সরকারের সাফল্য প্রচারে ছাত্র-যুব ভরসা মমতার
মালোচনার ঝড় সামলাতে দলের ছাত্র-যুব ব্রিগেডকেই হাতিয়ার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নেতারা মুখে যা-ই বলুন, বিরোধী ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের সমালোচনা যে তাঁদের কাঁটার মতো বিঁধছে এবং তাতে দলীয় নেতৃত্ব যথেষ্ট বিব্রত, সোমবার তারই ইঙ্গিত মিলল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের কর্মশালায়। যেখানে তৃণমূলের মহাসচিব তথা কর্মশালার প্রধান উদ্যোক্তা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ, “সংবাদমাধ্যম কী বলছে, সে দিকে নজর দিয়ে বসে না থেকে মমতার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারায় তোমাদের সামিল হতে হবে।”
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ছাত্র-যুবদের কাজে লাগাতে রাজ্য জুড়ে দল যে কর্মশালা করবে, এ দিন তারই আনুষ্ঠানিক সূচনা হল। এক ঘণ্টার বক্তৃতায় গত দেড় বছরে রাজ্য সরকার কী কী কাজ করেছে, তার ফিরিস্তি দিয়ে দলের বিধায়ক, সাংসদদের পাশাপাশি ‘সৈনিক’ ছাত্র-যুবদের প্রতিও মমতার নির্দেশ, “দেড় বছরে রাজ্য সরকার কী কী উন্নয়নের কাজ করেছে, তা মুখস্থ করে ফেলতে হবে। সরকারের কাজ নিয়ে দেওয়ালে পোস্টার লিখতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করতে হবে।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীরাও সরকারের কাজ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচারে নামতে বলেছেন সকলকে।

কর্মশালায় ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র
শুধু পঞ্চায়েত ভোট নয়, রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচনেও নতুন সৈনিকদের যে কাজে লাগানো হবে, তা দলের যুব-ছাত্র নেতারা ঘোষণা করেছেন। দলের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কদেব পণ্ডা যেমন জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের রেজিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচারে যুব-ছাত্রদের টিম পাঠানো হচ্ছে, তেমনই শুভেন্দু বলেন, “পঞ্চায়েতে হার্মাদ সিপিএমকে মুছে দিতে আমাদের ছাত্র-যুবদের নামতে হবে। এর পরে গরিবের বিরুদ্ধে মনমোহন সিংহের সরকার যে যুদ্ধ করছে, তার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লড়াইতেও তাদের সামিল হতে হবে।”
তবে রাজ্যের ছাত্র-যুবদের ময়দানে নামাতে গেলে চাকরি বা কর্মসংস্থান যে জরুরি, তা তৃণমূল নেতৃত্ব ভালই জানেন। অথচ রাজ্যে শিল্পায়নের হাল নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনায় তরুণদের মনে হতাশা সৃষ্টির আশঙ্কা যে তাঁরা করছেন, তা স্পষ্ট হয়েছে নেতাদের বক্তব্যে। মুকুলবাবু বলেছেন, “হতাশার কোনও জায়গা নেই। তোমাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আছে।”
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা বোঝাতে মমতা জানান, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি রাজ্যে ১৬টি রেলের কারখানা ও তিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখানে বহু কর্মপ্রার্থীদের চাকরি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “গত দেড় বছরেই আমরা আড়াই লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।” শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাকে তাঁর কটাক্ষ, “শিল্প নাকি হচ্ছে না! গল্পায়নের শেষ নেই! আরে শিল্প না হলে আকাশ থেকে তো চাকরি পড়বে না!” তাঁর কথায়, “কৃষি আমাদের গৌরব। শিল্প আনবে বিপ্লব।’’ পাশাপাশি রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, “চাকরির লোভে বাইরে চলে যাবে না। এখানে বাস ভাড়া, বাড়ি ভাড়া দিয়ে যা খরচ হয়, বাইরে গেলে খরচ তার বেশি হবে।”


পরিষদীয় সচিব
মৎস্য অমল আচার্য
আইন বিপ্লব মিত্র
পূর্ত রবীন্দ্রনাথ ঘোষ
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ অরূপ খান
অনগ্রসর কল্যাণ সন্ধ্যা টুডু
সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশুকল্যাণ শশী পাঁজা
ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প অসীমা পাত্র
কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
সেচ রাধাকান্ত মাইতি
পরিষদীয় তাপস রায়
মাদ্রাসা শিক্ষা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন অশোক দেব
পরিবহণ নাসিরুদ্দিন আহমেদ
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এটিএম আবদুল্লা

তাঁর সরকারের আমলে কাজ কেমন হয়েছে বোঝাতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে দার্জিলিং ভারতের মধ্যে প্রথম জেলা হয়েছে। শিক্ষায় আমরা ১৭তম স্থানে নেমে গিয়েছিলাম বাম আমলে। এখন তিন নম্বরে এসে গিয়েছি।” তবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর দাবি, “বামফ্রন্ট সরকারের শেষ তিন বছরে যা রেকর্ড রয়েছে, তা এই সরকার স্পর্শ করতে পারেনি।”
মমতার অভিযোগ, রাজ্যে উন্নয়নের যে ‘বাতাবরণ’ তিনি তৈরি করেছেন, তাকে খাটো করতে সিপিএম এবং তাদের দোসর কংগ্রেস ‘ছোটখাটো ত্রুটি ধরে রাজনীতি করছে’। এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিভিন্ন কলেজে যে সমস্ত ‘ছোটখাটো ঘটনা’ ঘটেছে, বিরোধীরা ও সংবাদমাধ্যমের একাংশ তা ‘বড় করে দেখাচ্ছে’ বলেও অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু তার পরেও শঙ্কুদেবকে লক্ষ করে মমতা বলেন, “শঙ্কুদেরও বলব, নিজেদের আরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
পার্থবাবুর পরামর্শ, ‘‘রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাম সরকার রাজ্যকে অন্ধকারের ধ্বংসস্তূপে রেখে গিয়েছে, তার থেকে উন্নয়নের আলোর দিশা মমতা আমাদের দেখিয়েছেন। সেই আলোর পথে আমাদের তরুণ সৈনিকদের হাঁটতে হবে।”
’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, নেতাজি ইন্ডোরে।
• বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক কি সম্ভব?
কখনওই নয়। কারণ, বিদ্যুৎ সঞ্চয় করা যায় না। সব সময় খরচ করে ফেলতে হয়। যা জমানো যায় না, তার ব্যাঙ্কও হয় না।

• তা হলে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হলে?

উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে। অথবা নতুন গ্রাহক খুঁজতে হবে।

• বিদ্যুৎ বাড়তি হয় কী ভাবে?
আগামী ক’বছরে কত গ্রাহক বাড়বে, তার আনুমানিক ভিত্তিতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা হয়। সেই বাড়তি উৎপাদন অনুপাতে গ্রাহক না-বাড়লে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হয়।

• গ্রামের বাড়ি-বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। তবু কেন বলা হচ্ছে যে, গ্রাহক তেমন বাড়েনি?
গৃহস্থ-গ্রাহক যতই বাড়ুক, বড় শিল্প সে ভাবে আসেনি। তাই ভবিষ্যৎ শিল্প-চিত্র কল্পনা করে যত উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, তার পুরোটা নেওয়ার মতো বড় গ্রাহক নেই।

• অপ্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সঞ্চয় করা যায়। তাপবিদ্যুৎ নয় কেন?

অপ্রচলিত বিদ্যুতের উৎপাদন সীমিত। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপুল উৎপাদন ব্যাটারিতে সঞ্চয়ের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

• তা হলে মুখ্যমন্ত্রী ‘বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক’ শব্দবন্ধটি কী হিসেবে ব্যবহার করলেন?

শীতকালে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গ শর্তাধীনে অন্যান্য রাজ্যকে দেয়। বিনিময়ে গ্রীষ্মে অত্যধিক চাহিদার সময়ে সেখান থেকে বিদ্যুৎ মেলে। এই পদ্ধতিকে কর্তারা কেউ কেউ বিদ্যুৎ ব্যাঙ্কিং বলে থাকেন। তবে এর সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের কোনও সম্পক নেই। বিদ্যুৎ-কর্তাদের অধিকাংশের ধারণা, ব্যাপারটা বুঝতে কোথাও একটা ভুল হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.