উত্তরবঙ্গ উৎসব সবে শেষ হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে আরও চারটি উৎসব আর মেলার। এপ্রিল পর্যন্ত দফায় দফায় রাজ্যে চলবে মাটি উৎসব, যাত্রা উৎসব, ভাষা উৎসব এবং গান মেলা। প্রতিটি উৎসবেরই মূল পরিকল্পনা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সব উৎসব মেলায় কত টাকা খরচ হবে তার পুরো হিসেব এখনও তৈরি হয়নি। তবে মাটি উৎসবের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। যা শুরু হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি, বর্ধমানের পানাগড়ে।
প্রাক্তন মখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ যাঁরা এই সব উৎসবের সমালোচনা করছেন, সম্প্রতি শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমালোচকদের উদ্দেশে বলেছেন, “উৎসব করবে না কি শ্রাদ্ধ করবে!” সমালোচনার মধ্যেও যে উৎসব মেলা থেকে সরে আসেননি কলকাতায় ফিরে এসে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গান মেলা নিয়ে এ দিন শিল্পীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। যাত্রা উৎসব এবং মাটি উৎসবের প্রস্তুতি কেমন চলছে তা নিয়ে খোঁজখবর নেন। কে কী পোশাক পরবেন, ক’টা সরকারি দফতর সেখানে স্টল দেবে, তা-ও চূড়ান্ত করেছেন তিনি। |
তবে এই উৎসবের পরিবেশের মধ্যেই আজ, মঙ্গলবার মহাকরণের একটি জরুরি বৈঠকের দিকে নজর রয়েছে মন্ত্রী আমলাদের। কোনও উৎসব বা মেলার বৈঠক সেটি নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের টাকা কেন খরচ হয়নি তা নিয়েই ওই বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বিরুদ্ধে এ-ও অভযোগ উঠছে যে, মেলা-উৎসবের জন্য তিনি যতটা সময় দেন, গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার জন্য ততটা সময় দেন না। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতেই মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠক ডেকেছেন বলে মনে করছেন আমলাদের একাংশ। ওই বৈঠকে যে সিদ্ধান্তই হোক না কেন, তাতে উৎসব-মেলার খরচে যে কোনও কাটছাঁট আপাতত হচ্ছে না, সে ব্যাপারে আমলাদের অধিকাংশই মোটামুটি নিশ্চিত। পরিকল্পনা খাতের টাকা পরিকল্পনা বহির্ভূত ক্ষেত্রে খরচ নিয়ে ইতিমধ্যেই অর্থ দফতরের আমলাদের অনেকেই সরব হয়েছেন।
দক্ষিণবঙ্গে উৎসব-পর্বের শুরু ৮ ফেব্রুয়ারি। যাত্রা উৎসব দিয়ে। বারাসতে ওই উৎসবের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পর দিন মুখ্যমন্ত্রী যাবেন পানাগড়ে, মাটি উৎসবের উদ্বোধনে। মাঝে কয়েক দিনের বিরতি। তারপরে ২১ ফেব্রুয়ারি দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা উৎসবের সূচনা করবেন মমতাই। গান মেলা ৫ এপ্রিল থেকে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় মার্চ মাসে কোনও সরকারি উৎসব এবং মেলা রাখা হয়নি।
মাটি উৎসবের খরচখরচার আনুমানিক হিসেব তৈরি হয়ে গেলেও, বাকি তিনটি উৎসবে কত খরচ হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তথ্যও সংস্কৃৃতি দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ওই সব অনুষ্ঠান করতে বলেছেন, তাতে কোনওটাই এক কোটি টাকার কমে করা যাবে না। |
শেষ দিনে উত্তরবঙ্গ উৎসবে ভিড়। সোমবার বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি। |
গান মেলার আয়োজন যে বেশ বড় আকারেই হচ্ছে, তা এ দিন মহাকরণের বৈঠকেই বুঝে গিয়েছেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আমলারা। বাম আমলে প্রায় দেড় হাজার শিল্পী গান মেলায় গান গাইতেন। প্রত্যেককে ৫০০ টাকা সাম্মানিক দেওয়া হত। অঙ্কটা অত্যন্ত কম হলেও সরকারি অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় শিল্পীরা গান মেলায় অংশ নিতে ভিড় জমাতেন। সরকার পরিবর্তনের পরে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক শিল্পীকেই তুলনামূলক ভাবে মোটা পারিশ্রমিক দিয়ে গান মেলায় সুযোগ দেওয়া হয়। খরচের বহরও গত দু’বছরে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের একটি সূত্র। ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, মাটি উৎসবকে আক্ষরিক অর্থে ‘মাটিময়’ করে তুলতে হবে। সেই কারণে, মাটি উৎসবে অংশগ্রহণকারী সব মন্ত্রীকেই মাটি রঙা পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মাটি রঙের চাদর জড়িয়ে উৎসবে অংশ নেবেন বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। মাটি উৎসবের মূল স্লোগানও তৈরি হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা কবিতা দিয়ে। এর আগে তাঁর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হবু মন্ত্রীদের ধুতি-পঞ্জাবি এবং উত্তরীয় পরার নিদান দিয়েছিলেন মমতা। রচপাল সিংহ, হায়দার আজিজ সফি, নুরে আলম চৌধুরীর মতো বেশ কয়েক জন মন্ত্রী সে দিনই প্রথম ধুতি পরতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মেলা-খেলায় যে সরকারি টাকা খরচ হচ্ছে, তা আসছে উন্নয়ন খাত থেকেই। দেড় বছরে পরিকল্পনা খাতের টাকা গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারেনি বিভিন্ন দফতর। অথচ, রাজ্য বাজেটে এই খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা ধরা ছিল। পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। উন্নয়নের টাকা কেন খরচ হচ্ছে না, তা জানতে এ বার উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার দফতরের সচিবদের রাজ্য পরিকল্পনা খাতে প্রাপ্ত টাকা ও তার খরচের বিস্তারিত হিসেব চেয়ে বৈঠক ডেকেছেন তিনি। অর্থ দফতর সূত্রের খবর, পরিকল্পনা খাতে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, অধিকাংশ দফতরই তার সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। অথচ, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচের সীমা নেই।
|
উৎসবের নির্ঘণ্ট |
|
উৎসব /মেলা |
কোথায় |
কবে |
যাত্রা উৎসব |
বারাসত/কলকাতা |
৮-১৫ ফেব্রুয়ারি |
মাটি উৎসব |
পানাগড় |
৯-১৫ ফেব্রুয়ারি |
ভাষা উৎসব |
দেশপ্রিয় পার্ক |
২১ ফেব্রুয়ারি |
গান মেলা |
কলকাতা |
৫-১৩ এপ্রিল |
|