শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে অলচিকি চালুর নির্দেশ
ঙ্গলমহলের সাঁওতাল পড়ুয়াদের মাতৃভাষায় পড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদাসীনতার অভিযোগ ফের উঠল।
শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি হাইস্কুলে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপিতে পড়ানোর নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তা পেয়ে ফাঁপড়ে পড়েছে স্কুলগুলি।
স্কুলগুলির বক্তব্য, অলচিকিতে পড়ানোর জন্য শিক্ষক থেকে বইয়ের সংস্থান, কিছুই নেই। তড়িঘড়ি সে সব পাওয়াও অসম্ভব। ফলে, তাদের সাঁওতালি ভাষায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আদিবাসী সামাজিক যুব সংগঠন ‘জুয়ান গাঁওতা’র সম্পাদক প্রবীর মুর্মু বলেন, “সাঁওতালদের মাতৃভাষায় ও নিজস্ব অলচিকি লিপিতে শিক্ষাদানের নামে প্রহসন চলছে। এর বিরুদ্ধে জঙ্গলমহল জুড়ে আন্দোলনে নামব আমরা।”
গত শিক্ষাবর্ষে পশ্চিম মেদিনীপুরে মাধ্যমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু করা যায়নি। চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ সাঁওতাল পড়ুয়াদের সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক স্কুলেই এক বছরের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল। অথচ অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যক্রম পড়ানোর পরিকাঠামো নেই। ফলে, সমস্যায় পড়ে শিক্ষক-পড়ুয়া দু’পক্ষই। ওই সব পড়ুয়ারা এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে। আর চতুর্থ শ্রেণি থেকে পাশ করে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে আরও এক দল সাঁওতাল পড়ুয়া। এখনও পর্যন্ত তাদের ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
ইতিমধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি স্কুলশিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিব এস সি ঘোষের স্বাক্ষরিত এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, জেলার ১০টি হাইস্কুলে অবিলম্বে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন চালু করতে হবে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় অবশ্য দাবি করেন, “এই শিক্ষাবর্ষেই ওই দশ স্কুলে অলচিকিতে পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণিতে পঠনপাঠন শুরু হয়ে যাবে।” এর জন্য নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, বেলিয়াবেড়া, কেশিয়াড়ি, শালবনি, বেলপাহাড়ি ও গড়বেতা-৩ ব্লকের ওই ১০টি স্কুলে ‘অতিথি শিক্ষক’ (গেস্ট টিচার) নিয়োগ করতে হবে। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে স্কুল কর্তৃপক্ষ এই নিয়োগ করবেন। কিন্তু এ সব মিটতেও বেশ কিছুটা সময় লাগবে। সরকারি নির্দেশিকায় যে ১০টি স্কুলের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নয়াগ্রাম ব্লকের কলমাপুকুরিয়া ভোলানাথ এসসি হাইস্কুল। প্রধান শিক্ষক বীরসিংহ হেমব্রম বললেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে কী ভাবে অলচিকিতে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করা যাবে সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।”
২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলভুক্ত হয়েছিল। আদিবাসী সংগঠনগুলির লাগাতার আন্দোলনের ফলে ২০০৭-০৮ সালে আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলির বাছাই করা কিছু প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত ৫৩টি প্রাথমিক স্কুলে এই ভাষায় পঠনপাঠন চালুর কথা বলা হয়েছিল। পরে অবশ্য পরিকাঠামোর অভাবে মাত্র ২৮টি স্কুলে তা শুরু হয়। এর ফলে অধিকাংশ এলাকাতেই ইচ্ছে থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা সাঁওতালিতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ঝাড়গ্রামের জমিদারডাঙা গ্রামের দুলাল সরেন বলেন, “আমার ছেলে বাপি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলেই পড়ে। এ বার ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে। কিন্তু কাছে-পিঠে কোনও স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অলচিকি হরফে পড়ানোর ব্যবস্থা নেই। এ রকম চললে অলচিকি পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুট বাড়বে।” গোড়া থেকেই প্রাথমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন নিয়ে সরকারি গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক স্কুলগুলিতে অলচিকি জানা যে সব পার্শ্বশিক্ষক ইতিপূর্বে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই অলচিকি লিপি জানেন না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ‘অতিথি শিক্ষক’ দিয়ে মাধ্যমিক স্তরে পঠনপাঠন চালুর সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধী জুয়ান গাঁওতা। প্রতিটি ব্লকে একটি করে আবাসিক সাঁওতালি স্কুল স্থাপনের দাবিও তুলেছে একাধিক আদিবাসী সংগঠন। প্রবীরবাবু বলেন, “আদিবাসী পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা মেনে নেব না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.