হাবরার বাণীপুরে শুরু হল ৫৯তম ‘বাণীপুর লোক উৎসব’। আয়োজনে বাণীপুর লোক-উৎসব কমিটি। রবিবার এই মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট পুতুলনাট্য শিল্পী প্রফুল্ল কর্মকার। উৎসব চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রবিবার দুপুরে স্থানীয় সবুজ সঙ্ঘের মাঠ থেকে উৎসব উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। এই শোভাযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ ছিল গরুর গাড়ি, পালকি, পুরুলিয়ার ছৌ-নৃত্য এবং রণপা। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ শক্তিনাথ ঝা প্রমুখ। উৎসবে মোট ৬টি মঞ্চ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে হিমাংশু বিমল মজুমদারের নামে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হিমাংশুবাবু ছিলেন বাণীপুর শিক্ষাকেন্দ্রের অন্যতম রূপকার। তার নামে এবার থেকে শুরু হয় স্মারক প্রদানও। প্রথমবারের এই পুরস্কার পাচ্ছেন লোকনাট্য লেটো শিল্পী মমতা সরকার। উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয় একটি স্মরণিকাও। |
লোক-উৎসবের অন্যতম আকষর্ণ ছৌ-নৃত্য। |
উৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি শান্তনু দত্ত চৌধুরী বলেন, “এই উৎসব আজ জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের প্রধান লোক-উৎসবে পরিণত হয়েছে।” তাঁর কথা সমর্থন করেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “বাংলার লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। দুঃখ লাগে, অনেকে তাঁর ওই প্রচেষ্টাকে অনেকে ব্যঙ্গ করছেন। কলকাতাকে বলা হত সাংস্কৃতিক রাজধানী। লোকসংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব হয়নি।” প্রতিদিন বেলা ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে মেলা। উৎসবে রয়েছে পটচিত্র প্রদর্শন, পটের গান ও বেণীপুতুল নাচ। রাজ্য সরকারের লোক-সংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের সৌজন্যে মঞ্চে বাউল গাইবেন বিবেক ক্ষ্যাপা, আক্কাস ফকির, মনসুর ফকির, ষষ্ঠী ক্ষ্যাপা প্রমুখ। বহুরুপী সাজে থাকবেন সুবল দাস বৈরাগ্য ও নিত্যানন্দ মোহান্ত। |
|
|
হস্তশিল্প ও পটচিত্রের পসরা নিয়ে শিল্পী। |
|
রয়েছে ঢোলবাদন, সানাই, পুতুলনাটক, ছৌ-নৃত্য, যাদু প্রদর্শনী, লোকনাট্য-লেটো, যাত্রা, চলচ্চিত্র, ঝুমুর, কবিগান, পল্লিগীতি, মতুয়াপটের গান, পালাকীতর্র্ন, লোকনৃত্য রায়বেঁশে, তরজা গান। রয়েছে স্বাস্থ্যমেলা ও শিশুস্বাস্থ্য প্রদর্শনী। খেলার মধ্যে রয়েছে কাবাডি, ক্যারাটে, যোগাসন, লাঠিখেলা, ভলিবল ইত্যাদি। বিভিন্ন বিষয়ের উপর থাকছে আলোচনাসভা। নাট্য বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টচার্যের মতো ব্যাক্তিত্ব।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামী বছর ২ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাজ্য সরকারের ২০টি দফতরকে মেলার সঙ্গে যুক্ত করব। তারা স্টল দেবে।” উৎসবে কয়েক লক্ষ মানুষ ভিড় করবেন বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বছরভর এই উৎসবের অপেক্ষাতেই থাকেন তাঁরা। এটাই এখন তাঁদের প্রধান উৎসব। |