নেপালের নেতা, ব্যবসায়ীর দেহ খাদে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
জমি দেখানোর টোপ দিয়ে সুকনায় নিয়ে গিয়ে নেপাল শিবসেনা পার্টির সভাপতি চন্দ্রপ্রকাশ চৌরেলকে (৪৫) দুষ্কৃতীরা খুন করেছে বলে পুলিশের সন্দেহ। নেপালের সুপারি ব্যবসায়ী গঙ্গাবিষাণ রাঠী (৬৯) অপহরণ ও খুন কাণ্ডের তদন্তে নেমে এমনই জানতে পারল পুলিশ। পুলিশ জেনেছে, কিছু দিন ধরেই শিলিগুড়ির কাছে নির্জন এলাকার খোঁজ করছিল চৌরেল। তাঁকে খুনের অভিযোগে ধৃত সুরেন্দ্র মিশ্র সুকনার ৯ মাইলের কাছে জঙ্গল ঘেরা নির্জন জায়গা আছে বলে জানায়। তা দেখতে ৭ জানুয়ারি নেপালের বিরাটনগর থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছয় চৌরেল। ওই দিন শিলিগুড়ির একটি হোটেলে তিনি ছিলেন। ৮ জানুয়ারি জঙ্গল ঘেরা ওই জায়গায় নিয়ে গিয়ে পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে চৌরেলকে খুন করা হয়। পরে দেহ খাদে ফেলে দেওয়া হয়।
রবিবার দিল্লির গোয়েন্দা দফতরের একটি দল ওই খুনের ঘটনায় ধৃত সুরেন্দ্র, অভিজিৎ বসু এবং সুরেন্দ্রের স্ত্রী মণিকাকে জেরা করে। নেপাল পুলিশের তরফেও বিষয়টি নিয়ে শিলিগুড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে আর্জি জানাতে পারে নেপাল পুলিশ। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন না। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, সুরেন্দ্র মিশ্র নিজের ব্যবসার কাজে মাঝে মধ্যে নেপাল-বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। তার কাজে নেপাল শিবসেনা পার্টির সভাপতি চৌরেল সহযোগিতা করতে। চৌরেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল রাঠীর। সেই সূত্র ধরেই রাঠীর সঙ্গে ঘনিষ্টতা হয় সুরেন্দ্রের। চৌরেল কয়েক দফায় সুরেন্দ্রের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নেয়। তা নিয়েই দু’জনের সম্প্রতি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। চৌরেলের কাছে টাকা ফেরত না পেয়ে তাঁকে খুনের ছক কষে সুরেন্দ্র। মাঝে কয়েক বার চৌরেল শিলিগুড়িতে আসলেও তাঁর সঙ্গে বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকায় সুরেন্দ্র তাঁকে খুন করার সুযোগ পায়নি। ডিসেম্বর মাসে সুরেন্দ্রের কাছে জমির খোঁজ করে চৌরেল। সেই সময়ই তিনি সুরেন্দ্রকে প্রস্তাব দেয়, রাঠীকে অপহরণ করে সাড়ে ৩ কোটি টাকা আদায়ের। ওই টাকা থেকে সে সুরেন্দ্রের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরিকল্পনা মতোই ১০ জানুয়ারি রাঠীকে শিলিগুড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানায় চৌরেল। ৭ জানুয়ারি শিলিগুড়ি আসে চৌরেল। কিন্তু, এ বারে তাঁর সঙ্গে কোনও দেহরক্ষী ছিল না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই জমি দেখানোর নাম করে ৯ মাইলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। টাকার লোভ দেখিয়ে অভিজিৎকে সঙ্গে নেয় সুরেন্দ্র। ১০ জানুয়ারি রাঠী শিলিগুড়িতে পৌঁছলে তাঁকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার নাম করে গাড়িতে তুলে নেয় দুষ্কৃতীরা। গাড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করে ৯ মাইলের জঙ্গলে রাঠীর দেহ ফেলে দেওয়া হয়। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় আরও এক জন যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।” |