|
|
|
|
ঘরে-বাইরে সমান সক্রিয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী |
কারাটের মত খারিজ, ২১শে বনধ নয় রাজ্যে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রকাশ কারাটের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জিতলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
২১ ফেব্রুয়ারি, ভাষা দিবসের দিনে যে এ রাজ্যে ধর্মঘট হচ্ছে না, সোমবার সেটা মোটের উপর জানিয়েই দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন এবিপি আনন্দে এক সাক্ষাৎকারে বুদ্ধবাবু বলেন, “আমরা দিল্লির সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিক সংগঠনগুলিকে বলেছি, পশ্চিমবঙ্গের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। ২১ তারিখ আমাদের রাজ্যে বনধ হবে না। আমাদের ভাষা দিবস পালন করতে দিন।” সিপিএম সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী সব শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে ২১ তারিখ পরিবহণ শিল্পকে ধর্মঘটের আওতা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাতে আদর্শ আর বাস্তব, দুই কুলই রক্ষা করা যাবে বলে সিটু নেতৃত্বের মত। |
বনধ নিয়ে ফের ভিন্ন পথে। —ফাইল চিত্র |
রাজ্যের মানুষ যখন বনধ-অবরোধের রাজনীতিতে তিতিবিরক্ত, তখন পরপর দু’দিন ধর্মঘট করার যৌক্তিকতা কোথায়, তা নিয়ে সম্প্রতি সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রকাশ্যে মুখ না-খুললেও দলের অন্দরে বুদ্ধবাবু এই ধর্মঘটের বিরোধী। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বণিকসভার অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “দুর্ভাগ্যবশত আমার দল বনধ করে। আমার কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু বলতে পারি না।” এ বার অবশ্য তিনি আর কষ্ট নিয়ে বসে থাকেননি। সক্রিয় হয়ে বনধ আটকেছেন রাজ্যে। অন্তত এক দিন।
দু’দিনের ধর্মঘটের বিরোধিতায় আলিমুদ্দিনের অস্ত্র ছিল ভাষা দিবস। বাঙালির আবেগের উল্লেখ করে ওই দিন এ রাজ্যে ধর্মঘট না-করার আর্জি দিল্লির এ কে জি ভবনে পাঠিয়েছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। কিন্তু সেই আর্জি পত্রপাঠ খারিজ করে প্রকাশ কারাটরা জানিয়ে দেন, ধর্মঘট দু’দিনই করতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির খসড়া বক্তব্য রাজ্যে রাজ্যে পাঠিয়ে দু’দিনের ধর্মঘটের পক্ষে জোরদার প্রচার করার নির্দেশও দেন তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুদ্ধবাবুর অবস্থানেরই জয় হতে চলেছে বলে বাম নেতাদের অনেকের মত।
সোমবার ধর্মতলায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ সংগঠনের প্রকাশ্য সমাবেশে যোগ দিতে আসা সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “ভাষা দিবসের দিন এখানে কী হবে, তা শ্রমিক সংগঠনগুলিকেই ঠিক করতে হবে। সর্বভারতীয় ১১টি শ্রমিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ভাবে এই ধর্মঘট ডেকেছে। কিন্তু রাজ্যভিত্তিক কোনও বিষয় দেখা দিলে, তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির রাজ্য নেতৃত্বকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
গত সপ্তাহে বামফ্রন্টের বৈঠকে শরিক নেতারা বলেছিলেন, ভাষা দিবসের দিন ধর্মঘট হলে সাধারণ মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির পক্ষ থেকেও ওই দিন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আবেদন জানানো হয়েছিল। ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করার আশ্বাস দিলেও ধর্মঘট তোলা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন শ্রমিক নেতারা। এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২১ ফেব্রুয়ারি যাতে যানবাহন চলাচল করতে পারে, তা দেখার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে আবেদন করা হবে। বিমানবাবু নিজেই সে আবেদন করেছিলেন। এর আগে গত ৩১ জুলাই বিমানবাবুর আবেদনেই সাড়া দিয়ে পরিবহণ ধর্মঘট থেকে সরে এসেছিল সিটু। এ বারও সেই পথে হাঁটতে চলেছে তারা।
|
ধর্মতলায় এক সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র ও সীতারাম ইয়েচুরি। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র |
বনধ-অবরোধের বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের মনোভাব বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বনধ-অবরোধের রাজনীতির বিরুদ্ধে বার বার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে পরপর দু’দিন ধর্মঘট হলে এমনিতেই বিরূপ জনমানস আরও বিরোধী হয়ে উঠতে পারে বলে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের আশঙ্কা। পাশাপাশি, তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন কাজে মানুষের একাংশের মধ্যে যখন ধীরে ধীরে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে, তখন দু’দিন বনধ করে সিপিএম-কে আবার এক পা পিছিয়ে দেওয়া কি উচিত হবে কিনা, এই প্রশ্নও উঠেছে দলের মধ্যেই।
তা ছাড়া, বর্তমান সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে দু’দিন ধর্মঘট করা সম্ভব কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বাম শিবিরে। রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বাম নেতার কথায়, “আমাদের যা সাংগঠনিক পরিস্থিতি, তাতে দু’দিনের বনধ সফল করা শক্ত। তার উপরে সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে, আমরা তার মোকাবিলা করতে পারব না। সে ক্ষেত্রে দু’পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে আসা ভাল।” তিনি আরও বলেন, “গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পুরো সফল হয়নি। বরং ধর্মঘটী বেশ কিছু সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে সব কিছুই মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
২০-২১ তারিখের ধর্মঘট যে কোনও মূল্যে রুখবেন বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন মমতা। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি ওই ধর্মঘটের বিরোধী। আইএনটিটিইউসি নেতা তথা রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণে বলেন, “ওরা মুখে বলছে শিল্প ধর্মঘট। কিন্তু বনধ করতে চায়। পাট, চা, কয়লা শিল্প থেকে আরম্ভ করে বন্দর, সব কিছু যাতে সচল থাকে, তার জন্য রাজ্য সরকার সব রকম ব্যবস্থা নেবে।”
এ দিন ধর্মতলার সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে আরম্ভ করে ইয়েচুরি, রবীন দেব, সিটুর রাজ্য সম্পাদক দীপক দাশগুপ্ত সকলেই অবশ্য মমতাকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, আগাম নোটিস দিয়ে ধর্মঘট ডাকা গণতান্ত্রিক অধিকার। সে ভাবেই এ বার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তা ভাঙার কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরেই আক্রমণ করছেন।
|
|
বললেন বুদ্ধদেব
ক্ষমতা হারানোর পরে এই প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের।
সেই পুরনো আক্রমণাত্মক মেজাজে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাবে আজ বিকেল
পাঁচটায়, এবিপি আনন্দে। আনন্দবাজারে আগেভাগেই সাক্ষাৎকারের এক ঝলক। |
|
মমতা তো হারিয়ে আপনার উপকারই করেছেন। অমিতাভ নন্দী, লক্ষ্মণ শেঠকে রাজ্য কমিটি থেকে সরাতে পেরেছেন। সুশান্ত ঘোষকে কমিটিতে ঢুকতে দেননি। অনিল বসুকে দল থেকেই তাড়িয়েছেন।
হেরে যাওয়াটা সৌভাগ্য বলে মনে করি না। তবে এটা ঠিক যে, দলে যাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন, তাঁদের কিছু বিচ্যুতি দেখা গিয়েছিল। সেই শুদ্ধকরণের কাজ আগেই শুরু করেছিলাম।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি প্রতিহিংসা পরায়ণ হলে আপনারা জেলে থাকতেন।
দুর্নীতি নিয়ে ওঁদের কথা না-বলাই ভাল। আগে কী সম্পত্তি ছিল আর ক্ষমতায় আসার পরে কী হয়েছে, সেটা মানুষ দেখছেন। আর আমাদের আমলের সব ফাইল তো মহাকরণে রয়েছে। একটা ফাইলও কোথাও নিয়ে যাইনি। সে সব দেখে পারলে জেলে পুরুন না!
পাহাড় ও জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি।
পাহাড়ে মারাত্মক ভুল হয়েছে। চুক্তিতে গোর্খাল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হল। আমরা হলে এটা কখনওই করতাম না। তবে মুখ্যমন্ত্রী যদি চান, তা হলে নিশ্চয়ই সহায়তা করব। আর জঙ্গলমহলে তৃণমূল মাওবাদীদের সঙ্গে ছিল। ওরা সরে আসায় মাওবাদীদের শক্তি কমেছে। |
|
|
|
|
|
|
|