রাজ্য সরকারের সমালোচনায় সরব আইনজীবী কল্যাণ
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকর্ম নিয়ে হাইকোর্টের এজলাসে দাঁড়িয়ে সরব হলেন তাঁরই দলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করে কল্যাণবাবু বলেন, বর্তমান সরকারের কাজকর্মে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এটা অন্যায়।
আইনজীবী হিসেবে কল্যাণবাবুর এই ভূমিকাকে সমর্থনই জানিয়েছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার ও সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুরসভায় সিপিএমের প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। কল্যাণবাবুর দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলেরই এক শীর্ষ নেতা বলেন, “কল্যাণবাবু একজন পেশাদার আইনজীবী। তাঁর পেশার সঙ্গে দলের যোগ কোথায়?”
শিয়ালদহ আদালত, আদালত চত্বরের উন্নয়ন ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র চাওয়া হয় পূর্বতন বাম সরকারের আমলে। সর্বোচ্চ ৩৫ কোটি টাকা দর দিয়ে কেএমডিএ-র কাছ থেকে এই নির্মাণ কাজের বরাত পায় ঋদ্ধি সিদ্ধি মল ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। ২০০৭ সালে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগের (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি) চুক্তি হয়। কেএমডিএ-র সঙ্গেও তাদের চুক্তি হয়। ৩৮ কোটি টাকা খরচ করে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে সংস্থাটি। সেখানে কাজকর্ম শুরুও হয়ে যায়। কথা ছিল, কাজ শেষ হওয়ার পরে সংস্থা-কে লিজ দলিল দেওয়া হবে। সেই মতো ওই সংস্থা কেএমডিএ-র কাছে লিজের জন্য আবেদন করে। কিন্তু লিজ পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে সরকার বদল হয়।
নতুন সরকারের কাছেও সংস্থা লিজের জন্য আবেদন করে। কিন্তু এক দফতর অন্য দফতরের ঘাড়ে দোষ চাপাতে থাকে। লিজ দলিল না পাওয়ায় বিপুল অর্থ খরচ করার পরেও বাণিজ্যিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে সংস্থাটি সরকারকে জানায়। তার পরেও সরকারের তরফে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
এ দিন ওই মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী সুশোভন সেনগুপ্ত বলেন, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর আগের সরকারের সময়েই কেএমডিএ-র কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছিল। তা না মেলায় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর ওই জমির লিজের আবেদনে সাড়া দেয়নি। রাজ্য সরকারের এই যুক্তিকে আক্রমণ করেই কল্যাণবাবু বলেন, সরকারের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, কেএমডিএ, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর যেন এক সরকারের অঙ্গ নয়। সরকারের এই ভূমিকাকেই কল্যাণবাবু অন্যায্য এবং অস্বচ্ছ বলে মন্তব্য করেন।
সিপিএমের সাংসদ থাকার সময় নিজে কোনও রাজ্য সরকার-বিরোধী মামলা গ্রহণ না করলেও আইনজীবী হিসেবে কল্যাণবাবুর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মক্কেলের হয়ে সরকার-বিরোধী মামলা তিনি লড়তেই পারেন। তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সাংসদ হলেও এক জন আইনজীবীর নৈতিকতা অনুযায়ী মক্কেলের স্বার্থে সরকারের সমালোচনায় অন্যায় নেই। না করলে বরং তিনি আইনজীবীর কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হতেন।”
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেন, “মক্কেলের স্বার্থে এক জন আইনজীবী যদি মনে করেন, সরকার-বিরোধী কথা বলা প্রয়োজন, তা হলে তিনি নিশ্চয় তা বলবেন। আইনজীবী হিসাবে শপথ নেওয়ার সময়েই মক্কেলের স্বার্থে নিষ্ঠাবান থাকার কথা বলতে হয়।” কল্যাণবাবু আইনজীবী হিসেবে সঠিক এবং নৈতিক কাজ করেছেন বলেই বিকাশবাবুর মত।
কল্যাণবাবু নিজে কী বলছেন? তৃণমূলের এই সাংসদের কথায়, “আমি আইনজীবী। এটাই আমার পেশা। এটা নতুন কিছু নয়। এর আগে অশোক সেন, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়রা কংগ্রেসের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। রাম জেঠমলানীও করেছেন। আমি সরকারের মন্ত্রী বা পদাধিকারী নই। তা হলে অসুবিধা কোথায়?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.