিল আটকায়। প্রতিবাদে সমীরবাবুর বক্তব্য, “নন্দীগ্রাম কাণ্ডের প্রতিবাদে বামফ্রন্ট সরকার যেখানে আমাদের মিছিল আটকেছিল, সেই জায়গাতেই তৃণমূল সরকার এই মিছিল আটকাল। সব সরকারের মুখই এক রকম।” |