তৃণমূল ‘শৃঙ্খলাহীন’, আক্রমণ শানালেন গুরুঙ্গ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করার পরে এ বার সরাসরি তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সোমবার দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে এক দলীয় সভায় গুরুঙ্গ তৃণমূলকে ‘শৃঙ্খলাহীন দল’ বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে সিপিএমের শৃঙ্খলার প্রশংসাও করেছেন তিনি। বলেছেন, “সিপিএম কখনও পাহাড়ে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেনি।”
ওই সভাতেই এই দিন গুরুঙ্গ জানিয়ে দিয়েছেন আলাদা রাজ্যের দাবিতে পুরো দস্তুর আন্দোলনে নামতে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রধানের পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিতে চান। তবে রাজ্য সরকার ও শাসক দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চাইলেও এখনই জিটিএ তাঁরা হাতছাড়া করবেন না। গুরুঙ্গের কথায়, “আমি জিটিএ চুক্তিতে সই করিনি। রোশন গিরি করেছেন। যে হেতু আন্দোলনের জেরে অন্তবর্র্র্তী ব্যবস্থা হিসেবে জিটিএ গড়া হয়েছে, তাই রোশনরা সকলে মিলে তা চালাবেন। আমি ছাড়া কেউ ইস্তফা দেবেন না। আমি আন্দোলন জোরদার করার জন্যই ইস্তফা দেব।” কবে ইস্তফা দেবেন সেই প্রশ্নে গুরুঙ্গের জবাব, “শীঘ্রই যে কোনও দিন।”
দার্জিলিঙের সভায় গুরুঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র
তবে তৃণমূল ও সিপিএম দুই দলই গুরুঙ্গের এই বক্তব্য সম্পর্কে সতর্ক হয়ে মন্তব্য করেছেন। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “গুরুঙ্গ কোন প্রেক্ষাপটে, ঠিক কী বলেছেন তা বিশদে খোঁজ নিয়ে মন্তব্য করব। তবে এটা বলতে পারি, তৃণমূলের দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “অনেক মানুষই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনেক কিছু বুঝতে পারেন। গুরুঙ্গের যদি এমন উপলব্ধি হয়ে থাকে তা সত্যিই ভাল ব্যাপার।”
দার্জিলিংয়ের ম্যালে উত্তরবঙ্গ উৎসবের সভায় ২৯ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলার পরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে তার পর থেকে প্রায় নিয়মিতই হুমকি দিচ্ছেন মোর্চা নেতারা। এ দিনও গুরুঙ্গের অভিযোগ, “তৃণমূল শৃঙ্খলাহীন দল। মুখ্যমন্ত্রীও দার্জিলিঙের ম্যালে অনভিপ্রেত কথাবার্তা বলেছেন। লেপচাদের পৃথক কাউন্সিলর গড়ার বিষয়টি জিটিএ চুক্তিতে নেই। জবরদস্তি লেপচাদের বিষয়টি চুক্তিতে ছিল বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে পাহাড়ে অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে।” তাঁর কথায়, “এরা কে কখন কী করছেন, তার কোনও ঠিক ঠিকানাই নেই। আমাদের এখানে অনুষ্ঠান হল, কিন্তু জিটিএ-র সঙ্গেই আলোচনা করা হল না।” সেই সঙ্গে ফের নাম না করেই গুরুঙ্গ এই দিন ফের মমতারও সমালোচনা করেছেন। গুরুঙ্গের হুঁশিয়ারি, “আগামী দিনে পাহাড়ে অশান্তি হতে পারে এমন কথাবার্তা কেউ বলার চেষ্টা করলে যথাযোগ্য জবাব দেওয়া হবে।” মোর্চার অন্দরের খবর, এ দিন বৈঠকে গুরুঙ্গ দলের লোক জনকে কলকাতায় গিয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অবস্থান, বিক্ষোভের প্রস্তুতি জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গুরুঙ্গ বলেছেন, পাহাড়ে আন্দোলন করতে কাউকে হাতে অস্ত্র ধরতে বলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে পাহাড়ের সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা জানিয়েছেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, “পাহাড়ে আমাদের বিরোধী দলের প্রতিনিধিদেরও ডাকব। এক সঙ্গে গোর্খাল্যান্ডের জন্য লড়ব।” পাহাড়ে মোর্চা বিরোধী দলগুলিও গুরুঙ্গের বক্তব্য সম্পর্কে সাবধানে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মোর্চা বিরোধী দলের নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, “নাটকীয় অনেক ঘোষণাই হচ্ছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সত্যিই আন্দোলন হবে আমরা তাতে সামিল হব। বাস্তবে কী ঘটে সেটা দেখেই পদক্ষেপ করব।”
মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ চিফের পদত্যাগের হুমকির খবর পৌঁছেছে মহাকরণেও। সরকারি সূত্রের খবর, এ দিনই মহাকরণে পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। মহাকরণের এক পদস্থ কর্তা জানান, জিটিএ-এর মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়নে আরও গতি আনার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, গুরুঙ্গ চুক্তিতে সই না-করলেও ওই অনুষ্ঠানে তিনি আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন। তাই জিটিএ যাতে মসৃণ ভাবে চলে সে দায়িত্ব তাঁর উপরেও বর্তায়।
সেই কারণে, গুরুঙ্গকে ফের আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্যও সরকারি তরফে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.